অবশেষে স্বপ্নপূরণ হতে চলেছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি)। ডিএমপি, র্যাব ও কাউন্টার টেরোরিজম হেডকোয়ার্টারের পর এবার সিএমপিতেও যুক্ত হতে যাচ্ছে ডগ স্কোয়াড। মনসুরাবাদে তাদের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য স্থাপনা নির্মাণ শেষ হলেই ডগ স্কোয়াড মাঠে নামবে। তৎকালীন সিএমপি কমিশনার সালেহ্ মোহাম্মদ তানভীর ২০টি কুকুর চাইলেও আপাতত ১০টি কুকুরের ডগ স্কোয়াড পাচ্ছে সিএমপি।
প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের মার্চে পুলিশ সদর দপ্তরে এক বৈঠকে দেশের চারটি মেট্রোপলিটন পুলিশে ডগ স্কোয়াড যোগ করার প্রস্তাব তুলেছিলেন তৎকালীন সিএমপি কমিশনার আবদুল জলিল মন্ডল। তিনি জানিয়েছিলেন, উন্নত বিশ্বের আদলে অপরাধ দমনে চট্টগ্রামসহ দেশের চার মেট্রোপলিটন পুলিশে কে–৯ ডগ স্কোয়াড গঠন করা প্রয়োজন। পরে সেটি সিদ্ধান্ত আকারে গৃহীত হয়েছিল। এ সিদ্ধান্তের প্রায় ছয় বছর পর ২০২১ সালের ১৯ ডিসেম্বর অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (প্রশাসন ও অর্থ) সানা শামীমুর রহমান স্বাক্ষরিত পুলিশ সদর দপ্তরে পাঠানো এক চিঠিতে আটটি কারণে ডগ স্কোয়াড গঠনের প্রয়োজনীয়তার কথা বলা হয়। কারণগুলো হলো, চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, হযরত শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, মাদকবিরোধী অভিযান জোরদার করা, ভিভিআইপির নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, বিস্ফোরক শনাক্ত করতে অভিযান পরিচালনা করা, তারকাবিশিষ্ট হোটেলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, স্টেডিয়াম, আন্তর্জাতিক ইভেন্ট ও গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
চিঠিতে একজন উপকমিশনারের নেতৃত্বে ৫২ জনের একটি দল ও প্রাথমিকভাবে ২০টি কুকুর নিয়ে একটি নতুন ইউনিট গঠনের কথা বলা হয়েছিল। পরে ধাপে ধাপে কুকুরের সংখ্যা ৩৫টিতে উন্নীত করার পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করা হয়। এর মধ্যে ২০২১–২২ অর্থবছরে ১৫টি, ২০২২–২৩ অর্থবছরে ১০টি, ২০২৩–২৪ অর্থবছরে ১০টি যুক্ত করা হবে। প্রাথমিকভাবে স্কোয়াড শুরুর জন্য মাদকদ্রব্য শনাক্ত করতে ছয়টি ল্যাব্রাডর, চারটি জার্মান শেফার্ড, কারেন্সি শনাক্ত করতে দুটি ল্যাব্রাডর, বিস্ফোরক শনাক্ত করতে চারটি ল্যাব্রাডর, চারটি জার্মান শেফার্ডসহ ২০টি কুকুরের কথা বলা হয়েছিল। বলা হয়েছিল একজন উপকমিশনারের নেতৃত্বে ডগ স্কোয়াডটি পরিচালিত হবে। দলে থাকবেন একজন ভেটেরিনারি অফিসার, একজন ইন্সপেক্টর, দুজন উপ–পরিদর্শক, চারজন সহকারী উপ–পরিদর্শক, ৪০ জন কনস্টেবল (ডগ হ্যান্ডলার) ও তিনজন পরিচ্ছন্নতাকর্মী। দীর্ঘ সময় পেরুলেও অজানা কারণে সে পরিকল্পনা বাস্তবায়নের উদ্যোগ আলোর মুখ দেখেনি।
মাদকদ্রব্য ও অস্ত্র শনাক্তের জন্য পুলিশের কাছে এক ধরনের স্ক্যানার ভেহিক্যাল থাকলেও তা বিভিন্ন স্থানে নিতে ঝামেলা পোহাতে হয়। এমনকি এই স্ক্যানার দিয়ে আজ পর্যন্ত কোনো মাদক ও অস্ত্র উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে গাড়ি তল্লাশি চালানো হলেও অনেক সময় অত্যাধুনিক পন্থায় অস্ত্র বহনের কারণে তা উদ্ধার করা সম্ভব হচ্ছে না। এক্ষেত্রে ডগ স্কোয়াডের মাধ্যমে বিশেষ অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে বলে মনে করছেন পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
সিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের উপ–কমিশনার লিয়াকত আলী খান বলেন, ডগ স্কোয়াড থাকবে সিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের অধীনে। ডগ স্কোয়াড দেখভাল করার জন্য একজন সহকারী কমিশনার পদমর্যাদার কর্মকর্তাসহ বেশ কয়েকজনের প্রশিক্ষণও সম্পন্ন হয়েছে। প্রশিক্ষণ নিতে বিদেশ গিয়ে দুই কনস্টেবলের পালিয়ে যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছিল। তিনি বলেন, ডগ স্কোয়াড পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য আমাদের জনবলের প্রশিক্ষণ সম্পন্ন হয়েছে। এখন কুকুর রাখার স্থাপনা নির্মাণ সম্পন্ন হলে স্কোয়াডের কাজ শুরু হবে। সিএমপির স্টেট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট বিভাগ ডগ স্কোয়াডের স্থাপনা নির্মাণ করছে। ডগ স্কোয়াডের দুই তলাবিশিষ্ট ভবন নির্মাণকাজ এখনো শেষ হয়নি। সময়মতো অর্থছাড় না পাওয়ায় একটু সমস্যা হয়েছে। আগামী তিন মাসের মধ্যে সিএমপির স্টেট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট বিভাগ ভবন নির্মাণ শেষ করে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটকে হস্তান্তর করবে।
এদিকে পুলিশ বাহিনীতে ডগ স্কোয়াড যুক্ত হওয়ার ২৩ বছর পর চট্টগ্রামে ডগ স্কোয়াড যুক্ত হচ্ছে।
নগর পুলিশের উপ–কমিশনার পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা নাম না প্রকাশ না করার শর্তে আজাদীকে জানান, ডগ স্কোয়াডের জন্য ২০ জন কর্মকর্তা বর্তমানে ঢাকায় অলস সময় কাটাচ্ছেন। পুলিশের আট সদস্যের একটি দল নেদারল্যান্ডসে প্রশিক্ষণ নেয়। সেখান থেকে দুই কনস্টেবল রাসেল চন্দ্র দে ও শাহ আলম আত্মগোপনে গেলে বাকি ছয়জনকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়। কিন্তু যথাসময়ে ভবন নির্মাণকাজ শেষ না হওয়ায় স্কোয়াডের কুকুরগুলোসহ কর্মকর্তাদের দিয়ে কাজ শুরু করতে পারছে না সিএমপি।