‘সিআরবিতে হাসপাতাল করতে হলে আমাদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে করতে হবে। আমি কিংবা চট্টগ্রামবাসীই শুধু নয়, আমার বিশ্বাস জননেত্রী শেখ হাসিনাও সিআরবিতে হাসপাতাল, হোটেল হোক, তা চান না। কাজেই এই আন্দোলনে নাগরিক সমাজ, চট্টগ্রামের সাথে আমি শুরু থেকেই একাত্মতা প্রকাশ করে আসছি। সিআরবির রক্ষায় এক বিন্দুও ছাড় দেবো না।’- আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন গতকাল রোববার বিকেলে সিআরবিতে বেসরকারি হাসপাতাল প্রকল্প বাতিল এবং বঙ্গমাতার নামে জাতীয় উদ্যান ঘোষণার দাবিতে নাগরিক সমাজ-চট্টগ্রাম আয়োজিত মহা সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন।
তিনি বলেন, যেকোনো মূল্যে চট্টগ্রামের ফুসফুস, ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন এবং মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন তথা বীর শহীদদের সমাধি চট্টগ্রামবাসী রক্ষা করবে। তিনি বলেন, সংসদের আগামী অধিবেশনে সিআরবি রক্ষার দাবি উত্থাপন করবো। তার আগে জানাবো মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে, তুলে ধরবো যাবতীয় অসঙ্গতি।
সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে বলেন, আমার বিশ্বাস মাননীয় প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রামবাসীর এই দাবি মেনে নিয়ে সিআরবিতে বেসরকারি হাসপাতাল করতে দেবেন না। তিনি নিজেও পরিবেশ এবং প্রাণ প্রকৃতি সুরক্ষায় আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। তিনি হাসপাতাল প্রকল্প অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, চট্টগ্রামে
হাসপাতাল করার মতো জায়গার অভাব নেই। সাবেক হাজী ক্যাম্পসহ অন্য যেকোনো স্থানে হাসপাতাল করলে চট্টগ্রামবাসীর আপত্তি থাকবে না। চট্টগ্রামের মানুষ প্রয়োজনে রক্ত দিয়ে সিআরবি রক্ষা করবে। ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন আরও বলেন, সিআরবিতে
হাসপাতাল নয়, এখানে হতে পারে পাখির অভয়ারণ্য আর জাদুঘর। এর মধ্য দিয়ে রক্ষা পাবে প্রকৃতি, ঐতিহ্য আর ইতিহাস। তিনি বলেন, রেলওয়ের এই সম্পত্তি গেজেটেড হেরিটেজ জোন। এটিতে কোনো স্থাপনা হলে ঘটবে আইনের লঙ্ঘন। কারও কারও ব্যক্তিগত ও ব্যবসায়িক লাভের জন্য সরকার আইন না মেনে জনগণের বিপক্ষে যাবে না বলে আমার বিশ্বাস। তিনি আরও বলেন, অগ্নিঝরা মার্চ মাসে আজ দুই জায়গায় দুটি সমাবেশ হচ্ছে। পলোগ্রাউন্ড মাঠে সমাবেশ করছে বিএনপি। তারা কালুরঘাট বেতার কেন্দ্রে যেতে চেয়েছিল। কারণ হলো জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন বলে তাদের দাবি। কিন্তু প্রকৃত সত্য হলো ২৬ মার্চ চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্র থেকে প্রথম স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন এম এ হান্নান। সেদিন আমিসহ আরও কয়েকজন উপস্থিত ছিলাম। জিয়াউর রহমান আর মীর শওকত আলী তখন বোয়ালখালীর করলডাঙা পাহাড়ে পালিয়ে গিয়েছিল। পরে জিয়াউর রহমান ২৮ মার্চ এসে ঘোষণাপত্র পাঠ করেছিলেন বঙ্গবন্ধুর পক্ষে।
চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ সালাম বলেন, চট্টগ্রামের প্রাকৃতিক পরিবেশ নষ্ট হলে বাংলাদেশের হৃদপিণ্ড চট্টগ্রাম মৃত নগরীতে পরিণত হবে। চট্টগ্রাম মৃত নগরীতে পরিণত হলে বাংলাদেশের অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়বে। তাই যেকোনো মূল্যে চট্টগ্রামের প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষা করতে হবে। তিনি বলেন, সিআরবির এই স্থানে বেনিয়া গোষ্ঠী প্রথম একটি হোটেল নির্মাণের পাঁয়তারা করেছিল। আন্দোলনের মুখে তা ব্যর্থ হয়। এখন তারা হাসপাতাল নির্মাণের পাঁয়তারা করছে। তাদের এ অপচেষ্টাও সফল হবে না। যুগে যুগে যে তারুণ্য সকল অপশক্তিকে নির্মূল করেছে এবারও সেই তরুণ সমাজ সিআরবিতে হাসপাতাল নির্মাণের চেষ্টা প্রতিহত করবে।
সিআরবিতে যেকোনো ধরনের স্থাপনা নির্মাণের চেষ্টা লাঠি হাতে প্রতিরোধের ঘোষণা দিয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক প্রশাসক এবং চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন। তিনি বলেন, এটা চট্টগ্রামের ভূ-প্রকৃতি বাঁচানোর আন্দোলন। চট্টগ্রামের জনগণ এ আন্দোলনের সাথে আছে। সুতরাং এ আন্দোলনকে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
সুজন বলেন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের প্রথম শহীদ আব্দুর রবের কবরকে যারা বুলডোজার দিয়ে নিশ্চিহ্ন করতে চায় তারা স্বাধীনতা বিরোধী রাজাকারের প্রেতাত্মা। এরা বর্তমান মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের সরকারের সাথে জনগণের দূরত্ব সৃষ্টি করতে চায়। এদের কোনোভাবেই ছাড় দেওয়া যাবে না বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন তিনি।
সিডিএর সাবেক চেয়ারম্যান ও মহানগর আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ এম এ ছালাম বলেন, সিআরবিকে যে হেরিটেজ জোন ঘোষণা করা হয়েছে, তার জ্বলন্ত সাক্ষী আমি। এখানে সত্যকে উল্টানোর কোনো সুযোগ নেই। কারণ আমি সিডিএর চেয়ারম্যান থাকাকালেই সিআরবিকে হেরিটেজ জোন হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছিল। আমরা চাই সাধারণ মানুষের চিকিৎসা সেবা সম্প্রসারণের জন্য হাসপাতাল হোক এবং এই হাসপাতাল করার জন্য অব্যবহৃত অনেক জায়গা আছে। কিন্তু কোনোভাবেই প্রাকৃতিক ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃত ও নিবন্ধিত সিআরবিতে নয়।
মহানগর মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী হাসিনা মহিউদ্দিন বলেন, সিআরবিতে কোনো ধরনের নির্মাণ কাজ করতে গেলে চট্টগ্রামবাসী লাঠি হাতে তাদের প্রতিহত করবে। তিনি চট্টগ্রামবাসীকে লাঠি নিয়ে প্রস্তুত থাকারও আহ্বান জানান। তিনি বলেন, সিআরবি নিয়ে যদি কেউ কোনো হঠকারী সিদ্ধান্ত নেয় তাহলে চট্টগ্রামবাসী শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে তা প্রতিহত করবে। তিনি বলেন, মীর জাফরেরা চট্টগ্রামের ফুসফুস সিআরবিকে ধ্বংসের চক্রান্ত করছে। তাদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, বীর চট্টলার নেতা এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী যে লাঠি হাতে নিয়েছিলেন, তার মধ্যে অনেকগুলো লাঠি আমার কাছে রেখে গেছেন। সেই লাঠিগুলো মা বোনদের হাতে তুলে দেব।
সংগঠনের কো- চেয়ারম্যান ও চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমানের সভাপতিত্বে ও বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুলের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সাবেক সংসদ সদস্য মজাহারুল হক শাহ চৌধুরী, পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদের সভাপতি ডা. এ কিউ এম সিরাজুল ইসলাম, পরিবেশ বিজ্ঞানী প্রফেসর ড. ইদ্রিস আলী, জাসদের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক জসিম উদ্দিন বাবুল, চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এ এইচ এম জিয়া উদ্দিন, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সীমান্ত তালুকদার, চবি ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শাহজাহান চৌধুরী, আবৃত্তি শিল্পী রাশেদ হাসান, যুবলীগ নেতা হেলাল আকবর চৌধুরী বাবর, মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি ইমরান হোসেন ইমু, সাবেক সাধারণ সম্পাদক নূরুল আজিম রনি, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীর প্রমুখ।
আরও উপস্থিত ছিলেন উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ আতাউর রহমান, আইটি বিশেষজ্ঞ মাহবুবুর রহমান রুহেল, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের যুগ্ম মহাসচিব মহসীন কাজী, নাগরিক সমাজের যুগ্ম সদস্য সচিব স্বপন মজুমদার, আওয়ামী লীগ নেতা মাহমুদুল হক, জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী, দেবাশীষ পালিত, জসিম উদ্দিন শাহ, আব্দুল আহাদ, শ্রমিক লীগ নেতা বখতিয়ার খান, যুবনেতা সালেহীন, যুবলীগ নেতা রাশেদ খান মেনন, সাংবাদিক ঋত্বিক নয়ন, আবৃত্তি শিল্পী প্রণব চৌধুরী, নারী নেত্রী হাসিনা আক্তার টুনু, কবি মিনু মিত্র, প্রফেসর হোসাইন কবির, দিলরুবা খানম, যুবনেতা শিবু প্রসাদ চৌধুরী, বখতিয়ার সাইদ ইরান, আবু তৈয়ব, শ্রমিক নেতা তোফাজ্জল হোসেন জিকু, শ্রমিক নেতা সুনীল দে, যুবনেতা মো. মোরশেদ, ছাত্রলীগ নেতা মাহমুদুল করিম, মাইনউদ্দিন মামুন প্রমুখ।