নগরীর সিআরবি শিরীষতলায় নববর্ষ উদযাপন পরিষদ, চট্টগ্রামের উদ্যোগে পঞ্চদশতম বর্ষবিদায় ও বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী বক্তব্যে পরিষদের সভাপতি দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম. এ মালেক বলেছেন, বর্ষবিদায়ের দিন অর্থাৎ চৈত্র সংক্রান্তি ও বর্ষবরণের উৎসব আজ বাঙালির সার্বজনীন উৎসবে পরিণত হয়েছে। বাঙালি সংস্কৃতি হচ্ছে ধর্ম–বর্ণ নির্বিশেষে মানুষে মানুষে সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্ববোধের। বিদায়ী বছরের যত দুঃখ, গ্লানি, হতাশা সব আমরা বঙ্গোপসাগরে ভাসিয়ে দিতে চাই। নতুন বছর যেন আমাদের জীবনে অনাবিল সুখ, শান্তি নিয়ে আসে সেই প্রত্যাশা আমরা করছি। গতকাল ১৩ এপ্রিল বিকাল সাড়ে ৩ টায় সিআরবি শিরীষতলা মঞ্চে বেলুন উড়িয়ে ১৪২৯ বঙ্গাব্দের বিদায় অনুষ্ঠানের উদ্বোধনকালে এসব কথা বলেন একুশে পদকপ্রাপ্ত গুণী এই গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব।
নববর্ষ উদযাপন পরিষদের যুগ্ম সম্পাদক আবৃত্তিশিল্পী ও সাংবাদিক ফারুক তাহেরের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শামীম আহমেদ। এরপর শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সংস্কৃতিজন মফিজুর রহমান ও নববর্ষ উদযাপন পরিষদের সহ–সভাপতি মো. সাহাবউদ্দিন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও পরিষদের সহ–সভাপতি ডা. চন্দন দাশ, কবি ও সাংবাদিক কামরুল হাসান বাদল, নাট্যজন শেখ শওকত ইকবাল, কবি ও নাট্যজন স্বপন মাজুমদার, রাজনীতিক ও সংস্কৃতিজন হাসান মারুফ রুমি, সাহাবউদ্দিনের বলীখেলা উদযাপন পরিষদের সদস্য সচিব সজল চৌধুরী, আবৃত্তিশিল্পী অঞ্চল চৌধুরী, সঙ্গীতশিল্পী শীলা দাশগুপ্তা, মোরশেদুল আলম, মো. মুজাহিদুল ইসলাম, হাসান জাহাঙ্গীর প্রমুখ।
এদিকে হাজার বছরের বাঙালি সংস্কৃতির ঐতিহ্য হিসেবে আজ ১৪ এপ্রিল পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠান শুরু হবে সকাল সাড়ে ৭টায়। প্রথম পর্বের অনুষ্ঠান চলবে দুপুর ১২টা পর্যন্ত। দ্বিতীয় পর্বের অনুষ্ঠান শুরু হবে বেলা ২টা থেকে। এতে চট্টগ্রামের উল্লেখযোগ্য সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং আবৃত্তি ও নৃত্যদলগুলো তাদের দলীয় পরিবেশনা উপস্থাপন করবে। দুপুর ১২টায় থাকছে নববর্ষ উদ্যাপন পরিষদের প্রথম আহ্বায়ক, বরেণ্য গবেষক ও ধ্বনিবিজ্ঞানী ড. মনিরুজ্জামানের রাষ্ট্রীয় সম্মাননা একুশে পদক প্রাপ্তিতে পরিষদের পক্ষ থেকে সংবর্ধনা প্রদান অনুষ্ঠান।
উল্লেখ্য, রমজানের পবিত্রতা রক্ষার্থে এবারও ঐতিহ্যবাহী সাহাবউদ্দীনের বলীখেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে না। সীমিত পরিসরের সাংস্কৃতিক আয়োজনে শুরুতেই থাকবে ভায়োলিনিস্ট চিটাগাংয়ের পরিবেশনা। এরপর একে একে মঞ্চে নিজস্ব পরিবেশনা নিয়ে থাকবে সংগীত ভবন, সুরাঙ্গন বিদ্যাপীঠ, বোধন আবৃত্তি পরিষদ, উচ্চারক আবৃত্তি কুঞ্জ, সুন্দরম, প্রমা আবৃত্তি সংগঠন, সুর সাধনা, উদীচী চট্টগ্রাম, রবীন দে সংগীত একাডেমি, নটরাজ, বাংলাদেশ রেলওয়ে সাংস্কৃতিক ফোরাম, শব্দনোঙর আবৃত্তি পাঠশালা, স্বরলিপি, ওডিসি অ্যান্ড টেগোর ডান্স মুভমেন্ট সেন্টার, সৃজামী, অদিতি সংগীত নিকেতন, তারুণ্যের উচ্ছ্বাস, চারুতা নৃত্যকলা একাডেমি, রাগেশ্রী, নির্মাণ আবৃত্তি সংগঠন, বঙ্গবন্ধু শিশু–কিশোর মেলা, ছন্দানন্দ, শিল্পাংকন, বোধন আবৃত্তি পরিষদ, নৃত্যনীড়, একুশে মানবিকতা ও আবৃত্তি চর্চা কেন্দ্র। সবশেষে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটবে।
অথচ চৈত্রের শেষদিনে বাংলা বর্ষবিদায় উপলক্ষে শোভাযাত্রা, গান, নাচ, আবৃত্তিসহ নানা আয়োজনে মুখর থাকত চট্টগ্রাম। প্রথম দুই বছর সেই আয়োজনে বাধ সেধেছিল করোনার সংক্রমণ। আর গতকছর থেকে রমজানের কারণে প্রশাসনের পক্ষ থেকে আয়োজন সংক্ষিপ্ত করার তাগাদা ছিল। এছাড়া নিরাপত্তাজনিত কারণে নানা বিধিনিষেধ আরোপ করায় বর্ষবিদায়ের আয়োজনই বাদ দিয়েছেন আয়োজকরা।
নববর্ষ উদযাপন পরিষদ, চট্টগ্রামের সহ সভাপতি ডা. চন্দন দাশ আজাদীকে বলেন, গানবাজনা এবার আমরা নিজেরাই বাদ দিয়েছি। রমজান মাস চলছে, গানবাজনা করতে গেলে ইফতারের সময় হয়ে যাবে। মানুষ কোভিড পরিস্থিতি সামলে উঠছে। সেগুলো মাথায় রেখে শুধুমাত্র ট্র্যাডিশনটা বজায় রাখতে আমরা সংক্ষিপ্তভাবে বর্ষ বিদায়ের আয়োজন করেছি।
বর্ষ বিদায়ের দিনে প্রতিবছর সম্মিলিত পহেলা বৈশাখ উদযাপন পরিষদের উদ্যোগে নগরীর ডিসি হিল থেকে এবং বাদশা মিয়া সড়কের চারুকলা ইনস্টিটিউট থেকে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করা হত। এবার কোনো আয়োজন হয়নি।