সারের দাম কেজিতে বেড়েছে ছয় টাকা

ভর্তুকি কমানোর প্রক্রিয়া

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ২ আগস্ট, ২০২২ at ৬:৩২ পূর্বাহ্ণ

সরকার ভর্তুকি কমানোর প্রক্রিয়ার শুরুতে ইউরিয়া সারের দাম কেজি প্রতি ছয় টাকা বাড়িয়েছে। কৃষি খাতের প্রায় আটাশ হাজার কোটি টাকার ভর্তুকি কমিয়ে আনার জন্য গতকাল থেকে সারাদেশে ইউরিয়া সারের দাম ছয় টাকা বাড়ানো হয়। বর্তমানে ডিলার পর্যায়ে আগের ১৪ টাকার স্থলে সার বিক্রি হবে ২০ টাকা এবং কৃষক পর্যায়ে আগের ১৬ টাকার স্থলে সার বিক্রি হবে ২২ টাকা। ডিলারের কমিশন অক্ষুণ্ন রেখে বর্ধিত মূল্যের পুরোটাই কৃষকের ওপর তুলে দেয়া হয়েছে। ক্রমান্বয়ে অন্যান্য সারের দামও বাড়ানো হতে পারে। কৃষি খাতের ভর্তুকির পরিমাণ অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাওয়ায় সরকার এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে। তবে বিষয়টি দেশের কৃষি উৎপাদনে কোন নেতিবাচক প্রভাব ফেলে কিনা সেদিকে সতর্ক থাকার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে।

সূত্র জানিয়েছে, দেশে সারের ভর্তুকিতে বর্তমানে বছরে ২৮ হাজার কোটিরও বেশি টাকা ব্যয় হচ্ছে। যা গত বছরের তুলনায় চার গুণ। করোনাকালে বিশ্ববাজারে সারের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যায়। বিশ্ববাজারে সারের মূল্যের পাশাপাশি জ্বালানি এবং জাহাজভাড়া বেড়ে যাওয়ায় হু হু করে বাড়ে সারের দাম। বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি কেজি ইউরিয়া সারের দাম ৯৮ টাকা। অথচ প্রতি কেজি ইউরিয়া সার ১৬ টাকায়, টিএসপি ২২ টাকায়, এমওপি ১৫ টাকায়, ডিএপি ১৬ টাকায় কৃষককে প্রদান করা হয়। বিশ্ববাজার থেকে চড়া দামে কিনে সরকার সাশ্রয়ী মূল্যে কৃষকের হাতে সার পৌঁছে দেয়। গত পুরো বছর জুড়ে সারের আন্তর্জাতিক বাজার অত্যন্ত চড়া থাকায় প্রতি কেজি ইউরিয়া সারে এর ফলে বর্তমানে ভর্তুকি দাঁড়িয়েছে প্রতি কেজি ইউরিয়া ৮২ টাকা, টিএসপি ৫০ টাকা, এমওপি ৪১ টাকা এবং ডিএপিতে ৭৯ টাকা। এ বিশাল অংকের ভর্তুকি প্রদানে চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে লাগবে ২৮ হাজার কোটি টাকা। এ বছর ভর্তুকি খাতে বাজেট মাত্র ৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। বাকি টাকার সংস্থান করতে সরকারকে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

এ অবস্থায় গতকাল থেকে সরকার ইউরিয়া সারের দাম কেজি প্রতি ছয় টাকা বাড়িয়েছে। ক্রমান্বয়ে অন্যান্য ফসফেটিক সারের দামও সরকার বাড়াবে। সারের মূল্যবৃদ্ধি না করলে ভর্তুকির ধকল সামলানো সরকারের পক্ষে কঠিন হয়ে উঠবে বলেও সূত্র মন্তব্য করেছে।

উল্লেখ্য, দেশে বর্তমানে প্রায় ৫৭ লক্ষ ৫০ হাজার টন রাসায়নিক সারের চাহিদা রয়েছে। এরমধ্যে ২৬ লাখ ৫০ হাজার টন ইউরিয়া সার ব্যবহৃত হচ্ছে। এই বিপুল পরিমানে সারে প্রতি কেজিতে ৬ টাকা করে বাড়িয়ে ১৫৯০ কোটি টাকা ভর্তুকি কমানো সম্ভব হবে। এর পাশাপাশি ৭ লক্ষ টন টিএসপি, ৭ লক্ষ টন এমওপি এবং সাড়ে ১৬ লক্ষ ডিএপি সার ব্যবহার করা হয়। টিএসপি, এমওপি, ডিএপি সারের মূল্য বাড়ানোর যে প্রক্রিয়া সরকার গ্রহণ করেছে তা কার্যকর করলে ভর্তুকির পরিমাণ আরো কমে আসবে।

দেশের কৃষি উৎপাদনের অন্যতম প্রধান উপকরণ হচ্ছে সার। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলেছে, দীর্ঘদিন ধরে সার ব্যবহারের ফলে কৃষিক্ষেতের ভূমির চরিত্র পাল্টে গেছে। এখন সারের ব্যবহার হ্রাস পেলে কৃষি উৎপাদন কমে যাবে। সারের মূল্যবৃদ্ধির ফলে সারের ব্যবহার কমলে তা কৃষি ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলে মন্তব্য করে বিষয়টি নিয়ে সরকারকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবিএনপিকে হারিকেনই ধরিয়ে দিতে হবে : প্রধানমন্ত্রী
পরবর্তী নিবন্ধবঙ্গবন্ধু : বিশ্বনেতাদের চোখে অপার বিস্ময়