সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টে লিপ্ত স্বৈরাচারের দোসররা

নগর বিএনপির সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ১৩ আগস্ট, ২০২৪ at ৬:৫০ পূর্বাহ্ণ

দেশের অন্যান্য স্থানের মত চট্টগ্রামেও সামপ্রদায়িক সমপ্রীতি বিনষ্ট করার জন্য পতিত স্বৈরাচারের দোসররা নানা ধরনের জঘন্য অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে’ বলে দাবি করেছে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি। গতকাল নগরের লালখান বাজারের একটি রেস্টুরেন্টে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে এ দাবি করা হয়। লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন নগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহ। বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন নাজিমুর রহমান।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, প্রতিবেশী একটি দেশের কতিপয় গণমাধ্যম কর্তৃক অব্যাহত অপপ্রচার আর উস্কানির সাথে পতিত হাসিনা সরকারের এ দেশীয় এজেন্টরা দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য এবং ফ্যাসিবাদী শক্তির পুনরুত্থানের অনুকূল পরিবেশ তৈরির জন্য সামপ্রাদায়িক কার্ড নিয়ে মাঠে নেমেছে। পতিত সরকারের সময়ও তারা এ কার্ড ব্যবস্থা করে হিন্দু সমপ্রদায়ের সহায় সম্পত্তি লুট করেছিল। আর এখন রাজনৈতিক পুনবার্সনের পথ নিষ্কন্টক করতে শান্তিপ্রিয় হিন্দু সমপ্রদায়ের মিছিল সমাবেশে ছাত্রলীগযুবলীগের চিহ্নিত খুনী সন্ত্রাসীদের সংখ্যালঘুর মুখোশে অংশগ্রহণের মাধ্যমে নৈরাজ্য ও আতঙ্ক সৃষ্টির পায়তারা করছে। ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা তাদের সরকার পতন হলে দুইপাঁচ লাখ নেতাকর্মী খুন হবে এবং সংখ্যালঘু সমপ্রদায় শান্তিতে দেশে থাকতে পারবে না বলে জুজুর ভয় দেখিয়ে ফ্যাসিবাদ পাকাপোক্ত করার অপকৌশল গ্রহণ করেছিল। কিন্তু দেশবাসী ও পুরো বিশ্ব দেখেছে, গণবিপ্লব পরবর্তী এ ধরনের কোনো ঘটনাই ঘটেনি।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে নাজিমুর রহমান বলেন, বাংলাদেশের সামপ্রদায়িক সমপ্রীতি বিনষ্ট করার জন্য পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে গভীর ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। ভারত আমাদের দেশের হিন্দুদের ইন্ধন দিচ্ছে, যেন অস্থিতিশীল একটি পরিবেশ সৃষ্টি করা যায়। চট্টগ্রাম শহরে হিন্দুদের যত বড় মিছিল হয়েছে এত সনাতনী ধর্মালম্বী কিন্তু চট্টগ্রামে নেই। এখানে সব আওয়ামী লীগের মুসলিম কর্মীরা যোগ দিয়েছে। আমাদের কাছে তথ্য প্রমাণ আছে। আপনারা চাইলে দিতে পারব। কাজেই এগুলো খেয়াল রাখতে হবে।

ছাত্র আন্দোলন থেকে বিএনপি কোনো শিক্ষা নেবে কিনা? প্রশ্নে তিনি বলেন, অন্যায়অবিচার করলে কেউ মাঠ পাবে না। আমরাও পাব না। আর সংবাদপত্রে কর্মরত সাংবাদিকদেরও শিক্ষা নেওয়া উচিত। আপনাদের ভালো টাকার বিজ্ঞাপন দিয়ে যারা গরিব মানুষের রক্ত চুষে লুটপাটের ভাগিদার হয়েছে তাদের নিয়ে কেউ লিখতে পারেননি। এ দুর্বৃত্তায়ন থেকে আমাদের সবাইকে বের হওয়া উচিত। বিএনপির অনেক নেতাকর্মীদের ঘরে আওয়ামী লীগের অনেকে আশ্রয় নিয়েছেনএমন অভিযোগ রয়েছে; এ প্রসঙ্গে নাজিমুর রহমান বলেন, একটাও কি প্রমাণ আছে? থাকলে আমাদের দিন। অভিযোগের কথা দিয়ে লাভ নেই। আপনাদের নিয়ে এখন যাব। কোথায় আছে সেটা বলেন। যদি কেউ আশ্রয় দেয় তাহলে আমরা ব্যবস্থা নেব।

এক প্রশ্নের জবাবে এরশাদ উল্লাহ বলেন, আওয়ামী লীগ নেতা ও হিন্দু সম্প্রদায় এক করা ভুল হবে। তিনি বলেন, যারা লুট করে তারা কোনো দলের না। তাদের পরিচয় তারা লুটেরা। কিশোর গ্যাং, ইয়াবা পার্টি এবং লুটেরা, এই তিন গ্রুপ মিলে নানা অরাজকতা করেছে।

লিখিত বক্তব্যে এরশাদ উল্লাহ বলেন, বিএনপিসহ আলেম ওলেমা ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ভাইয়েরা রাত জেগে সংখ্যালঘুদের পাড়া মহল্লা, মন্দির পাহারা দিয়ে যাচ্ছে। তাদের নিরাপত্তাহীনতার শঙ্কা দূরীভূত করার জন্য চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা অব্যাহতভাবে হিন্দু বৌদ্ধ ধর্মীয় স্থাপনা পরিদর্শন, ধর্মীয় নেতাদের সাথে সৌজন্য বৈঠক করে সাহায্য সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছেন। এ অভূতপূর্ব অসমপ্রদায়িকতা ও আন্তঃধর্মীয় সমপ্রীতির নজির দেশ বিদেশে অকুণ্ঠ প্রশংসা পাচ্ছে।

এরশাদ উল্লাহ বলেন, আমরা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলতে চাই বাংলাদেশ ধর্মীয় সমপ্রীতি ও আম্প্রদায়িকতার ক্ষেত্রে বিশ্বে অন্যন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এটা আমাদের হাজার বছরের ঐতিহ্য। বাংলাদেশ নামক ভূখণ্ডের সকল নাগরিকের পরিচয় একটাই আমরা বাংলাদেশি। কখনো সংখ্যাগুরু বা সংখ্যালঘু বলে কোনো কিছুতে আমরা বিশ্বাস করি না। আমরা এও আশ্বস্থা করতে চাই যে, পরিস্থিতির উত্তরণের পর একটি গণতান্ত্রিক সরকার গঠন হলে বিগত ১৫ বছর ধরে আওয়ামী লীগ ও তাদের সাঙ্গপাঙ্গরা সংস্যালঘু ভাইদের যে সহায় সম্পত্তি অবৈধভাবে দখললুটপাট করছে তাদের বিচারের উদ্যোগ নেয়া হবে। একই সাথে ছাত্রলীগ, যুবলীগ স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতৃত্বে যারা ছাত্র জনতা হত্যা নির্যাতনের অভিযুক্ত চিহ্নিত অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা যে ধর্মের পরিচয়ই বহন করুক না কেন তারা স্বস্ব অপরাধের দায় থেকে সামপ্রদায়ীকতার কার্ড ব্যবহার করে কোনভাবেই রেহাই পাবে না।

এরশাদ উল্লাহ বলেন, ইতিমধ্যেই পুলিশ প্রশাসন সহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের কর্মস্থালে যোগদান করেছেন। সেজন্য আমরা তাদেরকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। তবে আমরা অতীতের মত আওয়ামী দানবীয় পুলিশ বাহিনী চাই না। আমরা চাই, মানবীয় পুলিশ প্রশাসন। যারা দেশ ও জনগণের সেবায় নিয়োজিত থাকবে এবং পুলিশের আইন অনুযায়ী পুলিশ প্রশাসন পরিচালিত হবে।

তিনি বলেন, সুন্দরভাবে দেশ পরিচালনার জন্য শান্তিপূর্ণ পরিবেশ খুবই প্রয়োজন। বিএনপি চেয়ারর্পান বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সুস্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছেন, বিএনপির নামে কেউ কোনো অপকর্ম করলে আইনের হাতে তুলে দিতে হবে এবং তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এখন সবাইকে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে। আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয় এমন কোনো কাজ কেউ করতে পারবে না। সংখ্যালঘু সমপ্রদায়সহ ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সবার জান মালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আমাদের প্রত্যেকের কর্তব্য। তাদের ওপর যে কোনো ধরনের আঘাত প্রতিরোধ করতে হবে। যে কোনো অপপ্রচার ও অপচেষ্টার বিরদ্ধে চট্টগ্রামবাসীকে সচেতন থাকতে হবে। আমরা আমাদের বিজয়ী ছাত্র জনতাসহ চট্টগ্রামবাসীকে অভিনন্দন জানাচ্ছি।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপি নেতা এম এ আজিজ, এডভোকেট আবদুস সাত্তার, সৈয়দ আজম উদ্দিন, হারুন জামান, শফিকুর রহমান স্বপন, নিয়াজ মো. খান, এস এম সাইফুল আলম, কাজী বেলাল উদ্দিন, মো. শাহ আলম, ইস্কান্দার মির্জা, আর ইউ চৌধুরী শাহীন, ইয়াছিন চৌধুরী লিটন, আহমেদুল আলম চৌধুরী রাসেল, মো. কামরুল ইসলাম, মহানগর যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহেদ, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এইচ এম রাশেদ খান, সাধারণ সম্পাদক বেলায়েত হোসেন বুলু।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচেয়ারম্যান ও সদস্যদের অপসারণ দাবি, প্রবেশমুখে তালা
পরবর্তী নিবন্ধবাংলাদেশ সেনাবাহিনীর উচ্চ পর্যায়ে রদবদল