সামাজিক অস্থিরতাই কি দায়ী?

সম্প্রতি ঘটে যাওয়া কিছু নৃশংস ঘটনা

ঋত্বিক নয়ন | সোমবার , ৯ অক্টোবর, ২০২৩ at ৬:০৯ পূর্বাহ্ণ

মানুষের প্রতি মানুষের সহমর্মিতা বিলীন হয়ে যাচ্ছে। ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে মানুষের মাঝ থেকে। মানবীয় গুণাবলী হারিয়ে মানুষ হিংস্র প্রাণীর মতো আচরণ করছে। নৃশংসতাই যেন এখন শেষ কথা। ঘরেবাইরে সর্বত্র। প্রতিপক্ষ কিংবা স্বজন; কেউই এই নৃশংসতা থেকে রেহাই পাচ্ছে না। সময়ের আবর্তনে সভ্য মানুষ হিসেবে মানুষের মধ্যে মানবতাবোধ যেখানে বৃদ্ধি পাওয়ার কথা, সেখানে মানবতাবোধ প্রতিনিয়ত কমছে। আজকাল প্রতিনিয়ত ক্ষতবিক্ষত হতে হয়, একটি ঘটনা নিয়ে হাহুতাশ করতে না করতেই আরেকটি ঘটনা ঘটছে আরও নৃশংস কায়দায়। পরকীয়া সন্দেহে নিজের স্ত্রীকে খুনের আলোচনার রেশ মিলিয়ে যেতে না যেতেই আলোচনার জন্ম দিচ্ছে সম্পত্তির জন্য দুই পুত্র মিলে পিতাকে খণ্ডবিখণ্ড করার ঘটনা।

আমরা শান্তির কথা বলি, মিলনের কথা বলি, উজ্জ্বলতার কথা বলি, নীতির কথা বলি, সত্যের কথা বলি, সাফল্যের কথা বলি। এমনকি এসব কথা শুনতেও পছন্দ করি; কাজের বেলায়ও এসবের জন্য নিজেকে সঁপে দিতে ভালো লাগে। কিন্তু যখন দেখা যায় দশের তুলনায় নিজের থলেটা তেমনভাবে পূর্ণ হচ্ছে না; তখনই বিবেক হয়ে ওঠে হিংস্র। তাই হয়তো শ্বশুর হাসান আলী খুনের মামলায় পুত্রবধূ আনারকলি গ্রেপ্তারের পর বলতে পারে, ‘ঘটনার সময় আবেগ কাজ করেছে, বিবেক কাজ করেনি।’

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলোজি বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক ড. ইফতেখান উদ্দিন চৌধুরী বলেন, সভ্যতা একদিকে যেমন আমাদের ভালো কাজের উদাহরণ দিচ্ছে, ঠিক তেমনি আমাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব, লোভ, সামাজিক অসমতা এর বিপরীত চিত্র। এটা শুধু আমাদের দেশেই নয়, উন্নত বিশ্বেও এটা রোগের মতো ছড়িয়ে গেছে।

তিনি বলেন, আগে সমস্যা হলে নিজেরাই নিজেদের মধ্যে সালিশের মাধ্যমে মীমাংসা করে নিতো। সভ্যতার বিকাশে নগরায়ণ ও শিল্পায়ন যখন হয়েছে, তখনই মানুষের সঙ্গে মানুষের প্রতিযোগিতা বেড়েছে। এর মধ্যে সম্পত্তি একটা বড় কারণ হয়ে উঠছে। আগের তুলনায় জমির মূল্য অনেক বেড়ে গেছে। ফলে পরিবারের মধ্যেই পিতা, মাতা, ভাইবোন একে অপরের সঙ্গে বিরোধ বাড়ছে। জমির জন্য মাকেবাবাকে মেরে ফেলা হচ্ছে। ভাই ভাইকে ও বোনকে হত্যা করছে। যত বেশি আধুনিক সমাজ ব্যবস্থায় যাবেন, তত বেশি সাইকোলজিক্যাল ডিজঅর্ডার বা মানসিক অস্থিরতা বাড়বে। সামপ্রতিক নৃশংসতার কয়েকটি চিত্র : সম্পত্তির বিরোধে হালিশহরে বৃদ্ধ মো. হাসানকে (৬১) হত্যা করে স্ত্রী ও দুই ছেলে। হত্যার পর বৃদ্ধের লাশ ১০ টুকরো করে বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে গুম করার চেষ্টা করে তারা। গ্রেপ্তারের পর নিহতের স্ত্রী হোসনে আরা, বড় ছেলে মোস্তাফিজুর রহমান ও পুত্রবধূ আনারকলির জবানিতে উঠে আসে হত্যাকান্ডের নৃশংসতার ভয়াবহ চিত্র। ১ সেপ্টেম্বর বাঁশখালীতে দায়ের কোপে এনামুল হক (২৩) নামে এক ছেলের হাতে মো. বাদশা (৫৫) নামে তার বাবা খুন হন। বকা দেয়ার কারণেই ওই ছেলে তার বাবাকে খুন করেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। নিহত বাদশা ডেকোরেটর ব্যবসায়ী ছিলেন। নগরীর পাহাড়তলী থানার সরাইপাড়া এলাকায় পূর্ব শত্রুতার জের ধরে প্রকাশ্যে মো. হোসেন (৪৫) নামের এক ব্যক্তিকে ছুরিকাঘাত করে খুন করে বন্ধু মোহাম্মদ জসিম।

এসব ঘটনা প্রসঙ্গে পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রো এএসপি একেএম মহিউদ্দিন সেলিম আজাদীকে বলেন, খুনের যত ঘটনা ঘটছে এর কিছু রাজনৈতিক আর কিছু সামাজিক অস্থিরতা থেকে হচ্ছে। রাজনৈতিক ক্ষেত্রে কখন কাকে কে ছুরি মারছে এটা আগে থেকে বোঝা মুশকিল। আর সামাজিক অপরাধ নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা কারো নেই। তিনি বলেন, সামাজিক অস্থিরতা বেড়ে যাওয়ার কারণে নৃশংস হয়ে উঠছে মানুষ। যে কারণে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা বাড়ছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধলস্কর পরিবারকে এক মাসের মধ্যে দিতে হবে ১২শ কোটি টাকা
পরবর্তী নিবন্ধইনভেন্ট্রির পর নিলামে যেতে ৬ মাস লাগল কেন?