সামাজিক অনুশাসনের সুদিন ফিরিয়ে আনার স্বপ্ন

কমিউনিটি পুলিশিং ডে’র সমাবেশে সিএমপি কমিশনার একজন যা পারি না, সকলে তা সহজে করতে পারি : আজাদী সম্পাদক

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ১ নভেম্বর, ২০২০ at ৫:০৭ পূর্বাহ্ণ

সামাজিক অনুশাসনের হারিয়ে যাওয়া দিনগুলো ফিরিয়ে আনার আহ্বান জানালেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) কমিশনার সালেহ্‌ মোহাম্মদ তানভীর। তিনি বলেন, কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণ, দমন, প্রতিরোধ যা-ই বলি সেটি করতে হলে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। এ সহযোগিতা হতে হবে কমপ্লিমেন্টারি। আমরা যেন পরস্পর পরস্পরকে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করি, যাতে এটির সম্মানজনক একটি সমাধানে আসতে পারি।
কমিউনিটি পুলিশিং ডে-২০২০ উপলক্ষে গতকাল শনিবার দামপাড়া পুলিশ লাইন্স মাল্টিপারপাস শেডে আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ অভিমত ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, কমিউনিটি পুলিশিং একটি দর্শন। পুলিশের দায়িত্ব মানুষকে আইনগত সেবা দেওয়া। সেই কাজটি সর্বোত্তমভাবে করার জন্য কমিউনিটি পুলিশিং দর্শন একটি উৎকৃষ্ট মাধ্যম। পুলিশিংকে বেগবান করতে হলে জনগণের অনুমোদন প্রয়োজন। জনসমর্থন পেতে হলে কমিউনিটি পুলিশিংয়ের বিকল্প নেই। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন কমিউনিটি পুলিশিং চট্টগ্রাম মহানগরের আহ্বায়ক ও দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক। সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার দেবদূত মজুমদারের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) এসএম মোস্তাক আহমেদ খান, অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) শ্যামল কুমার নাথ, উপ-কমিশনার (সদর) আমির জাফর, উপ-কমিশনার (উত্তর) বিজয় বসাক এবং কমিউনিটি পুলিশিং মহানগরের সাধারণ সম্পাদক অহিদ সিরাজ স্বপন।
সিএমপি কমিশনার বলেন, আমি স্বপ্ন দেখি সামাজিক অনুশাসনের সেই সুদিন ফিরিয়ে আনার। যেখানে বাড়ির ছেলেমেয়েরা অহেতুক অকারণে আড্ডার নামে বাইরে থাকবে না, বাবা-মায়ের নজরদারিতে থাকবে। আপনাদের প্রত্যেকের মধ্যে বাবা-মা, ভাইবোন, সন্তান রয়েছে। অহেতুক বাইরে আড্ডা দেওয়া, কুসঙ্গে জড়িয়ে পড়া-এটাকে আমাদের প্রতিরোধ করার চেষ্টা করতে হবে। পাশাপাশি শিশু-কিশোরদের মাঠে ফিরিয়ে আনতে হবে। চট্টগ্রামে বড় সমস্যা খেলার মাঠ। আমরা সবাই যদি একসঙ্গে দাবি জানাই, এ সমস্যা সমাধান হবে বলে আমার বিশ্বাস।
কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণে কিছু তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেখা গেছে, মাইনর ছেলেমেয়েদের বাবা-মা আদর করে ছেলেকে মোটরসাইকেল কিনে দিয়েছেন। আমরা যদি আটক করি, তারা এসে তদবির করছেন। তাদের কেন কিনে দিয়েছেন জিজ্ঞেস করলে বলছেন ছেলের শখ। এই শখ ছেলেকে কোন রাস্তায় নিয়ে যাচ্ছে সেটা আমরা ধারণা করতে পারি না। আমরা এত ব্যস্ত হয়ে গেছি যে, পরিবারের সদস্যদের খবরও রাখতে পারছি না।
শীতে করোনাভাইরাসের আগ্রাসন বাড়তে পারে উল্লেখ করে সিএমপি কমিশনার বলেন, আশা করি পূর্বের মতো ভবিষ্যতেও করোনা নিয়ন্ত্রণে কমিউনিটি পুলিশ এগিয়ে আসবে এবং কাজ করবে। তিনি ‘কমিউনিটি পুলিশিং বার্তা’ সংক্রান্ত একটি ত্রৈমাসিক পত্রিকা প্রকাশের ঘোষণা দেন। শেষে উপস্থিত সমাবেশকে মাদক, জঙ্গিবাদ ও যৌন হয়রানিকে না বলার শপথবাক্য পাঠ করান তিনি।
সভাপতির বক্তব্যে দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক বলেন, একজন যে কাজ করতে পারি না, সকলে মিলে সে কাজটা খুব সহজেই করতে পারি। চট্টগ্রাম নগরীতে জনসংখ্যা ৬০ লক্ষ, অথচ পুলিশের সংখ্যা মাত্র ৬,৬০০। আমরা যারা কমিউনিটি পুলিশিংয়ের সদস্য, তারা পুলিশ নই, কিন্তু পুলিশের সহায়ক শক্তি হিসেবে এই ঘাটতি পুষিয়ে দিতে পারি। আমরা যে সমাজে বাস করি, সেখানে একে অপরকে চিনি, জানি। কাজেই সমাজে যারা অপরাধ করছে তাদের চিহ্নিত করে পুলিশকে তথ্য দিয়ে সাহায্য করতে পারি। কিন্তু সেই অপরাধী সম্পর্কে জেনেও যদি গোপন করি, তবে আমরা ভুল করব। আমাদের মনে রাখতে হবে, আমি, আপনি, আমাদের পরিবার ভালো হলে এ সমাজ ভালো থাকবে। সমাজ ভালো থাকলে ভালো থাকবে দেশ। তবেই কাঙ্ক্ষিত সোনার বাংলা গড়ে তুলতে পারব।
তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে দেশ জুড়ে নারী নির্যাতন, কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্য বৃদ্ধি পেয়েছে। সে তুলনায় চট্টগ্রাম নগরী তুলনামূলকভাবে শান্ত আছে। এ কৃতিত্ব অবশ্যই চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের প্রতিটি সদস্যের। করোনা সম্পর্কে জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘নো মাস্ক, নো সার্ভিস’। এটা যথাযথভাবে পালন করতে হবে। কমিউনিটি পুলিশিংয়ের পাশাপাশি কমিউনিটি ডিসটেন্স বজায় রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) মোস্তাক আহমেদ খান বলেন, জনগণকে সাথে নিয়ে জনগণের জন্য কাজ করা-ই কমিউনিটি পুলিশিং। আপনি ও আমি যখন একই চিন্তায় এক হয়ে কাজ করব, তখন সমাজের সকল অসঙ্গতি দূর হতে বাধ্য। থানা, ওয়ার্ড পর্যায়ে আমরা মাননীয় কমিশনার স্যারের নেতৃত্বে সে চেষ্টা করে চলেছি। আমরা জনগণের পুলিশ হয়ে কাজ করছি। মহামারী করোনাকালে তার দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছি। আগামীতেও সে চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।
অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) শ্যামল কুমার নাথ বলেন, পুলিশ ও জনতার মাঝে সেতুবন্ধন তৈরি করা-ই কমিউনিটি পুলিশিংয়ের মূল লক্ষ্য। আমাদের এই বন্ধনটাকে আরো শাণিত করতে হবে। অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে সমস্যার সমাধানে কমিউনিটি পুলিশিং ভূমিকা রেখে আসছে। করোনাকালে কমিউনিটি পুলিশিংয়ের সদস্যদের সাথে নিয়ে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে সারা দেশের কাছে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত গড়ে তুলেছে।
কমিউনিটি পুলিশিং চট্টগ্রাম মহানগরের সদস্য সচিব অহিদ সিরাজ স্বপন বলেন, মুজিববর্ষের মূলমন্ত্র, কমিউনিটি পুলিশিং সর্বত্র। পুলিশের সাথে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক রেখে মাদকমুক্ত, নারী নির্যাতনমুক্ত, জঙ্গিবাদমুক্ত আধুনিক নগর হিসেবে চট্টগ্রামকে গড়ে তুলতে আমরা কাজ করে চলেছি। আগামীতেও পুলিশের সাথে সমন্বয় করে এ নগরীকে পরিচ্ছন্ন নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে চাই।
এর আগে বেলুন উড়িয়ে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন ঘোষণা করেন সিএমপি কমিশনার। সমাবেশে ১ বছরের সফলতার জন্য ১৬ থানার কমিউনিটি পুলিশ সদস্যদের হাতে সম্মাননা স্মারক তুলে দেওয়া হয়। পরে সিএমপি কমিশনার সালেহ্‌ মোহাম্মদ তানভীরকে কমিউনিটি পুলিশং ডে’র সম্মাননা স্মারক তুলে দেওয়া হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধহত্যার রহস্য উদঘাটন
পরবর্তী নিবন্ধসার্ভিস চার্জের দাবি জোরালো হচ্ছে