যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা পরিচয় দিয়ে বিএনপি কার্যালয়ে মিঞা জাহিদুল ইসলাম আরেফী নামের এক মার্কিন নাগরিকের সংবাদ সম্মেলন করার ঘটনায় সাবেক সেনা কর্মকর্তা চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার বিকালে সাভার মডেল টাউন থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয় বলে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশিদ জানান। আরেফীর বিরুদ্ধে দুদিন আগে পল্টন থানায় যে মামলা করা হয়েছে, অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল হাসান সারওয়ার্দীও সে মামলার আসামি। মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) প্রয়োজনে সারওয়ার্দীকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করবে বলে জানান হারুন অর রশীদ। খবর বিডিনিউজ ও বাংলানিউজের।
মহিউদ্দিন শিকদার নামের এক সাবেক ছাত্রলীগ নেতার করা ওই মামলায় বলা হয়েছে, শনিবার সংঘর্ষের পর আরেফীকে বিএনপি অফিসে নিয়ে গিয়েছিলেন হাসান সারওয়ার্দী এবং বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন। সারওয়ার্দীকে আটকের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে গতকাল সংবাদ সম্মেলনে জানান প্রধানমন্ত্রী। সংবাদ সম্মেলন শেষ হওয়ার পরপরই সারওয়ার্দীকে গ্রেপ্তারের খবর আসে।
শনিবার বিএনপির মহাসমাবেশকে ঘিরে সংঘর্ষের পর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলটির নেতাকর্মীদের উপস্থিতিতে সংবাদ সম্মেলন করেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক আরেফী। তিনি নিজের পরিচয় দেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের উপদেষ্টা হিসেবে। রোববার দেশের বাইরে যাওয়ার সময় ইমিগ্রেশন পুলিশ আরেফীকে আটক করে গোয়েন্দা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে। পরে ওইদিনই আরেফী, হাসান সারওয়ার্দী ও ইশরাকের বিরুদ্ধে মিথ্যা পরিচয় দিয়ে বিশ্বাসভঙ্গের মামলা করেন মহিউদ্দিন শিকদার। মামলায় আরেফীর গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় লেখা হয়। সোমবার আরেফীকে আদালতে হাজির করা হলে বিচারক তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
মামলার বিবরণ অনুযায়ী, শনিবার বিএনপি কার্যালয়ে ওই সংবাদ সম্মেলনে আরাফী দাবি করেন, মার্কিন প্রেসিডেন্টের সাথে তার দিনে ১০–১৫ বার যোগাযোগ হয় এবং মার্কিন সরকারের সবাই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পক্ষে। যুক্তরাষ্ট্র সরকার বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং আইন ও বিচার বিভাগের ওপরও নিষেধাজ্ঞা দিতে যাচ্ছে বলে দাবি করেন আরেফী। তাকে মিথ্যা বক্তৃতা দিতে সহযোগিতা করে সারওয়ার্দী ও ইশরাক বিএনপি নেতাকর্মীদের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে উসকানি দেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে মামলায়। এও বলা হয়েছে, আরেফীর বক্তব্য শুনে ও ভিডিও দেখে দেশের আইন–শৃঙ্খলায় ব্যাপক অবনতি ঘটে।
অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার হারুন অর রশিদ জানান, আরেফী তার বড় ভাইয়ের মাধ্যমে ১৯৮৪ সালে আমেরিকা চলে যান। ১৯৮৬ সালে আবার দেশে আসেন। পরে ২০২২ সালে দেশে এসে খুলনার এক নারীকে বিয়ে করেন। ছয় মাস বারিধারায় তিনি বসবাস করেছেন। ওই সময় হাঁটাচলা করতে গিয়ে সারওয়ার্দীর সাথে পরিচয় হয়। তারপর তাদের মধ্যে কথাবার্তা এবং একটা সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
হারুন বলেন, আরেফী আমেরিকা চলে গেলে সোহরাওয়ার্দী তাকে বলেন, ২৮ অক্টোবর বিএনপির একটি সমাবেশ আছে, আপনি একটু আগে আসেন। তিনি (আরেফী) এক মাস আগে বাংলাদেশে আসেন। আবার চলে যান এবং ২৬ অক্টোবর আবার দেশে আসেন। তাকে বিএনপির বড় র্যালি আছে এটা বলে নিয়ে যায় পার্টি অফিসে।
আরেফীকে জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে অতিরিক্ত কমিশনার হারুন বলেন, উনি বলেছেন, সারওয়ার্দী ও বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট বেলাল ও ইশরাক উনাকে যেভাবে উপস্থাপন করেছেন, এটা সত্য না। তারা মিথ্যাভাবে উপস্থাপন করেছেন। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি জানিয়েছেন বাসা থেকে আনার সময় উনারা তাকে শিখিয়েছেন যে, র্যাব স্যাংশান দিতে সহায়তা করেছি, এখন পুলিশ আর আনসারকে দিব। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীকেও দিব। এই কথাগুলি বললে দেখবেন যে, বাংলাদেশের পুলিশও মানুষ ডি–মোরালাইজড হবে।