সাবেক সিইসি হাবিবুল আউয়াল ৩ দিনের রিমান্ডে

শুনানিতে হাবিবুল বললেন, ২৪ এর নির্বাচন ডামি ও প্রহসনের ছিল

| শুক্রবার , ২৭ জুন, ২০২৫ at ১১:০০ পূর্বাহ্ণ

জনগণের ভোট ছাড়াই নির্বাচন সম্পন্ন করা ও রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে বিএনপির করা মামলায় সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালকে তিন দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিয়েছে আদালত। পুলিশের রিমান্ড আবেদনের শুনানি করে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম মোস্তাফিজুর রহমান গতকাল বৃহস্পতিবার এ আদেশ দেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শেরেবাংলা নগর থানার এসআই শামসুজ্জোহা সরকার এদিন হাবিবুল আউয়ালকে আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন। খবর বিডিনিউজের।

রিমান্ড আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন ঢাকার মহানগর পিপি ওমর ফারুক ফারুকী। তিনি বলেন, এই আসামি ২০২২ সাল থেকে ২৪ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তার আমলে ২৪ সালের ৭ জানুয়ারি এদেশে কলঙ্কজনক নির্বাচন হয়। সেই ডামি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও ২১টি দল ছাড়া আর কেউ অংশ নেয়নি। নির্বাচন করে ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে ক্ষমতায় বসাতে। সেই নির্বাচনে বিএনপিজামায়াতসহ অনেক বড় বড় দল অংশ নেয়নি। পূর্বেই জেনেছিল নির্বাচন হবে ডামি, লোক দেখানো, প্রহসনের নির্বাচন। নির্বাচনের আগে রাজনৈতিকগুলোর সাথে তিনি বসেন। তবে তিনি সুষ্ঠু নির্বাচনের আশ্বাস দেননি। ওমর ফারুক ফারুকী শুনানিতে বলতে থাকেন, এরপর তিনি (হাবিবুল আউয়াল) বলেছিলেন, কেউ নির্বাচনে না আসলে আমি কী বসে থাকব? ইসি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। অথচ জনগণের ভোটাধিকারের হরণ করার দাম্ভিকতাপূর্ণ বক্তব্য দেন। ৫ আগস্টের পর বুঝতে পেরে আত্মগোপনে চলে যান। মগবাজারের বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। অন্যায় করেছিলেন, এজন্য গা ঢাকা দেন।

পিপি ফারুকী বলেন, এ ব্যক্তি কীভাবে সবার সামনে মিথ্যাচার করেছে। নির্বাচনের দিন বলে, সুষ্ঠু নির্বাচন হচ্ছে, স্বতফূর্তভাবে জনগণ ভোট দিচ্ছে। জনগণের সাথে কত বড় প্রতারণা করেছে। নির্বাচনের দিন সকাল সাড়ে ৮টা থেকে ৩টা পর্যন্ত ২৭ শতাংশ ভোট পড়েছে বলে জানায়। এর এক ঘণ্টা পর এসে জানায়, ভোট পড়েছে ৪০ শতাংশ। অথচ কেন্দ্রে মানুষ নাই, কুকুর বসা। পরে সাংবাদিকদের এসে জানান, এক ঘণ্টার জন্য ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। নির্বাচন হচ্ছ, অথচ তিনি নিদ্রায় ছিলেন। কত বড় দায়িত্বজ্ঞানহীনএকটা কুলাঙ্গার আজকের এ প্রতারক হাবিবুল আউয়াল। সরকারের সাথে আঁতাত করে অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র করে নির্বাচন করে দিয়ে হাসিনাকে ক্ষমতা দিয়ে দেবে।

এসময় তাকে শুনানি শেষ করতে বলেন বিচারক। পরে মামলায় ধারার বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন ওমর ফারুক ফারুকী। হাবিবুল আউয়ালের পক্ষে তার আইনজীবী এমিল হাসান রোমেল রিমান্ড আবেদন বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন।

তিনি বলেন, বয়স ৭০ বছরের ঊর্ধ্বে। অনেক অসুস্থ, বিভিন্ন রোগে জর্জরিত। ফ্যাসিস্ট দমাতে গিয়ে যেন আবার ফ্যাসিস্ট না হয়ে যায়। এরপর আদালতের অনুমতি নিয়ে কথা বলেন আসামি হাবিবুল আউয়াল। তিনি বলেন, প্রসিকিউশনের বক্তব্যের সাথে আমিও একমত। নির্বাচনটি ডামি ও প্রহসনের নির্বাচন ছিল।

এ সময় তাকে থামিয়ে বিচারক বলেন, প্রত্যেক জেলায় নির্বাচনি ইনকোয়ারি কমিটি করা হয়, যেখানে একজন যুগ্ম জেলা জজ পদমর্যাদার একজন দায়িত্বে থাকেন। আগে যার ভাতা ছিল ২২ হাজার টাকা, সেটা আপনি ৫ লাখে উন্নীত করেছেন। এতে কি জনগণের টাকা অপচয় হয়নি?

বিষয়টি জানা নেই দাবি করে হাবিবুল আউয়াল বলেন, পাঁচ বছরের মুদ্রাস্ফীতি হিসেব করে হয়তো ভাতা বাড়ানো হয়েছিল। এরপর বিচারক জানতে চান, এই যে ইনকোয়ারি কমিটি করা হয়েছিল, নির্বাচনের সময় কোথাও কি তারা সরেজমিনে গিয়েছিলেন?

তখন আউয়াল বলেন, একজন রিটার্নিং অফিসারের অধীনে ৪৫টা সংসদীয় আসনের দায়িত্ব দেওয়া হয়। তাকে সহযোগিতা করতে আরও ৪৫ জন অ্যাসিস্ট্যান্ট রিটার্নিং অফিসার থাকেন। একটা নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে করার জন্য ২ ভাগ দায়িত্ব কমিশনের, বাকি ৯৮ ভাগ দায়িত্ব মাঠ পর্যায়ে কাজ করা অফিসারদের।

নির্বাচনের আগে এমন অবস্থা জেনে আপনি পদত্যাগ করেননি না কেন? বিচারকের এমন প্রশ্নের জবাবে সাবেক সিইসি আউয়াল বলেন, ওই অবস্থায় পদত্যাগ করা সম্ভব ছিল না। আমার এক বন্ধুও আমাকে জিজ্ঞাসা করেছিল পদত্যাগের কথা। আমি বলেছি, ‘তুমি যদি আগে বলতাএমন ভয়ংকর নির্বাচন হবে, তাহলে আমি দায়িত্বই নিতাম না’।

অতীতের নির্বাচনের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, বায়াত্তরের সংবিধান প্রণয়নের তিন মাসের মাথায় অনুষ্ঠিত তেয়াত্তরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২৯৩টি আসন পায়। সেই নির্বাচনও সুষ্ঠু ছিল না। ক্ষমতার লোভ এমন যেশেখ মুজিবও তা সামলাতে পারেননি। ছিয়ানব্বই সালে আওয়ামী লীগ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য আন্দোলন করে। পরবর্তীতে তারাই আবার দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে সংবিধান সংশোধন করে।

এসময় পিপি ওমর ফারুক ফারুকী উত্তেজিত হয়ে আদালতকে বলেন, তিনি নিজেকে জাস্টিফাই করছেন। তার এসব বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ নেই। এ সময় আউয়াল বলেন, জাস্টিফাই না করতে দিলে রিভলবার দিয়ে গুলি করে মেরে ফেলেন। তখন উপস্থিত আইনজীবীরা চিৎকারচেঁচামেচি শুরু করলে এজলাসে উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি হয়।

নির্বাচন কমিশনের অসহায়ত্ব তুলে ধরে আউয়াল বলেন, মৌলিক সংস্কার ছাড়া আগামী একহাজার বছরেও এদেশে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। আধা ঘণ্টার শুনানি শেষে আদালত আসামি হাবিবুল আউয়ালের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদেশ দেয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসাবেক তিন ইসির বিরুদ্ধে মামলায় যুক্ত হল রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ
পরবর্তী নিবন্ধবাংলাদেশের নখদন্তহীন বোলিংয়ে রান পাহাড়ে চড়ার পথে শ্রীলঙ্কা