এইচ এম এরশাদ সরকারের পতনের পর নব্বইয়ের দশকের প্রথমার্ধে বাংলাদেশের প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করা বিচারপতি মো. আব্দুর রউফ মারা গেছেন; তার বয়স হয়েছিল ৯১ বছর।
তার একান্ত সহকারী মো. তাওহিদ জানান, গতকাল রোববার সকাল ১০টার দিকে মগবাজারের ইনসাফ বারাকা কিডনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান আপিল বিভাগের সাবেক এই বিচারক। তিনি বলেন, স্যার দুই মাস ধরে বেশ অসুস্থ ছিলেন, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। একটু আগে হাসপাতালেই মারা গেছেন। পরিবারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ঢাকার আনুষ্ঠানিকতাগুলো করে গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহে উনাকে দাফন করা হবে। খবর বিডিনিউজের।
প্রধান উপদেষ্টার শোক : বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক পথচলার ক্ষেত্রে বিচারপতি মো. আব্দুর রউফ একজন উদাহরণ হয়ে থাকবেন বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।
আব্দুর রউফের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে মুহাম্মদ ইউনূস দেশকে গণতান্ত্রিক ধারায় ফেরাতে সাবেক এই বিচারপতির অবদানের কথা স্মরণ করেছেন। প্রধান উপদেষ্টা গতকাল রোববার এক শোকবার্তায় মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনাও জানিয়েছেন।
বিচারপতি রউফ নাগরিক সমাজের একজন বড় স্তম্ভ ছিলেন জানিয়ে মুহাম্মদ ইউনূস শোকবার্তায় বলেন, বাংলাদেশর গণতান্ত্রিক পথচলার ক্ষেত্রে বিচারপতি রউফ বার বার উদাহরণ হয়ে আসবেন। তিনি তার কাজের মধ্য দিয়ে দেশের মানুষের অন্তরে বেঁচে থাকবেন চিরকাল। ভোটাধিকার, সংস্কার এবং গণতন্ত্রের জন্য তিনি অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন যা জাতি শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে।
এইচ এম এরশাদ সরকারের পতনের পর নব্বইয়ের দশকের প্রথমার্ধে বাংলাদেশের প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন বিচারপতি রউফ; তার বয়স হয়েছিল ৯১ বছর। বাংলাদেশের পঞ্চম সিইসি বিচারপতি মো. আব্দুর রউফ ১৯৯০ সালের ২৫ ডিসেম্বর থেকে ১৯৯৫ সালের ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯১ সালের বহু কাঙ্ক্ষিত নির্বাচন করে প্রশংসিত হলেও ১৯৯৪ সালে বিএনপির শাসনামলে মাগুরা উপ নির্বাচন নিয়ে বিতর্কিত হন তিনি।
১৯৩৪ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহে জন্মগ্রহণ করা আবদুর রউফ লেখাপড়া করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। সগত শতকের ষাটের দশকের শুরুতে তিনি আইনজীবী হিসেবে পেশাজীবন শুরু করেন। ১৯৮২ সালে বিচারক হিসেবে যোগ দেন হাই কোর্টে। নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে এইচএম এরশাদ সরকারের পতন হলে দেশের প্রথম তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দায়িত্ব নেন বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ। হাই কোর্ট বিভাগের বিচারক আবদুর রউফকে তিনি প্রধান নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্বে আনেন। পঞ্চম সংসদ নির্বাচনের আগে সেই অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ই প্রথমবারের মত তিন সদস্যের ইসি পায় বাংলাদেশ। বিচারপতি সুলতান হোসেন খান সরে যাওয়ার পরদিন সিইসি হিসেবে যোগ দেন বিচারপতি মো. আব্দুর রউফ।
১৯৯৫ সালের জুনে হাই কোর্ট থেকে আপিল বিভাগের বিচারক হন বিচারপতি মো. আব্দুর রউফ। ১৯৯৯ সালের ১ ফেব্রুয়ারি তিনি অবসরে যান। অবসরের পর ফারইস্ট ইসলামিক লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি এবং প্রাইম ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের শরিয়াহ উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেছেন সাবেক এই বিচারপতি। জাতীয় শিশু–কিশোর সংগঠন ‘ফুলকুঁড়ি আসর’এর কেন্দ্রীয় সভাপতি হিসেবেও তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন।