কোটা সংস্কার আন্দোলনের ছয় নেতার নামে ধর্ষণের মামলা করেছেন এক তরুণী, যাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাবেক ভিপি নুরুল হক নূরের বিরুদ্ধে ধর্ষণে সহায়তার অভিযোগ আনা হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজের এক স্নাতকোত্তর শ্রেণির এক ছাত্রী গত রোববার রাতে মামলাটি করেন বলে লালবাগ থানার ওসি কে এম আশরাফ উদ্দিন জানিয়েছেন। তবে মামলার প্রধান আসামি হলেন- একই বিভাগের স্নাতকোত্তর উত্তীর্ণ হাসান আল মামুন, যিনি কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীদের প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের আহ্বায়কের দ্বায়িত্বে রয়েছেন। পরে লালবাগ থানায় দায়ের হওয়া মামলাটি এজাহার গ্রহণ করেছে আদালত। গতকাল সোমবার ঢাকার মহানগর হাকিম বেগম ইয়াসমিন আরা এজাহার গ্রহণ করে এসআই আসলাম উদ্দিনকে ৭ অক্টোবর তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন।
এদিকে মামলাটি হওয়ার পর গতকাল ভিন্ন অভিযোগে আটকের কয়েক ঘণ্টা পর পুলিশ সাবেক ভিপি নুরুল হক নূরকে ছেড়ে দিয়েছে। গতকাল রাতে এক বিক্ষোভ মিছিল থেকে নুর ও তার সাত সহযোগীকে
ধরে নিয়ে যায় পুলিশ। ধর্ষণের অভিযোগে এক তরুণী মামলা করার পর তা ষড়যন্ত্রমূলক দাবি করে এই বিক্ষোভ করছিল নূরের সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি থেকে বের হওয়া মিছিলটি মৎস্য ভবন এলাকায় পৌঁছলে পুলিশের সঙ্গে গোলযোগ বাঁধে। নূরসহ সাতজনকে সেখানে আটক করে পুলিশ। তখন ডিএমপির উপ-কমিশনার (মিডিয়া ও পাবলিক রিলেশন্স) ওয়ালিদ হোসেন বলেছিলেন, পুলিশের কাজে বাধা দেওয়া এবং পুলিশকে মারধর করার অভিযোগে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদেরকে ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয়েছে। তবে রাত ১০টার দিকে নুরকে দেখা যায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে পুলিশের হামলায় আহত পরিষদের নেতা-কর্মীরা চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। তখন জানতে চাইলে মহানগর পুলিশ কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম বলেন, নুরকে আটকই করা হয়নি। অনুমতি ছাড়া মিছিল করায় তাকে নিয়ে বসিয়ে রাখা হয়েছিল। পরে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। খবর বিডিনিউজের।
এসময় ছাত্র পরিষদের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ায় আহত পাঁচজন পুলিশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নিতে দেখা যায়। তারা হলেন- এ এইচ আই সুজন চন্দ্র দে, এ এইচ আই গোলাম হোসেন, জাহিদ হাসান, মঞ্জুরুল হক ও কামাল হোসেন।
এর আগে ওসি কে এম আশরাফ বলেন, একই বিভাগের শিক্ষার্থী হাসান আল মামুন বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ওই ছাত্রীকে ধর্ষণ করেছেন বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে। তার সাথে আরও পাঁচজনকে সহযোগী হিসেবে আসামি করা হয়েছে, যাদের মধ্যে নূর (ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর) তিন নম্বর। মামলায় ঘটনাস্থল দেখানো হয়েছে লালবাগের নবাবগঞ্জ এলাকায়। তালিকায় সহযোগী আসামি হিসেবে ছাত্র অধিকার পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক নূরের সঙ্গে আরও দুই যুগ্ম আহ্বায়ক নাজমুল হাসান সোহাগ (২৮) ও সাইফুল ইসলাম (২৮), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সহ-সভাপতি নাজমুল হুদা (২৫) ও কর্মী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবদুল্লাহ হিল বাকির (২৩) নাম রয়েছে।
মামলার এজহারের তথ্য অনুযায়ী, ওই ছাত্রী নিজেও বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। পূর্ব পরিচয়ের সুবাদে ২০১৮ সালের জুলাইয়ে ঘনিষ্টতা তৈরির পর বিভিন্ন সময় হাসান আল মামুনের সঙ্গে ইমো, হোয়াটসঅ্যাপ ও মেসেঞ্জারে কথোপকথন হয়, যেখানে ‘শারীরিক সম্পর্কের’ ইঙ্গিত দেওয়া হয়। চলতি বছরের ৩ জানুয়ারি বেলা ১টার দিকে ওই ছাত্রীকে মামুন লালবাগের নবাবগঞ্জ বড় মসজিদ রোডে তার বাসায় যেতে বলে। ওই ছাত্রীর ভাষ্য, ‘বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে’ সেখানে তাকে ধর্ষণ করা হয়। ওই ছাত্রী অসুস্থ হয়ে পড়লে ১২ জানুয়ারি মামুন তার বন্ধু সোহাগের সঙ্গে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। এরপর মামুনকে বিয়ের কথা বললে তিনি টালবাহানা শুরু করেন। বিষয়টি নিয়ে ২০ জুন নুরুল হক নুরের কাছে অভিযোগ করেন ওই ছাত্রী। নূর তখন ‘মীমাংসার আশ্বাস’ দিলেও পরে অবস্থান পাল্টে তাকে ‘বাড়াবাড়ি করতে’ নিষেধ করেন বলে এজাহারে অভিযোগ করা হয়েছে।