অবশেষে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) বহুল আলোচিত পাহাড়খেকো সাবেক কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগ নেতা জহুরুল আলম জসিমকে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। নগর পুলিশের একটি সূত্র জানায়, গত বুধবার মধ্যরাতে নগর পুলিশের একটি টিম ঢাকার রামপুরা থানার বনশ্রী এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে। আজ তাকে আদালতে হাজির করা হতে পারে। গতকাল বৃহস্পতিবার বিষয়টি নিশ্চিত করে নগরীর পাঁচলাইশ থানার ওসি মোহাম্মদ সোলাইমান বলেন, গ্রেপ্তার জসিমকে বৃহস্পতিবার বিকেলে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম নিয়ে আসা হয়েছে। তাকে পাঁচলাইশ থানায় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত শহীদ ওয়াসিম আকরাম হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, জহুরুল আলম জসিম চসিকের ৯ নম্বর উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর। এছাড়া তিনি উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়কের পদে রয়েছেন। চট্টগ্রাম নগরে ‘ভূমিদস্যু’ এবং ‘পাহাড়খেকো’ হিসেবে সাবেক কাউন্সিলর জসিমকে একনামে চেনেন সবাই। নগরীর আকবর শাহ থানাধীন সরকারি খাস জায়গা, রেলওয়ের জায়গা দখল থেকে শুরু করে পাহাড় কেটে গড়ে তুলেছিলেন নিজের বিশাল সাম্রাজ্য। রাতদিন নিজস্ব বাহিনী দিয়ে পাহাড় কেটে আবাসিক প্লট বানিয়ে বিক্রি করে রাতারাতি আলাদীনের চেরাগের মত শত কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন এই জসিম।
পুলিশ জানায়, বিতর্কিত এই আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে নগরীর বিভিন্ন থানায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা, গুলি ও অর্থ দিয়ে সহায়তার অভিযোগে একাধিক মামলা হয়েছে।
এর আগে, ১৭ ফেব্রুয়ারি কাউন্সিলর জসিমকে গ্রেপ্তারে রাতভর আকবর শাহ এলাকার একটি ভবনে তল্লাশি চালায় পুলিশ। তবে সেখানে তখন তাকে পাওয়া যায়নি। পরবর্তীতে মধ্যরাত ১২টার দিকে একে খান এলাকার বাসা থেকে আকবরশাহ থানা পুলিশের একটি দল জসিমের স্ত্রী তাসলিমা বেগমকে গ্রেপ্তার করে। পরে তাকে ডবলমুরিং থানা পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। পরদিন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের একটি ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছিল।
নগরীর আকবর শাহ এলাকায় ২০২৩ সালের ২৬ জানুয়ারি বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী ও অর্ন্তবর্তী সরকারের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের নেতৃত্বে একটি দল নগরীর উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ডের লেকসিটি আবাসিক এলাকায় পাহাড় কাটা পরিদর্শনে যান। এরপর কালির ছড়া খাল ভরাটের এলাকায় গেলে তারা বাধার মুখে পড়েন। অভিযোগ আছে কাউন্সিলর জসীমের নেতৃত্বে তাদের বাধা দেওয়া হয়েছিল। প্রতিনিধিদলের গাড়ি আটকে রাখে, গাড়িতে ঢিল ছোড়ে ও বিভিন্নভাবে প্রাণনাশের হুমকি দেয়। আটকে রাখা সেই গাড়ি পুলিশ গিয়ে ছাড়িয়ে নেয়। এ ঘটনায় তখন কাউন্সিলর জসিমসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছিল। মামলায় জসিমকে ১ নম্বর আসামি হিসেবে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ।
জানা গেছে, চসিকের ২০১৫ সালের নির্বাচনে কাউন্সিলর হিসাবে জয়লাভ করেন জহুরুল আলম জসিম। এর আগে থেকেই ওই এলাকায় জসিম পাহাড় কেটে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা ভাসমান মানুষের মাঝে অল্প দামে প্লট বিক্রি ও ঝুঁিকপূর্ণ ভাবে কলোনী নির্মাণ করে বসবাস করতে দেন।
২০১৫ সালের ২৮ মে পাহাড় কাটার অভিযোগে কাউন্সিলর জসিমের বিরুদ্ধে মামলা করে পরিবেশ অধিদপ্তর। এ ছাড়া পাহাড় কাটার দায়ে ২০২১ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর কাউন্সিলর জসিমের স্ত্রী তাছলিমা বেগমকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করে অধিদপ্তর। ২০২০ সালের ১০ আগস্ট আকবরশাহ থানার লেকসিটি আবাসিক এলাকা সংলগ্ন পাহাড় কেটে স্থাপনা নির্মাণের অভিযোগে কাউন্সিলর জসিমের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছিল পরিবেশ অধিদপ্তর।