রাস্তায়-ঘরে পানিতে নাকাল চট্টগ্রাম। হাঁটু থেকে বুক সমান পানি উঠেছে বিভিন্ন স্থানে। বৃষ্টির সঙ্গে বজ্রপাতে বেড়েছে আতঙ্ক। বৃষ্টির কারণে পাহাড় ধসের আশঙ্কাও দেখা দিয়েছে। জলাবদ্ধতার কারণে চরম ভোগান্তিতে পড়তে দেখা গেছে সাধারণ মানুষকে। এছাড়া বিভিন্ন বাসা-বাড়ির নিচে পানি প্রবেশ করায় দুর্ভোগের সীমা ছিল না নগরবাসীর। অফিসগামী মানুষকে বেশি ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। সবার মনে একটাই ভাবনা -শহরের জলাবদ্ধতার সমস্যা যত দ্রুত সম্ভব দূর করা উচিত, তবে এটি কে করবে তা তারা জানেন না।
রিকশা ও গাড়ির চাকা অর্ধেকের বেশি ডুবে গেছে। বৃষ্টিতে অফিসগামী যাত্রীরা বিপাকে পড়েন। যারা অফিস বা কাজে যোগ দিতে বের হয়েছেন তাদের দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে। অনেক কর্মজীবী মানুষকে পানির মধ্যে প্যান্ট হাঁটু পর্যন্ত গুটিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। আবার অনেক মানুষকে পানি ডিঙিয়ে অফিসের পথে যাত্রা করতে দেখা গেছে। পরিবহনের জন্য মোড়ে মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে অনেককে। অনেকেই বেশি ভাড়া দিয়ে অফিসে গেছেন।
প্রাইভেটকার চালক রফিকের সঙ্গে আলাপ হয় লালখান বাজার ইস্পাহানির মোড়ে। তিনি আজাদীকে জানান, জলাবদ্ধতার কারণে রাস্তায় পানি জমে থাকায় গাড়ির ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে গেছে। লোকজনও না পাওয়ায় গাড়িও সরাতে পারছেন না। ফলে পড়েছেন এক মহাবিপদে। আবার সময় মতো অফিসে পৌঁছাতে না পারলে স্যারের কথা শুনতে হবে। একটু বৃষ্টি হলেই পানি জমে যাওয়া এই যন্ত্রণা আর ভালো লাগে না বলেও ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।
চট্টগ্রাম কলেজের সামনে কথা হয় রিকশা চালক বশির উল্লাহর সাথে। তিনি বলেন, দিনভর বৃষ্টি। অলিতে গলিতে পানি জমে গেছে। আমাদের পরিশ্রম বেড়ে গেছে। তাই ভাড়া বাড়তি নিচ্ছি। একদিকে বৃষ্টি অন্যদিকে রাস্তায় পানি, বেশি ভাড়া না দিলে কেন যাবো?
বহদ্দারহাট এলাকার বাসিন্দা মো. সোহেল বলেন, বাসার সামনের গলিতে হাঁটু পরিমাণ পানি। নিচুস্থানে এর চেয়ে অনেক বেশি পানি। গলি পার হলে বহদ্দারহাট-মুরাদপুর মূল সড়ক। ওই সড়কের অবস্থা আরও বেহাল। ওই সড়কের কিছু জায়গায় কোমর পরিমাণ পানি।
হাবিবুর রহমান নামের এক বেসরকারি চাকরিজীবী জলাবদ্ধতার মধ্যেই ছাতা মাথায় নিয়ে অফিসে যাওয়ার জন্য বের হয়েছেন। তিনি বলেন, রেয়াজউদ্দিন বাজার অফিসে যাব, কিন্তু গণপরিবহন কম, তাই হেঁটেই সামনের দিকে এগোতে শুরু করেছি। কিন্তু সড়কেও জলাবদ্ধতা, হাঁটাও যাচ্ছে না। জলাবদ্ধতার কারণে এর মধ্য দিয়ে যখন গণপরিবহন চলছে তখন ফুটপাতেও ঢেউ এসে পড়ছে, জামা-কাপড়ও ভিজে যাচ্ছে। কিন্তু অফিসে তো যেতে হবে, তাই এরমধ্যেই বাধ্য হয়ে যেতে হচ্ছে।
ষোলশহর এলাকার সিএনজি টেঙি চালক আলতাফ বলেন, দেখুন বৃষ্টিতে এই সময় এ অবস্থা। আর বর্ষার সময় তো রয়েই গেছে। প্রতিবছর জলাবদ্ধতার আগে মেয়র ও মন্ত্রীদের আশ্বাস পেয়ে থাকি। কিন্তু কখনও জলাবদ্ধতা সমস্যার সমাধান হয় না; বরং দিন দিন নদী থেকে সাগরে পরিণত হচ্ছে চট্টগ্রাম নগরী।
সুলতান আহমেদ নামে এক পথচারী বলেন, প্রতিবছরই বৃষ্টি হলে এমন জলাবদ্ধতা হয়। সাধারণ মানুষ পড়ে ভোগান্তিতে। কিন্তু এই জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর কোনো উদ্যোগ দেখা যায় না। যার মাশুল দিতে হয় আমাদের মতো সাধারণ মানুষদের। যারা আজ কাজে বের হয়েছেন তাদের প্রত্যেকে ভোগান্তিতে পড়েছেন। কোথাও হাঁটু পানি, কোথায় গণপরিবহন সংকট সব মিলিয়ে ভোগান্তি যেন সাধারণ মানুষের।