ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) বেশিরভাগ ক্ষেত্রে গবেষণা না করে একটি প্রতিবেদন তৈরি করে সেটিকে গবেষণা বলে চালিয়ে দেয় বলে মন্তব্য করেছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। একই সঙ্গে টিআইবি তথ্য সংগ্রহ ও তথ্য চুরি- দু’টি বিষয়কে গুলিয়ে ফেলেছে বলেও জানান তিনি। গতকাল বুধবার সচিবালয়ে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ‘বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ’ অ্যালবাম উদ্বোধন ও সমসাময়িক বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ মন্তব্য করেন। খবর বিডিনিউজের।
সম্প্রতি টিআইবি বক্তব্য দিয়েছে সরকার দুর্নীতিকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছে আর তা ঢাকতেই রোজিনা ইস্যু- এ বিষয়ে মতামত জানতে চাইলে তথ্যমন্ত্রী বলেন, প্রথমতো রোজিনার ঘটনাটি অনভিপ্রেত। এটা আমরা আগেও বলেছি এখনও একই কথা বলবো। কিন্তু দুর্নীতির তথ্য সংগ্রহ করার একটা নিয়ম আছে। তবে তথ্য সংগ্রহ আর তথ্য চুরি এক জিনিস নয়। ‘তথ্য সংগ্রহ করার জন্য যে কেউ যেকোনো অফিসে আবেদন করতে পারে। সেটি না পেলে তথ্য কমিশন আছে। তখন তথ্য কমিশনের মাধ্যমে আবেদন করা যায়। তখন তথ্য কমিশন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে তথ্য সংগ্রহের জন্য বলে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের যদি কোনো গাফিলতি হয়, অনেক সময় তথ্য কমিশন জরিমানা ছাড়াও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়। তথ্য কমিশন এ পর্যন্ত এক লাখ ২০ হাজার আবেদন নিষ্পত্তি করেছে।’
তিনি বলেন, দুর্নীতিসহ যে কোনো তথ্যের অবাধ প্রবাহ নিশ্চিত করতে শেখ হাসিনার সরকার তথ্য কমিশন গঠন করেছে। সেভাবে মানুষ তথ্য পাচ্ছেও। আমি মন্ত্রীর পদে থেকেও কোনো অফিসে গিয়ে বিনা অনুমতিতে কোনো গোপনীয় তথ্য নিয়ে নিলে আমি অপরাধী। সেক্ষেত্রে সেই অফিসের কর্তৃপক্ষ আমার বিরুদ্ধে যেকোনো আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারে। সে তথ্য কোনো রাষ্ট্রীয় গোপন নথি হলে সেই অপরাধটা আরও বড়। প্রত্যেক মন্ত্রীকে মন্ত্রী হিসেবে শপথের সঙ্গে রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা রক্ষার শপথ নিতে হয়। আমি টিআইবির বক্তব্যের সঙ্গে একমত নই।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, টিআইবির মতো সংগঠন থাকার দরকার আছে। তারা স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য কাজ করবে এটিই স্বাভাবিক, আমরাও চাই সেটি। টিআইবি বিভিন্ন সময় যে গবেষণার কথা বলে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে গবেষণা না করে একটি রিপোর্ট তৈরি করে, সেটিকে গবেষণা বলে চালিয়ে দেয়, এটি সমীচীন নয়। যেসব দেশ থেকে টিআইবি ফান্ড পায় সেসব নিয়ে তাদের কখনো কিছু বলতে দেখিনি। বাংলাদেশ ও দরিদ্র দেশগুলোর নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
বাংলাদেশ টিকার জন্য একটি সূত্রের ওপর নির্ভর ছিল- টিআইবির এ ধরনের বক্তব্য নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, মনে রাখতে হবে টিকা দেওয়া শুরু করা প্রথম সারি দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ একটি। বাংলাদেশ কখনো একটি সূত্রের ওপর নির্ভর করেনি। বাংলাদেশ সব সূত্রের সঙ্গে যেখান থেকে টিকা পাওয়ার সম্ভাবনা ছিল সবার সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। কিন্তু যখন টিকা বাজারে এলো সব দেশ নিজেদের প্রয়োজনীয়তার কথা মাথায় রেখেছে। সবাই এগিয়ে আসেনি টিকা দেওয়ার জন্য।
‘বাংলাদেশ অনেকের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও সেরাম ইনস্টিটিউট প্রথমে এগিয়ে আসে। বাংলাদেশ সিরামের সঙ্গে চুক্তি করেছে। কিন্তু ভারতে করোনা পরিস্থিতি অবনতি হওয়ার কারণে ভারত সরকারের নানা বিধি-নিষেধের কারণে তারা পরবর্তীসময়ে চুক্তি অনুযায়ী টিকা সরবরাহ করতে পারেনি। কিন্তু বাংলাদেশ অন্য অনেকের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার কারণেই চীন থেকে টিকা এসেছে, অন্য দেশ থেকে টিকা আসছে। হঠাৎ করে যোগাযোগ করলে এতো দ্রুত টিকা আসতো না।
সচিবালয়ে মাস্ক পরার বিষয় নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ব্যক্তিগত সুরক্ষা নিজের ও পরিবারের সুরক্ষার জন্য সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মানা দরকার। সরকার বারবার বলছে এটি বলার পরও অনেকেই মানছেন না সেটা দুঃখজনক। সচিবালয়ে কে কতোটুকু স্বাস্থ্যবিধি মানি সেটা আপনারা নিজেরাই জানেন।
এরআগে এক হাজার ৩০০ ছবি নিয়ে ‘ছবির ভাষায় মহানায়ক বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ’ অ্যালবামের মোড়ক উন্মোচন করেন তথ্যমন্ত্রী। বর্ণ গ্রুপের চেয়ারম্যান আলহামরা নাসরীন হোসেন লুইজার সম্পাদনায় এই অ্যালবাম প্রকাশিত হয়েছে। এসময় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী মনোরঞ্জন ঘোষালও ছিলেন।