সাতকানিয়ার সোনাকানিয়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. সেলিম উদ্দিন চৌধুরীর বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। একই দিন রাতে তার দুই সমর্থকের ঘরবাড়িতেও হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করা হয়।
গতকাল শুক্রবার রাতে উপজেলার সোনাকানিয়া ইউনিয়নের মির্জাখীল চৌধুরীপাড়া ও মির্জাখীল মাঝরপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। মো. সেলিম উদ্দিন চৌধুরী সাতকানিয়া উপজেলা যুবলীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ছিলেন। তিনি মোটরসাইকেল প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নির্বাচন করায় তাকে দল থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি সাতকানিয়া উপজেলার ১৬টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সোনাকানিয়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলীয় নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মো. জসিম উদ্দিনের বেশকিছু কর্মী সমর্থক গতকাল শুক্রবার রাত ১২টার দিকে মির্জাখীল বাংলাবাজার এলাকায় অবস্থান নেয়।
এ সময় রাত সাড়ে ১২টার দিকে মুখোশ পরিহিত এক ব্যক্তি স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. সেলিম উদ্দিন চৌধুরীর বাড়ির দেয়াল টপকে ভেতরে ঢোকেন। পরে মুখোশ পরিহিত ব্যক্তিটি উঠোনের দরজা খুলে দিলে সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কুতুব উদ্দিন চৌধুরীর নেতৃত্বে ৩৫-৪০ জনের একটি দল লাঠিসোটা হাতে নিয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী সেলিম উদ্দিন চৌধুরীর বাড়ির উঠোনের নির্বাচনী অফিস, ঘরের কাঁচের জানালা, সিসি ক্যামেরা ও চেয়ার টেবিল ভাঙচুর করে।
তারা চলে যাওয়ার সময় নির্বাচনী পোস্টারগুলো ছিঁড়ে পাশের পুকুরে ফেলে দেয় এবং সেলিম উদ্দিন চৌধুরীর গাড়িচালক মো. সাজ্জাদ হোসেন(২৭) ও কর্মী হারুনুর রশিদকে(৫৫) মারধর করে।
হামলাকারীরা চলে যাওয়ার সময় সেলিম উদ্দিন চৌধুরীকে প্রাণনাশের হুমকিও দেয়। এর আগে হামলাকারীরা মির্জাখীলের মাঝরপাড়া এলাকায় (স্বতন্ত্র) প্রার্থী সেলিম উদ্দিন চৌধুরীর সমর্থক মো. সাগর ও সাদ্দাম হোসেনের বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে বলে জানা যায়।
এ ব্যাপারে (স্বতন্ত্র) বিদ্রোহী প্রার্থী মো. সেলিম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, “গতকাল শুক্রবার আমি পুরোদিন প্রচার-প্রচারণায় ব্যস্ত ছিলাম। নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা শেষ করে রাত সাড়ে ১২টার দিকে বাড়িতে ঘুমাতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। এমন সময় আমার বাড়ির গেটের বাইরে কিছু লোকজনের আওয়াজ শুনতে পাই। এর কিছুক্ষণ পর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কুতুব উদ্দিন চৌধুরীর নেতৃত্বে ৪০-৫০ জনের একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী অস্ত্রশস্ত্র ও লাঠিসোটা হাতে নিয়ে আমার বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর চালায়। তারা ১৫ থেকে ২০ মিনিট তাণ্ডব চালিয়ে আমার নির্বাচনী অফিস, ঘরের জানালা, সিসি ক্যামেরা, চেয়ার টেবিল ও আমার নির্বাচনী পোস্টারগুলো ছিঁড়ে পাশের পুকুরে ফেলে দেয় এবং আমাকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে চলে যায়।”
এ ব্যাপারে সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কুতুব উদ্দিন চৌধুরী বলেন, “বিদ্রোহী প্রার্থী সেলিম উদ্দিন ও আমার বাড়ি একই এলাকায়। গতকাল শুক্রবার দুপুরের দিকে তিনি তার একটি নির্বাচনী মিটিংয়ে কোনো কারণ ছাড়াই আমার বিরুদ্ধে উস্কানিমূলক কথাবার্তা ও শ্লোগান দিয়েছে। তার এসব কথাবার্তা শুনে নেতাকর্মীরা বিক্ষুব্দ হয়ে তার ঘরের সীমানা প্রাচীরের দরজা খুলে ভিতরে প্রবেশ করে। এই সংবাদ শুনে আমি আমার বাড়ি থেকে বের হয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে উত্তেজিত নেতাকর্মীদের শান্ত করে সেখান থেকে বের করে নিয়ে যাই। তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক লাইভে এসে সস্তা জনপ্রিয়তা পাওয়ার জন্য মিথ্যা কথা বলে যাচ্ছেন। আমি আমার নৌকার প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছি। তার প্রচারণা তিনি চালাচ্ছেন। কিন্তু এই ছোট বয়সে মিথ্যা কথা বলে তিনি জনগণের সস্তা সহানুভূতি পাওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন। দলের সাধারণ সম্পাদক হিসাবে আমি নৌকার পক্ষে কাজ করছি।”
সাতকানিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) আবদুল জলিল বলেন, “সোনাকানিয়ায় একজন স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থীর ঘরে হামলা হয়েছে বলে শুনেছি। তবে এ বিষয়ে এখনো কেউ কোনো অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
