সাতকানিয়ার কাঞ্চনায় ভোট কেন্দ্রের বাইরে রাস্তার পাশ থেকে নৌকায় সিল মারা ব্যালট পেপারের ১টি বই উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল শনিবার সকালে কাঞ্চনায় কামাল উদ্দিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের বাইরে রাস্তার পাশে এক পথচারী ব্যালট পেপারের এ বইটি পান। রাস্তার পাশে খুঁড়িয়ে পাওয়া ব্যালট পেপার বইটিতে ০০০৪৭০১ থেকে ০০০৪৮০০ পর্যন্ত ব্যালট রয়েছে। কেন্দ্রের বাইরে সিল মারা ব্যালট পেপার পাওয়ার পর পুরো এলাকায় তোলপাড় চলছে। তবে এ ব্যাপরে নির্বাচন অফিস এবং পুলিশের কাছে কোনো তথ্য নাই।
উল্লেখ্য, গত সোমবার গোলাগুলি, কেন্দ্র দখল, জোরপূর্বক ব্যালটে সিল মারাসহ ব্যাপক সহিংসতার মধ্যে দিয়ে সাতকানিয়ার ১৬টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ব্যালট পেপারের খুঁড়িয়ে পাওয়া পথচারী বলেন, সকালে আমি রাস্তা দিয়ে হেটে যাচ্ছিলাম। এ সময় রাস্তার পাশে ব্যালট পেপারের মতো খোলা একটি বই দেখতে পাই। তখন বইটি হাতে তুলে নেয়ার পর দেখি নৌকায় সিল মারা ব্যালট পেপারের একটি বই। বিষয়টি আমি তাৎক্ষণিকভাবে স্থানীয় লোকজনকে দেখায়। পরে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. ছালামের কাছে দিয়ে দিই।
কাঞ্চনা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী মোহাম্মদ ছালাম বলেন, উদ্ধারকৃত নৌকায় সিল মারা ব্যালট পেপারের বইটি ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে মামলা দায়ের করা হবে।
তিনি আরো জানান, ভোটগ্রহণের দিন কামাল উদ্দিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও উত্তর কাঞ্চনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ বেশ কয়েকটি কেন্দ্রে নৌকার প্রার্থী রমজান আলীর কর্মী-সমর্থকরা গুলি ছুঁড়ে আতংক সৃষ্টি করে ভোটারদের তাড়িয়ে দেয়। এ সময় তারা জোরপূর্বকভাবে ব্যালট পেপারে সিল মারে। উত্তর কাঞ্চনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র থেকেও ব্যালট পেপারের ৪-৫টি বই ছিনিয়ে নেয়। পরবর্তীতে ওই কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়। নৌকার প্রার্থী রমজান আলীর লোকজন তাড়াহুড়োর মধ্যে ভুলে হয়তো বইটি বাইরে ফেলে গেছে। নৌকার প্রার্থী রমজান আলীর লোকজন যে, জোরপূর্বক কেন্দ্র দখল করে ব্যালট পেপারে সিল মেরেছে তার বড় প্রমান হলো রাস্তার পাশে খুঁড়িয়ে পাওয়া এ ব্যালট পেপার বই।
অন্যদিকে, রাস্তার পাশ থেকে নৌকায় সিল মারা ব্যালট পেপারের বই উদ্ধার সম্পর্কে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী রমজান আলী বলেন, এগুলো ফালতু কথা। কোথাও কোনো ধরনের ব্যালট পেপারের বই পাওয়া যায়নি। এগুলো আমি বিশ্বাস করি না।
উত্তর কাঞ্চনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার সাতকানিয়া আদর্শ মহিলা কলেজের প্রভাষক তামজিদুল ইসলাম বলেন, ভোটের দিন প্রথমে ৮টা ৪৫ মিনিটের দিকে কেন্দ্রে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। এ সময় একদল লোক ব্যালট পেপার ছিনিয়ে নিয়ে জোরপূূর্বক সিল মারার চেষ্টা করলে আমরা তাৎক্ষণিকভাবে ভোটগ্রহণ বন্ধ করে দিই। আধ ঘণ্টার মত বন্ধ থাকার পর রিটার্নিং অফিসারের সিদ্ধান্ত মতো ভোটগ্রহণ পুনরায় চালু করি। পরে দুপুর ১২ টার দিকে কেন্দ্রে প্রচুর গোলাগুলি হয়। এক পর্যায়ে একদল লোক কেন্দ্রের ভেতর থেকে ব্যালট পেপারের ২টি বই এবং সহকারী প্রিসাইডিং অফিসারদের কাছে থাকা ব্যালট পেপারগুলো ছিনিয়ে নেয়। এরপর আমি রিটার্নিং অফিসারের সাথে কথা বলে ভোটগ্রহণ স্থগিত করে দিই। পরে আমরা মালামাল নিয়ে চলে আসি। ওই কেন্দ্রে আর ভোটগ্রহণ হয়নি। অন্য কেন্দ্রের পাশে পাওয়া ব্যালট পেপারের বইটি আমার কেন্দ্র থেকে নেয়া ব্যালট পেপার কিনা সেটা আমি বলতে পারবো না। তবে আমার কেন্দ্র থেকে নেয়া ব্যালট পেপার বইয়ের নম্বর ও ব্যালট নম্বর রিটার্নিং অফিসারের কাছে জমা দেয়া কাগজপত্রের মধ্যে থাকবে।
এদিকে, কামাল উদ্দিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমার কেন্দ্র থেকে কোনো ব্যালট পেপার ছিনতাই হয়নি।
সাতকানিয়া উপজেলা নির্র্বাচন কর্মকর্তা আবু তালেব মন্ডল বলেন, কাঞ্চনা ইউনিয়নের উত্তর কাঞ্চনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র দূস্কৃতিকারীরা অতর্কিতভাবে হামলা করে মার্কিং সিল ও ব্যালট পেপার ছিনিয়ে নিয়েছিল। ফলে আমরা ওই কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত করে দিই।
চট্টগ্রাম জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর হোসাইন বলেন, ভোট কেন্দ্রের বাইরে রাস্তার পাশ থেকে ব্যালট পেপারের বই উদ্ধারের বিষয়ে আমার কাছে কোনো ধরনের তথ্য নাই।
সাতকানিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ আবদুল জলিল বলেন, ব্যালট পেপারের বই উদ্ধার সম্পর্কিত কোনো তথ্য এ মুহূর্তে আমার কাছে নাই।