সাতকানিয়ায় ত্রাণ না দেয়ায় এবং পূর্ব বিরোধের জের ধরে এক ইউপি সদস্যের ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে। নিহতের নাম মো. জসিম উদ্দীন (৩৫)।
গত শনিবার দিবাগত রাতে উপজেলার কাঞ্চনা এলাকায় ধারালো অস্ত্রের আঘাতে গুরুতর আহত হন জসিম এবং চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ মঙ্গলবার (৪ মে) বিকেলে মৃত্যুবরণ করেন।
নিহত জসিম উদ্দীন উপজেলার কাঞ্চনা ইউনিয়ন পরিষদের ১নং ওয়ার্ডের সদস্য মো. ইসহাকের ছেলে।
এলাকাবাসী জানায়, উত্তর কাঞ্চনা ছৈয়দপাড়ার বাসিন্দা ও ইউপি সদস্য মো. ইসহাকের ছেলে জসিম উদ্দীনের সাথে একই এলাকার খলিলুর রহমানের বিরোধ চলে আসছিল।
এদিকে, গত ২৫ এপ্রিল কাঞ্চনা ইউপি চেয়ারম্যান রমজান আলী ব্যক্তিগত অর্থায়নে এলাকায় ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করেন। এসময় ইউপি সদস্য মো. ইসহাককে ৭০ প্যাকেট ত্রাণ সামগ্রী দেন। ইউপি সদস্য ইসহাক ওইদিন সন্ধ্যায় এসব ত্রাণ সামগ্রী এলাকার গরীব লোকদের মাঝে বিতরণ করেন।
এসময় একই এলাকার খলিলুর রহমান ও মো. লিটন ত্রাণ সামগ্রী না পেয়ে ইউপি চেয়ারম্যান রমজান আলী এবং সদস্য মো. ইসহাকের নাম ধরে গালিগালাজ করেন।
ফলে পরেরদিন সন্ধ্যায় ইউপি সদস্য ইসহাক খলিলুর রহমানকে ঢেকে চেয়ারম্যান রমজান আলী এবং তাকে গালিগালাজের কারণ জানতে চান। এছাড়াও বিষয়টি তার অভিভাবকদের জানান। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে খলিলুর রহমান ইউপি সদস্য মো. ইসহাক এবং তার পরিবারের সদস্যদেরকে দেখে নেয়ার হুমকি দেন।
এদিকে, গত শনিবার রাত ৩টার দিকে ইউপি সদস্যের ছেলে মো. জসিম উদ্দীন লোহাগাড়ায় গরুর মাংস কিনতে যাওয়ার জন্য বাড়ির কেয়ারটেকার মো. সালাহ উদ্দীনকে সাথে নিয়ে ঘর থেকে বের হন। যখন তারা দু’জন স্থানীয় সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালক মো. নয়নকে ডাকতে যাচ্ছিলেন তখন খলিলুর রহমান ও মো. লিটনের নেতৃত্বে ৮/১০ জনের একটি দল তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাথাড়ি আঘাত করে।
এতে গুরুতর আহত হয়ে জসিম মাটিতে লুটিয়ে পড়লে কেয়ারটেকার সালাহ উদ্দীনের চিৎকার চেঁচামেচিতে আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসলে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়।
পরে জসিমকে উদ্ধার করে প্রথমে সাতকানিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং পরে চট্টগ্রাম নগরীর পার্কভিউ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ বিকেলে জসিম মারা যান।
কাঞ্চনা ইউপি চেয়ারম্যান রমজান আলী বলেন, “খলিল এবং লিটন দু’জনই মাদকাসক্ত। ইউপি সদস্য ইসহাকের ছেলে জসিম তাদের মাদক সেবনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতো। তা নিয়ে তাদের মধ্যে বিরোধ ছিল। এছাড়াও অতি সম্প্রতি আমার ব্যক্তিগত অর্থায়নে বিতরণকৃত ত্রাণ সামগ্রী না পেয়ে ক্ষিপ্ত হয়ে খলিল এবং লিটন আমাকে এবং ইউপি সদস্য ইসহাককে গালিগালাজ করে। বিষয়টি নিয়ে ইউপি সদস্য মো. ইসহাক খলিলকে ঢেকে নিয়ে গালিগালাজ করার কারণ জানতে চান এবং ভবিষ্যতে এসব কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকতে বলেন। এতেই ক্ষিপ্ত হয়ে খলিল এবং লিটনের নেতৃত্বে জসিমের ওপর হামলা চালানো হয়। এসময় তাদের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে আহত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জসিমের মৃত্যু হয়।”
সাতকানিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আনোয়ার হোসেন জানান, জসিম এবং খলিল দু’জনই মাংস বিক্রেতা। তাদের মধ্যে আগে থেকে বিরোধ ছিল। অতি সম্প্রতি এলাকায় বিতরণকৃত ত্রাণ না পেয়ে খলিল এবং লিটন ইউপি সদস্য ইসহাকের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে গালিগালাজ করে। পরবর্তীতে ইউপি সদস্য ইসহাক খলিলকে ঢেকে কিছুটা শাসিয়ে দেন। এতে আরো বেশি ক্ষুদ্ধ হয়ে খলিল তার লোকজন নিয়ে জসিমের ওপর হামলা চালায়। তাদের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে জসিম গুরুতর আহত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ মারা যায়।
জসিমের ওপর হামলার ঘটনায় তার বাবা ইউপি সদস্য মো. ইসহাক বাদী হয়ে গত সোমবার একটি মামলা দায়ের করেছেন। পুলিশ আসামীদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।