সাতকানিয়ায় বর্তমান ও সাবেক দুই ইউপি সদস্যের বিরোধের জেরে এক আওয়ামী লীগ নেতাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। তার নাম মোঃ বেলাল উদ্দিন (৪৮)। তিনি উপজেলার খাগরিয়া ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। গত বুধবার রাত সাড়ে ১০ টার দিকে খাগরিয়ার তৈয়ারপাড়া বটতল এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এতে জড়িত থাকার অভিযোগে জাহেদ নামে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ঘটনাস্থল থেকে একটি এলজি উদ্ধার করা হয়েছে। এদিকে, বেলালের মৃত্যুর খবরে লোকজন প্রতিপক্ষের বসতঘর ও দোকানপাট ভাঙচুর করেছে। খবর পেয়ে সাতকানিয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাকারিয়া রহমান জিকু ও থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আনোয়ার হোসেন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে খাগরিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ৪নং ওয়ার্ডের সদস্য মোঃ লিয়াকত এবং সাবেক সদস্য আবদুস সালামের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল। দুই গ্রুপের মধ্যে ইতিপূর্বে একাধিকবার রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষও হয়েছে। নিহত বেলাল আবদুস সালামের অনুসারী ছিলেন। তিনি খাগরিয়া ইউনিয়নের মোহাম্মদ খালী গ্রামের পশ্চিম পাড়ার মৃত আবদুল করিমের ছেলে। গত দেড় বছর আগে তিনি একই ওয়ার্ডের তৈয়ারপাড়া এলাকায় দ্বিতীয় বিয়ে করেন। তার দ্বিতীয় স্ত্রী শ্বশুর বাড়িতেই থাকেন। ঘটনার দিন রাত ১০ টার দিকে বেলাল তৈয়ারপাড়ায় শ্বশুর বাড়িতে গেলে বর্তমান ইউপি সদস্য মোঃ লিয়াকতের অনুসারী দেলোয়ার, সাদেক, খোকন ও শাহজাহানের নেতৃত্বে ২৫-৩০ জনের দল তার শ্বশুর বাড়ি ঘেরাও করে তাকে জোরপূর্বক তুলে পার্শ্ববর্তী বটতল এলাকায় নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে লোহার রড় ও হকিস্টিক দিয়ে বেধড়ক পিটিয়ে গুরুতর আহত করে। খবর পেয়ে আবদুস সালাম গ্রুপের লোকজন এগিয়ে আসলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে ফেলে পালিয়ে যায়। পরে তারা বেলালকে উদ্ধার করে দোহাজারী স্বাস্থ্য কমপ্লেঙে যান। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে চমেক হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এদিকে বেলালের মৃত্যুর খবরে আবদুস সালাম গ্রুপের লোকজন লিয়াকত গ্রুপের বসত ঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর চালায়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
দোহাজারী স্বাস্থ্য কমপ্লেঙের ডাক্তার মোঃ ইসহাক জানান, গুরুতর আহত বেলালের দুই হাত ভাঙা এবং দুই পা থেতলানো ছিল। মুখ দিয়ে রক্ত ঝরছিল। দেখে মনে হয়েছে মাথায়ও খুব বেশি আঘাত ছিল। আমরা প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাকে চমেক হাসপাতালে প্রেরণ করি।
বেলাল উদ্দিনের বড় ছেলে চট্টগ্রাম এম ই এস কলেজের ছাত্র মেহেদী হাসান হিরু বলেন, ‘লিয়াকত ও সালামের মধ্যে চলমান বিরোধ মীমাংসা করে দিতে মোহাম্মদ খালী আবদুল মোতালেব চেয়ারম্যানের বাড়ি এলাকার দেলোয়ার আমার বাবাকে ফোন করে ডেকে নিয়ে যান। তারা ফাঁদ পেতে আমার বাবাকে খুন করেছে। আমি আমার বাবার হত্যাকারীদের ফাঁসি চাই।’
নিহত বেলালের দ্বিতীয় স্ত্রী রোজি আকতার বলেন, ‘বেলাল রাত ১০ টার দিকে বাড়িতে আসার কিছুক্ষণ পর ২৫-৩০ জন লোক এসে বাড়ি ঘেরাও করে ফেলে এবং গালাগাল করতে থাকে। এক পর্যায়ে তারা বেলালকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে যায়। পরে বটতলে নিয়ে গিয়ে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে তাকে হত্যা করে। আমি বেলালকে বাঁচানোর চেষ্টা করলে তারা আমাকেও মারধর করে। আমি আমার স্বামী হত্যার বিচার চাই।’
এ বিষয়ে সাবেক ইউপি সদস্য আবদুস সালাম বলেন, লিয়াকত এবং তার পক্ষের লোকজন বিগত দুই মাস আগেও বেলালকে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করেছিল। তারা পূর্বের বিরোধ মীমাংসার কথা বলে বেলালকে ফোন করে ডেকে নিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেছে বলে জেনেছি। ইউপি সদস্য লিয়াকত, দেলোয়ার, খোকন, শাহজাহান ও সাদেকের নেতৃত্বে ঘটনাটি ঘটেছে বলে দাবি করেন সালাম।
বর্তমান ইউপি সদস্য মোঃ লিয়াকত বলেন, ‘বেলাল তৈয়ারপাড়ায় তার দ্বিতীয় স্ত্রীর বাড়িতে যাওয়ার পর স্থানীয় লোকজন মারধর করেছে বলে শুনেছি। এ ঘটনার সাথে আমার কোনো ধরণের সম্পৃক্ততা নেই। কিছু লোক বেলাল হত্যার ঘটনায় আমাকে জড়ানোর ষড়যন্ত্র করছে।’
খাগরিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ আজগর চৌধুরী সুজাও এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, সামাজিক ও রাজনৈতিক বিরোধের জের ধরে বেলালকে হত্যা করা হয়েছে বলে জানান।
সাতকানিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘স্থানীয় ইউপি সদস্য লিয়াকত এবং সালামের মধ্যে এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিরোধের জের ধরেই বেলাল হত্যার ঘটনা ঘটেছে। জাহেদ নামে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঘটনাস্থলে একটি এলজিও পাওয়া গেছে। এ ব্যাপারে হত্যা মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
শোক প্রকাশ
এদিকে আওয়ামী লীগ নেতা মোঃ বেলাল উদ্দিনের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোসলেম উদ্দিন আহমেদ এমপি, সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, সাতকানিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ মোতালেব সিআইপি, সাধারণ সম্পাদক কুতুব উদ্দিন চৌধুরী।
