সাতকানিয়ায় কেন এ ঘটনা

পুকুর সেচে মিলল না অস্ত্র নিহত দুজনকে জামায়াতের কর্মী দাবি

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ৫ মার্চ, ২০২৫ at ১০:০৩ পূর্বাহ্ণ

সাতকানিয়ার এওচিয়া ছনখোলা এলাকায় গণপিটুনিতে নিহত নেজাম উদ্দীন (৪৫) ও মোহাম্মদ ছালেকের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। ময়না তদন্ত শেষে গতকাল মঙ্গলবার রাত ৭টার দিকে স্থানীয় আনেয়ারুল উলুম আলিম মাদরাসা মাঠে নামাজে জানাজা শেষে তাদের পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। নিহত নেজাম উপজেলার কাঞ্চনা ইউনিয়নের মধ্যম কাঞ্চনা এলাকার মাহমুদুল হকের ছেলে এবং ছালেক একই ইউনিয়নের গুরগুরি এলাকার আবদুর রহমানের ছেলে। এদিকে জামায়াতে ইসলামী কাঞ্চনা ইউনিয়নের সেক্রেটারি জায়েদ হোছেন সাংবাদিকদের জানান, নিহত ব্যক্তিরা জামায়াতের সক্রিয় কর্মী ছিলেন। একটি সালিস বৈঠকের কথা বলে তাদের এওচিয়া এলাকায় ডেকে নিয়ে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। মৃত্যু নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত দুজনের মাথায় পর্যায়ক্রমে আঘাত করা হয়।

ইউনিয়ন শাখার সেক্রেটারি নিহত দুজনকে জামায়াতের সক্রিয় কর্মী দাবি করলেও উপজেলা আমির মাওলানা কামাল উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, নিহত ব্যক্তিরা জামায়াতের তালিকাভুক্ত কোনো কর্মী নন। তবে সাতকানিয়ালোহাগাড়ায় যেহেতু জামায়াতের জনসমর্থন বেশি, সে হিসেবে হয়তো তারাও জামায়াতকে ভালোবাসতেন। এ ঘটনা কি পরিকল্পিত নাকি এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ঘটেছে, তা প্রশাসনকে খুঁজে বের করার দাবি জানান তিনি।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে নেজাম উদ্দিনের সঙ্গে স্থানীয় আরেকটি পক্ষের বিরোধ ছিল। সম্প্রতি এওচিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য নজরুল ইসলামের মাছের খামার ও ইটভাটায় লুটের ঘটনায় নেজাম উদ্দিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনায় নজরুলের স্ত্রী জেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে লিখিত অভিযোগও করেছিলেন।

ঘটনার পর সাতকানিয়া থানা পুলিশ, সেনাবাহিনীর স্থানীয় একটি টিম এবং জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) একটি টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। গতকাল বিকালে অস্ত্রের সন্ধানে পুলিশ ঘটনাস্থলের পার্শ্ববর্তী একটি পুকুরে সেচ করেও কিছু পায়নি।

এদিকে এ ঘটনা নিয়ে বিবৃতি দিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। বিবৃতিতে সাতকানিয়া উপজেলা জামায়াতের আমির, সেক্রেটারি, এওচিয়া ও কাঞ্চনা জামায়াতের আমির, সেক্রেটারি মাওলানা কামাল উদ্দিন, মুহাম্মদ তারেক হোছাইন, আবু বক্কর, ফারুক হোসাইন, মাওলানা আবু তাহের, জায়েদ হোসেন জানান, গত সোমবার রাতের ঘটনাটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। এওচিয়া ইউনিয়নের ছনখোলা গ্রামটি বহু আগে থেকেই সন্ত্রাস কবলিত এলাকা। এওচিয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম প্রকাশ মানিক চেয়ারম্যান ছনখোলা গ্রামের পাহাড়, পাহাড়ি গাছ ও ইটভাটা নিয়ন্ত্রণে নিতে একাধিকবার সন্ত্রাসী হামলা ও হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। এলাকার মানুষ তার অত্যাচার নিপীড়নে অতিষ্ঠ হয়ে তাকে বয়কট করে। তৎকালীন আওয়ামী সরকার ও প্রশাসনের সহযোগিতার কারণে তার বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করতে পারেনি। ৫ আগস্টের পর সে এলাকা ছেড়ে আত্মগোপন করলেও তার বাহিনী এখনো থেকে যায়। তার ভাই হারুন ও মমতাজের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে এই সন্ত্রাসীগণ এখনো নানা অপকর্মে জড়িত। গত রাতে পরিকল্পিতভাবে ব্যবসায়ী নেজাম উদ্দিন ও আবু ছালেককে বিচারের কথা বলে ডেকে এনে মাইকে ডাকাত আখ্যা দিয়ে গণপিটুনির নামে চেয়ারম্যান মানিকের নির্দেশে তার ভাইদের পরিকল্পনায় কুপিয়ে দুজনকে হত্যা করা হয়। অবিলম্বে চিহ্নিত খুনিদের গ্রেপ্তার, ঘটনার গডফাদারদের বিরুদ্ধে মামলা ও বিচারের মাধ্যমে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত না করে আসল হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান নেতৃবৃন্দ।

স্থানীয়রা জানান, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় নেজাম উদ্দিন এলাকায় আসতেন না। গত বছরের ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর তিনি এলাকায় ফেরেন। সোমবার রাত সাড়ে ৯টা থেকে ১০টার মধ্যে ৪ থেকে ৫টি সিএনজি টেঙিতে নেজামসহ একদল যুবক ছনখোলা পশ্চিমপাড়া এলাকায় যান। সেখানে তাদের দেখে মসজিদের মাইকে এলাকায় ডাকাত পড়েছে বলে ঘোষণা দেওয়া হয়। ঘোষণা শুনে এলাকাবাসী চতুর্দিক থেকে জড়ো হয়। সেখানে একপর্যায়ে গণপিটুনিতে নেজাম ও ছালেক নিহত হন। গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন স্থানীয় কয়েকজন। গুলিবিদ্ধ আহত ব্যক্তিরা হলেন ওবায়দুল হক (২২), নাসির উদ্দিন (৩৮), আব্বাস উদ্দিন (৩৮) ও মো. মামুনুর রশিদ (৪৫)। আহতরা বর্তমানে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

সাতকানিয়া থানার ওসি মো. জাহেদুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ঘটনাস্থল থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, আটটি গুলির খোসা ও একটি সিএনজি টেঙি জব্দ করেছে পুলিশ। ঘটনার রহস্য উদঘাটনে পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধনতুন উপদেষ্টা সি আর আবরার, পাচ্ছেন শিক্ষার দায়িত্ব
পরবর্তী নিবন্ধসময় যত গড়াচ্ছিল আন্দোলন অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠছিল