চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) শিক্ষার্থীদের আবাসিক হল নিয়ে নানা অভিযোগ দীর্ঘদিনের। খাবারের নিম্নমান, পানি ও ওয়াইফাইসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত। এরমধ্যে গত প্রায় সাত বছর ধরে হচ্ছে না মেধাভিত্তিক সিট বরাদ্দ। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সর্বশেষ হল বরাদ্দ দিয়েছে ২০১৭ সালের জুন মাসে। দফায় দফায় হল বরাদ্দের ঘোষণা দিয়েও ছাত্রলীগের বিভিন্ন গ্রুপ–উপগ্রুপের চাপের মুখে তা বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হয়ে উঠেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। হল বরাদ্দ না পাওয়ার বিষয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাঝে ক্ষোভ থাকলেও নিজেদের নিরাপত্তার হুমকি মনে করে প্রকাশ্যে কথা বলতে চান না তারা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, সাধারণ শিক্ষার্থীরা হলে উঠার সুযোগ নেই। ছাত্রলীগের অনুসারী হলেই হলে উঠা যায়। তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় কি ছাত্রলীগের কাছে জিম্মি? ছাত্রলীগের এজেণ্ডা বাস্তবায়ন করে? এটা প্রশাসনের ব্যর্থতা। চবির সাধারণ শিক্ষার্থীরা প্রতিটি জায়গায় জায়গায় বৈষম্যের শিকার হচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য অনুসারে জানা যায়, চবির শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২৭ হাজার ৫৫০ জন। এর মধ্যে ছাত্র ১৭ হাজার ৪৯৪ জন আর ছাত্রী ১০ হাজার ৪৬ জন। হল আছে সর্বমোট ১৪টি। ১৪টি হলের মধ্যে দুটির নির্মাণকাজ শেষ হলেও এখনো শিক্ষার্থী উঠানো হয়নি। বাকি ১২টি হলের মধ্যে ৭টি ছাত্রদের, পাঁচটি ছাত্রীদের। এসব হলে মোট আসন ৬ হাজার ৩১৫টি, যা মোট শিক্ষার্থীর মাত্র ১৯ শতাংশ। চলতি বছর ২৭ অক্টোবর উপাচার্যের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে ভার্চুয়ালি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বিশ্ববিদ্যালয়ের নবনির্মিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও অতীশ দীপঙ্কর হলের শুভ উদ্বোধন করেন। ৩০ অক্টোবর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে আসন বরাদ্দের বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে হল কর্তৃপক্ষ। হলটির ৭৫০ আসনের বিপরীতে আবেদন জমা পড়েছে প্রায় হাজারের অধিক। এ বিষয়ে হলটির প্রভোস্ট প্রফেসর ড. সজীব কুমার ঘোষ বলেন, আমরা ডিসেম্বরের মধ্যে হল বরাদ্দ দেওয়ার চেষ্টা করবো। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী প্রথম বর্ষ থেকে মাস্টার্স সকল বর্ষের শিক্ষার্থীরা এতে আসন বরাদ্দ পাবেন।
তবে বিশ্ববিদ্যালয় হল প্রশাসন বার বার সিট বরাদ্দের বিজ্ঞপ্তি দিলেও তা বাস্তবায়ন করেনি হল কর্তৃপক্ষ। প্রতিবার আবেদনের জন্য শিক্ষার্থীদের গুনতে হয় একশত টাকা। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আলাউদ্দিন বলেন, গত ২ বছর ধরে হলে উঠার চেষ্টা করেও লাভ হয়নি। প্রতিটি হল ছাত্রলীগের দখলে বছরের পর বছর ধরে প্রশাসন হল বরাদ্দ দিচ্ছে না, এটা প্রশাসনের ব্যর্থতা। আমরা দ্রুত মেধাভিত্তিক হল বরাদ্দ চাই।
আলাওল হলের প্রভোস্ট প্রফেসর ড. ফরিদুল আলম বলেন, এগুলো নিয়ে আমরা বেশ কয়েকবার আলোচনা করেছি। আমরা সিট বরাদ্দ দিতে পারছি না, যা আমাদের ব্যর্থতা। মাঝে মাঝে আমাকেও অপরাধী মনে হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন থেকে নানানভাবে উদ্যোগ নেওয়া হলেও কিন্তু পলিটিক্যাল কারণে আমরা সেটি বাস্তবায়ন করতে পারিনি। তবে আমাদের প্রচেষ্টার কোনো ত্রুটি ছিল না। নির্বাচনের পর আমরা এই বিষয়ে আবারও কঠোর পদক্ষেপ নিব।
শামসুন্নাহার হলের হল প্রভোস্ট প্রফেসর ড. রকিবা নবী বলেন, কিছু সমস্যার কারণে আমরা পারমানেন্টলি সিট বরাদ্দ দিতে পারছি না। তবে আমরা নানা দিক বিবেচনা করে ৫০০ টাকার বিনিময়ে সাময়িক (১ বছরের জন্য) সিট বরাদ্দ দিয়ে থাকি। এক বছর পূর্ণ হলে শিক্ষার্থী চাইলে আবার ৫০০ টাকা দিয়ে সিট পুণর্বহাল রাখতে পারবে। তবে সামনের দিকে আমরা পারমানেন্টলি সিট বরাদ্দ দিতে সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করবো।