সাড়ে ৮ বছর পর ‘হরতাল’ রাজনীতিতে বিএনপি

মোরশেদ তালুকদার | রবিবার , ২৯ অক্টোবর, ২০২৩ at ৫:৪৪ পূর্বাহ্ণ

দীর্ঘ সাড়ে ৮ বছর পর আবারও ‘হরতাল’ রাজনীতিতে ফিরেছে বিএনপি। আজ রোববার সারাদেশে সকালসন্ধ্যা হরতাল পালনের ঘোষণা দেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল শনিবার দলটির ঢাকার সমাবেশে বাধা দেয়ার অভিযোগে এ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। এর আগে সরকারের পদত্যাগের দাবিতে ২০১৫ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে ৮ এপ্রিল পর্যন্ত টানা ৯৩ দিন সারাদেশে হরতালঅবরোধ কর্মসূচি পালন করেছিল বিএনপি। এরপর অবশ্য ২০১৭ সালের ১৩ ডিসেম্বর এবং ২০২০ সালের ২ ফেব্রুয়ারি শুধু ঢাকায় হরতাল ডাকে বিএনপি। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদ ও ঢাকা সিটি কর্পোরেশনে নির্বাচনের কারচুপির অভিযোগে এ হরতাল ডাকা হয়।

এছাড়া ২০১৩ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে টানা হরতাল পালন করে দলটি। তবে গত প্রায় দেড় বছর ধরে ধাপে ধাপে নানা কর্মসূচি পালন করে আসলেও হরতালঅবরোধ ছিল না। সভাসমাবেশ, পদযাত্রা, রোডমার্চে সীমাবদ্ধ ছিল তা। এছাড়া গতকালের সমাবেশ থেকে পরবর্তী কর্মসূচি হিসেবে ‘সচিবালয় ঘেরাও’ কর্মসূচি আসার আভাস ছিল। তবে হঠাৎ আওয়ামী লীগ ও পুলিশের সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ার পর হরতাল কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।

এদিকে আজকের এ হরতাল কর্মসূচি নিয়ে কিছুটা অস্বস্তিতে পড়েন বিএনপির চট্টগ্রামের নেতারা। কারণ হরতাল কর্মসূচি বাস্তবায়নে দলীয় নেতাকর্মীদের নিজ নিজ এলাকায় থাকার নির্দেশনা রয়েছে কেন্দ্রের। অথচ ঢাকার সমাবেশে যোগ দিতে চট্টগ্রাম থেকে বিএনপির ১৫ হাজার নেতাকর্মী রাজধানীতে গেছেন। এর মধ্যে নগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা বিএনপি এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ নেতারাও রয়েছেন। যাদের বেশিরভাগ গত রাত ১১টায় এ রিপোর্ট লেখার সময়ও ফিরতে পারেনি চট্টগ্রাম। অবশ্য রাতের মধ্যে ফিরে কেন্দ্রীয় কর্মসূচি বাস্তবায়নে মাঠে থাকবে বলে জানিয়েছেন একাধিক নেতা।

জানা গেছে, গত ২৪ অক্টোবর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভীর স্বাক্ষরে দলীয় কর্মীদের একটি নির্দেশনা দেয়া হয়। এতে বলা হয়, ঢাকার সমাবেশ থেকে পরবর্তী যে কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে তা সফল করার জন্য ভাইস চেয়ারম্যান, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, যুগ্ম মহাসচিব, কেন্দ্রীয় সম্পাদক, সহসম্পাদক, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সকল সদস্য, উপজেলা চেয়ারম্যান ও পৌরসভার সম্ভাব্য প্রার্থী, অতীতে যারা দলের সংসদ সদস্য ছিলেন এবং যারা প্রার্থীতা প্রত্যাশা করেন তাদের স্ব স্ব এলাকায় উপস্থিত থেকে কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে নির্দেশনা দেয়া হয়। একই নির্দেশনা রয়েছে অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের উপরও। তবে ঢাকায় যাওয়া নেতারা ফিরতে না পারায় আজকের কর্মসূচি নিয়ে অস্বস্তি তৈরি হয়। এ বিষয়ে জানার জন্য একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি নগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন ও সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্করকে। এ দুই জন ঢাকার সমাবেশে অংশ নিয়েছেন।

ঢাকার সমাবেশে অংশ নেয়া চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম আকবর খোন্দকার গতরাতে মোবাইলে আজাদীকে বলেন, চট্টগ্রামের উদ্দেশে রাওয়ানা হয়েছি। হরতাল কর্মসূচি বাস্তবায়নে মাঠে থাকব। বিকেলে নাসিমন ভবনে সমাবেশ করব আমরা। ঢাকার সমাবেশে উত্তর জেলা থেকে পাঁচ হাজারের বেশি নেতাকর্মী অংশ নেয় বলেও জানান তিনি।

চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান মোবাইলে আজাদীকে বলেন, যেহেতু কেন্দ্র থেকে হরতালের কর্মসূচি দিয়েছে আমরা তা বাস্তবায়ন করব এবং সে লক্ষ্যে মাঠে থাকব। মহাসমাবেশে অংশ নিতে ঢাকায় গেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, রাতের মধ্যে চট্টগ্রাম চলে আসার চেষ্টা করছি।

এদিকে হরতালের নামে বিএনপিজামায়াত ‘অরাজকতা ও নাশকতা’ করলে তার প্রতিরোধে আজ নগর আওয়ামী লীগও মাঠে থাকবে বলে জানিয়েছে। দারুল ফজল মার্কেটস্থ দলীয় কার্যলয় সম্মুখ চত্বর, অলংকার চত্বর, অঙিজেন চত্বর, বহদ্দারহাট চত্বর, ইপিজেড মোড় ও বাদামতলী মোড়ে শান্তি সমাবেশ করবে নগর আওয়ামী লীগ। এছাড়া উত্তর ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগও মাঠে থাকবে বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, বঙ্গবন্ধু টানেল উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এমন শুভ দিনে ঢাকায় অশুভ শক্তির অপতৎপরতা জাতিকে আরো একটি কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি করেছে। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আমরা প্রস্তুত। বিএনপিজামায়াত নৈরাজ্য ও নাশকতা করলে তা প্রতিরোধ করা করা হবে। শান্তি সমাবেশ করে মাঠে থাকবে মহানগর আওয়ামী লীগ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধদইজ্যার তলে চলে গাড়ি
পরবর্তী নিবন্ধজনগণের সুরক্ষায় আওয়ামী লীগ রাজপথে থাকবে