সাড়ে ৩ ঘণ্টার দুর্ভোগ

চমেক হাসপাতাল জরুরি বিভাগ বন্ধ থাকায় অনেক রোগী নিয়ে ছুটেন বেসরকারি হাসপাতালে সন্ধ্যায় কর্মসুচি স্থগিত, জরুরি বিভাগ ও বহির্বিভাগ চালু থাকবে

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ at ৭:০৯ পূর্বাহ্ণ

ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসকদের ওপর হামলার প্রতিবাদে ডাকা ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচির সাথে সংহতি প্রকাশ করে গতকাল চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে কর্মবিরতি পালন করেছেন চিকিৎসকদের একাংশ। এ সময় রোগীদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়। প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা পর সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে কর্মসূচি স্থগিত করা হলে জরুরি সেবা কার্যক্রম শুরু হয়।

এর আগে গতকাল দুপুর ২টার দিকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগের গেটে তালা দিয়ে সেবা বন্ধ রাখেন চিকিৎসকরা। এ সময় রোগীর স্বজন ও বিক্ষুব্ধ জনতা গেটের তালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করলে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। তবে ঘটনার পর পর সেনা সদস্যরা দ্রুত ঘটনাস্থলে হাজির হলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। এ সময় জরুরি সেবায় বিঘ্ন ঘটলেও হাসপাতালে হৃদরোগ বিভাগের সিসিইউ, আইসিইউ, এনআইসিইউ, গাইনী ওয়ার্ডসহ বেশ কয়েকটি ওয়ার্ডের চিকিৎসকরা সেবা চালিয়ে যান। তবে বেশ কয়েকজন রোগীর স্বজন বিভিন্ন ওয়ার্ডে চিকিৎসক না থাকার অভিযোগ তোলেন। চিকিৎসা না পাওয়ার দাবি করে আতঙ্কিত হয়ে অনেককে রোগীদের নগরীর বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যেতে দেখা গেছে।

চন্দনাইশের বরমা ইউনিয়নের বাসিন্দা ষাটোর্ধ্ব মো. আমির হোসেন বুকে ব্যথা নিয়ে হৃদরোগ বিভাগে ভর্তি হয়েছিলেন। তার ছেলে মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক বলেন, গত শনিবার রাতে বাবাকে ভর্তি করিয়েছি। কিন্তু চিকিৎসকদের কাছ থেকে কাঙ্ক্ষিত সেবা না পেয়ে বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছি।

আনোয়ারার বটতলী ইউনিয়নের মোহছেন আউলিয়া দরগাহ এলাকা থেকে প্রতিপক্ষের হামলায় মাথায় গুরুতর জখম নিয়ে আসেন আনিসুর রহমান (৫০)। তার ভাতিজা মোহাম্মদ মুসা বলেন, জরুরি বিভাগে ২০ মিনিট অপেক্ষা করার পরও কোনো চিকিৎসক আসেননি। এখন রোগীকে তো বাঁচাতে হবে। তাই বাধ্য হয়ে নিয়ে যাচ্ছি।

এদিকে মীরসরাই থেকে নিউমোনিয়া আক্রান্ত দেড় বছরের শিশু মোহাম্মদ ফারাজকে হাসপাতালে আনেন তার বাবামা। চিকিৎসকের কর্মবিরতির ঘটনায় আতঙ্কিত হয়ে ছেলেকে নিয়ে হাসপাতালে ত্যাগ করেন বাবা মোহাম্মদ রুবেল। তিনি বলেন, হাসপাতালে এসেছি ছেলের চিকিৎসা করাতে। কিন্তু এখানে চিকিৎসকই নেই। তাই বাইরের কোনো হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছি।

এদিকে গতকাল বিকালে চমেক হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগ, সার্জারি বিভাগ ও মেডিসিন ওয়ার্ডে ঘুরে দেখা গেছে, হৃদরোগ বিভাগের সিসিইউতে চিকিৎসক থাকলেও ২৪ নম্বর সার্জারি ওয়ার্ড ছিল চিকিৎসকশূন্য। তবে কয়েকজন নার্সকে রোগীদের সেবা দিতে দেখা যায়। এছাড়া মেডিসিনের তিনটি ওয়ার্ডের দুটিতে চিকিৎসকদের সেবা দিতে দেখা গেছে।

চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ তসলিম উদ্দীন আজাদীকে বলেন, হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সেবা সন্ধ্যা থেকে চালু হয়েছে। তবে আমাদের ওয়ার্ডগুলোতে চিকিৎসাসেবা স্বাভাবিক ছিল। ঢাকা থেকে চিকিৎসকদের যে কর্মসূচি থাকুক না কেন, আমাদের হাসপাতালে সেবা বন্ধ থাকবে না। সেটি ওয়ার্ড হোক বা বহির্বিভাগ হোক। আমরা রোগীদের শতভাগ সেবা নিশ্চিতে কাজ চালিয়ে যাব।

এদিকে গতকাল বিকালের দিকে চমেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে মোবাইল চোর সন্দেহে চলিশোর্ধ্ব এক ব্যক্তিকে গণপিটুনি দিয়েছে একদল লোক। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তার নাম পরিচয় জানা যায়নি। পরে চমেক হাসপাতাল ফাঁড়ির পুলিশ এসে লাশ মর্গে প্রেরণ করে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচট্টগ্রাম চেম্বারের ভবিষ্যৎ কোন দিকে
পরবর্তী নিবন্ধপদত্যাগ করলেন চবি চারুকলা ইনস্টিটিউটের পরিচালক