ভাড়া বাড়ি থেকে চট্টগ্রাম বিভাগীয় গণগ্রন্থাগারের (পাবলিক লাইব্রেরি) বস্তাবন্দী বই এনে নতুন ভবনে নতুন করে সাজানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তবে ভবনের কাজ পুরোপুরি শেষ না হওয়ায় লাইব্রেরিটিকে স্বাভাবিক ধারায় আনতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। চট্টগ্রামের সাংস্কৃতিক অঙ্গনকে ঘিরে গড়ে তোলা এ বড় প্রকল্পটির কাজ আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে সম্পন্ন করার প্রক্রিয়া চলছে।
সূত্র জানিয়েছে, চট্টগ্রাম মুসলিম ইনস্টিটিউট, বিভাগীয় পাবলিক লাইব্রেরি এবং কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারসহ বিদ্যমান সাংস্কৃতিক অঙ্গনের উন্নয়নে সরকার বেশ বড় ধরনের একটি প্রকল্প গ্রহণ করে।
২০১৫ সালের মার্চে গণপূর্ত অধিদপ্তর ও স্থাপত্য অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে মুসলিম হলসহ সন্নিহিত অবকাঠামোগুলো উন্নয়ন ও সংস্কারের লক্ষ্যে নকশা প্রণয়নের কাজ শুরু হয়। প্রায় এক বছরেরও বেশি সময় ধরে তৈরি করা নকশা ২০১৬ সালের আগস্টে চূড়ান্ত করা হয়। ২০১৭ সালের নভেম্বর মাসে প্রকল্পটি একনেকের অনুমোদন লাভ করে। গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তরের বাস্তবায়নাধীন ‘চট্টগ্রাম মুসলিম ইনস্টিটিউট সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স স্থাপন’ প্রকল্পটির কাজ শুরু হয় ২০১৮ সালের জানুয়ারি মাসে। ২৮১ কোটি টাকা ব্যয়ে গণপূর্ত বিভাগ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। প্রকল্পটির কাজ ২০২১ সালের ডিসেম্বরে সম্পন্ন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু নানা প্রতিকূলতায় সম্ভব হয়নি। বিশেষ করে করোনাকালে প্রকল্পের কাজ অনেকটা মুখ থুবড়ে পড়ে। পরবর্তীতে দফায় দফায় মেয়াদ বাড়িয়ে প্রকল্পের মেয়াদ আগামী জুন পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়। বর্ধিত মেয়াদের মধ্যে প্রকল্পটির কাজ পুরোপুরি সম্পন্ন হবে বলে উল্লেখ করে সূত্র বলেছে, ইতোমধ্যে প্রকল্পটির কাজ ৮৫ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। প্রায় তিন একর আয়তনের জায়গার উপর প্রকল্পটির আওতায় ১৫ হাজার ২১২.২৮ বর্গফুটের উপর ১৫ তলা বিশিষ্ট চট্টগ্রাম বিভাগীয় সরকারি গণগ্রন্থাগার, ১৪ হাজার ৪৯৩.২২ বর্গফুট আয়তনের মাল্টিপারপাস হল ও সেমিনার হলের পাশাপাশি ৭৪১৩.৬০ বর্গফুট আয়তনের পাবলিক প্লেস তৈরি করা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এবং চলাচলের জন্যও অবকাঠামোগত ব্যাপক উন্নয়ন সাধন করা হচ্ছে।
গণগ্রন্থাগারের একটি বেইজমেন্ট এবং ১৫ তলা ভবনের নিচতলায় সার্ভিস সেকশন রাখা হবে। এই সেকশনে বই বাছাই, ফিউমিগেশন করা হবে। ২য় তলায় অফিস, ৩য় ফ্লোরে সেমিনার ও মিটিং রুম থাকবে। ৪র্থ তলা প্রতিবন্ধীদের জন্য বরাদ্দ থাকবে। ৫ম ও ৬ষ্ঠ তলায় জেনারেল লাইব্রেরি, ৭ম তলায় চিলড্রেন লাইব্রেরি, ৮ম তলায় পেপার লাইব্রেরি, ৯ম তলায় রেফারেন্স লাইব্রেরি, ১০ম ও ১১ম তলায় সায়েন্স লাইব্রেরি, ১২তম তলায় ট্রেনিং ইউনিট, ১৩তম তলায় আইসিটি ইউনিট, ১৪তম তলা ভবিষ্যতের প্রয়োজনীয় কার্যক্রমের জন্য এবং ১৫তম তলায় গেস্ট হাউজ নির্মাণ করা হচ্ছে।
প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার পর লাইব্রেরিটির সাধারণ পাঠাগারে ২৫০ জন, বিজ্ঞান পাঠাগারে ১৫০ জন, রেফারেন্স পাঠাগারে ১০০ জন, পত্রিকা/সাময়িকী পাঠাগারে ১০০ জন, প্রতিবন্ধী পাঠাগারে ৫০ জন, উন্মুক্ত পাঠাগারে ১৫০জন, শিশু–কিশোর পাঠাগারে ১০০ জন পাঠক একসঙ্গে বসে বই পড়তে পারবেন। এছাড়া ৪০ থেকে ৫০ আসন বিশিষ্ট সভাকক্ষ ও সেমিনার কক্ষ, ১৫০ আসন বিশিষ্ট একটি বড় সেমিনার কক্ষ নির্মাণ হবে। আইসিটি লাইব্রেরিতে ৩০টি কম্পিউটার রাখা হবে। রেস্ট হাউজ অংশে দুইটি ভিআইপি কক্ষ ও সাধারণ ডরমেটরি কক্ষের সুবিধা থাকছে।
১৯৬৩ সালের ২০ ডিসেম্বর স্বল্প পরিসরে মাত্র তিন হাজার বই নিয়ে শুরু হওয়া এই গ্রন্থাগারে বর্তমানে বিপুল সংখ্যক বই, পত্রপত্রিকা এবং সাময়িকী রয়েছে।
পাবলিক লাইব্রেরির পুরনো ভবনটি ভাঙার পর সব বই, পত্রপত্রিকা ও সাময়িকী বস্তাবন্দী করে সদরঘাটে একটি ভাড়া বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে গত কয়েক বছর এসব সামলে রাখা হয়েছে। সম্প্রতি ভাড়া বাড়িটির ভাড়া দেয়া বন্ধ করে দেয়া হয় অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে। এর পর বিভাগীয় পাবলিক লাইব্রেরি কর্তৃপক্ষ নির্মাণাধীন ভবনের ৪, ৫ এবং ৬ তলায় ঠাঁই নিয়েছে। অসম্পূর্ণ ভবনে এসে কর্তৃপক্ষ অনেকটা বেকায়দায়ও পড়েছে। এরই মধ্যে বইগুলো সাজিয়ে গুছিয়ে রাখার চেষ্টা শুরু করা হয়েছে।
প্রিন্সিপাল লাইব্রেরিয়ান ড. মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ গতরাতে দৈনিক আজাদীকে জানান, ভাড়া বরাদ্দ বন্ধ করে দেয়ার পর সদরঘাট থেকে আমরা নির্মাণাধীন ভবনে চলে এসেছি। ঠিকাদার এবং গণপূর্তের কাছ থেকে অনেকটা জোর করে তিনটি ফ্লোর নিয়ে আমরা সেখানে নিজেদের গুছানোর কাজ করছি। প্রকল্পের কাজ শেষ না হওয়ায় আমাদেরকে কষ্টের মধ্যে থাকতে হবে।
গণপূর্ত অধিদপ্তর চট্টগ্রাম–১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী রাহুল গুহ জানান, সাংস্কৃতিক কমপ্লেঙের ৮৫ শতাংশ কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। পাবলিক লাইব্রেরির স্ট্রাকচারাল এবং ফিনিশিং কাজ শেষ। ইন্টেরিয়রের কাজ বাকি রয়েছে। বেশ কিছু উপকরণ আসবে বিদেশ থেকে। তাই একটু সময় লাগছে। আগামী জুনের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হবে বলে জানান তিনি।