সাজা শেষে ‘জল্লাদ’ শাহজাহান দেখলেন, অপেক্ষায় নেই কোনো স্বজন

| সোমবার , ১৯ জুন, ২০২৩ at ৫:২৭ পূর্বাহ্ণ

বঙ্গবন্ধুর খুনি, মানবতাবিরোধী অপরাধীসসহ ২৬ জনের ফাঁসির দণ্ড কার্যকর করে আলোচিত শাহজাহান ভুঁইয়া কারামুক্ত হয়েছেন ৩২ বছর পর। ডাকাতির সময় হত্যা এবং অস্ত্র আইনের দুটি মামলায় সাজা খেটে গতকাল রোববার ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে বের হয়ে তিনি দেখেন, তার অপেক্ষায় নেই কোনো স্বজন। তাই কারাগারে ‘বন্ধু’ হয়ে ওঠা একজনের আশ্রয়ে যেতে হয়েছে তাকে। খবর বিডিনিউজের।

১৯৯১ সালে ডাকাতি ও হত্যার মামলায় কারাগারে যাওয়া শাহজাহান ভুঁইয়ার সাজা হয়েছিল ৪২ বছর। ওই বছরের ১৭ মে তিনি যান কারাগারে। নানা কারণে সাজা রেয়াত হয় ১০ বছর ৫ মাস। ৩২ বছর পর গতকাল তার মুক্তি পাওয়ার খবর আগেই চাউর হয় কারাগারে তার ভূমিকার কারণে। কারাগারের তথ্য অনুযায়ী ২০০১ সাল থেকে ২৩ বছরে তিনি ২৬ জনের ফাঁসি কার্যকরে ভূমিকা রেখেছেন। এদের মধ্যে বহু আসামি ছিলেন আলোচিত, প্রভাবশালী এবং কুখ্যাত। তাদের ফাঁসির ঘটনা নিয়েও সারাদেশে তোলপাড় হয়েছে। আর প্রতিবারই বেড়েছে শাহজাহানের পরিচিতি। প্রতিটি ফাঁসি কার্যকরের জন্য দুই মাসের সাজা রেয়াত পেয়েছেন নামের আগে ‘জল্লাদ’ পরিচিতি বসা শাহজাহান। এই হিসাবে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেই তার সাজা কমেছে সোয়া চার বছর। কারাগারে ভালো আচরণ এবং অন্যান্য কারণে কারাবিধি অনুযায়ী কমেছে আরও কিছু সাজা।

কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারা কর্তৃপক্ষ জানায়, তার কোনো স্বজন তাকে নিতে যাননি। কারাগারে তার সঙ্গে থাকা একজন শাহজাহানকে নিয়ে গেছেন নিজের বাসায়।

ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মাহবুবুল ইসলাম বলেন, তার (শাহজাহান) কোনো আত্মীয়স্বজন পাওয়া যায়নি। একটা বোন ছিল, তিনিও আসেননি। বেলা পৌনে ১২টার দিকে তিনি মুক্তি পান, কারাগারে পরিচিত হয়ে ওঠা ব্যক্তিরাই এসে তাকে নিয়ে গেছেন।

ক্লিন শেভ দাড়ি, চুল আর গোঁফে লাল রঙ, সাদা প্যান্ট আর তাতে গুঁজে দেওয়া ধবধবে সাদা শার্ট পরে বেলা পৌনে ১২টায় কারা ফটক থেকে বেরিয়ে আসেন ৭৩ বছরের শাহজাহান। যখন কারাগারে গিয়েছিলেন তখন বয়স ছিল ৪০ এর কোঠায়। তখনও বিয়ে করেননি। বাইরে এসে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, খুব ভালো লাগছে।

পরিবারের কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার এক বোন আছে। তাকে কখনো দেখিনি। কিন্তু ফোনে কথা হয়েছে। সে আমাকে কোনো দিন দেখতেও আসেনি। সরকারের কাছে একটা থাকার জায়গার আবেদন জানিয়ে শাহজাহান বলেন, আমার ঘর নাই, বাড়ি নাই। আমি আরেকজনের বাড়িতে উঠব। আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটাই অনুরোধ জানাই, আমাকে যেন একটা বাড়ি দেওয়া হয়। আপাতত রাজধানীতে তার এক কারাসঙ্গীর বাসায় গিয়ে উঠছেন জানিয়ে শাহজাহান বলেন, আমার সঙ্গে কারাগারে একজন ছিলেন। তিনি খুব ভালো মানুষ। তার বাসায় যাচ্ছি আমি। কিছুদিন সেখানেই থাকব।

২৬ জনের ফাঁসি কার্যকরে ভূমিকা রেখেছেন তিনি, কোনো ধরনের নিরাপত্তা শঙ্কায় ভুগছেন কিনা জানতে চাইলে শাহজাহান বলেন, আমার হুকুমে ফাঁসি হয়নি। রাষ্ট্রের হুকুমে আমি ফাঁসি দিছি। শাহজাহান ভুঁইয়ার গ্রামের বাড়ি নরসিংদীর পলাশ থানার ইছাখালী গ্রামে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধখসে পড়েছে পলেস্তারা দেখা যাচ্ছে রড
পরবর্তী নিবন্ধচকরিয়ায় বাড়িতে ঢুকে কিশোরীকে ধর্ষণ