সাগরে লঘুচাপ সৃষ্টি

ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিলে আঘাত হানতে পারে ১৪ মে ।। ভোলা ও কক্সবাজারের মধ্যবর্তী উপকূল দিয়ে অতিক্রম করার শঙ্কা

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ৯ মে, ২০২৩ at ৫:৩৯ পূর্বাহ্ণ

সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ নিয়ে প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে সতর্ক করে আসছেন আবহাওয়াবিদগণ। দেশের আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসেও এমন ইঙ্গিত ছিল। সর্বশেষ গতকাল দক্ষিণ বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন দক্ষিণ আন্দামান সাগরে একটি ‘লঘুচাপ’ সৃষ্টি হয়েছে। যা আরো ঘনীভূত হতে পারে। এ লঘুচাপটিই ধীরে ধীরে আরো শক্তিশালী হয়ে ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’য় রূপ নিতে পারে।

আবহাওয়াবিদগণ জানান, একটি ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হওয়ার আগে কয়েকটি ধাপ পার হতে হয়। এগুলো হচ্ছে লঘুচাপ, সুস্পষ্ট লঘুচাপ, নিম্নচাপ ও গভীর নিম্নচাপ। পঞ্চম বা শেষ ধাপে গিয়ে এটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। ওই হিসেবে বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন দক্ষিণ আন্দামান সাগরে সৃষ্ট ‘লঘুচাপ’ সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড়ের প্রথম ধাপ। কানাডার সাসকাচোয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ু বিষয়ক পিএইচডি গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ গতকাল সন্ধ্যায় আবহাওয়া পূর্বাভাসের সর্বশেষ তথ্য বিশ্লেষণ করে জানান, সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড় মোখা ভোলা থেকে কক্সবাজার জেলার মধ্যবর্তী স্থান দিয়ে উপকূলে আঘাত হানার সম্ভাবনা বেশি। এর আগে সকালে তিনি দুটি আবহাওয়ার পূর্বাভাস (ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আমেরিকান আবহাওয়া পূর্বাভাস) মডেল বিশ্লেষণ করে জানান, শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় হিসেবে মোখা বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানতে পারে। এর মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পূর্বাভাস অনুযায়ী সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড় মোখা সরাসরি খুলনা ও বরিশাল বিভাগের ওপর দিয়ে এবং আমেরিকান আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল অনুসারে, সরাসরি চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলার ওপর আঘাত হানতে পারে মোখা। এ গবেষক জানান, আমেরিকার নৌবাহিনী কর্তৃক পরিচালিত জয়েন্ট টাইফুন ওয়ার্নিং সেন্টার থেকে প্রাপ্ত তথ্য এবং জাপানের হিমাওয়ারি ৯ নামক কৃত্রিম ভূউপগ্রহ থেকে প্রাপ্ত চিত্র বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, মঙ্গলবারের (আজ) মধ্যে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এরপর ১১ মে পূর্ণাঙ্গ ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ১০ ও ১১ মে ঘূর্ণিঝড় মোখা উত্তর ও উত্তর পশ্চিম দিকে ভারতের ওড়িশা উপকূলের দিকে অগ্রসর হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ১২ মে দিক পরিবর্তন করে উত্তরপূর্ব দিকে বাংলাদেশ ও মায়ানমার উপকূলের দিকে অগ্রসর হওয়ার সম্ভাবনার কথা বলা হয়েছে।

মোস্তফা কামাল পলাশ জানান, আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেলগুলো হতে প্রাপ্ত সর্বশেষ তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, সম্ভব্য ঘূর্ণিঝড় মোখা ভোলা থেকে কক্সবাজার জেলার মধ্যবর্তী স্থান দিয়ে উপকূলে আঘাত হানার সম্ভাবনা সর্বোচ্চ। মোখা এর কেন্দ্রের অগ্রভাগ উপকূলে আঘাত শুরু করার সম্ভব্য সময় ১৪ মে দুপুরের পর থেকে মধ্য রাত্রির মধ্যে। ঘূর্ণিঝড় এর কেন্দ্র উপকূল অতিক্রম করার সম্ভব্য সময় ১৪ মে দিবাগত রাত ১২ টা থেকে ভোর ৬ টা। ঘূর্ণিঝড় মোখা এর পিছনের অর্ধেক অংশ উপকূলে অতিক্রম করার সম্ভব্য সময় ১৫ মে ভোর থেকে বিকেল পর্যন্ত। সম্ভব্য ঘূর্ণিঝড় উপকূলে আঘাত করার সময় এটি অত্যন্ত তীব্র ঘূর্ণিঝড় কিংবা তীব্র ঘূর্ণিঝড় হিসাবে উপকূল অতিক্রম করতে পারে। সম্ভব্য ঘূর্ণিঝড় মোখার বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ উঠার সম্ভাবনা রয়েছে ১৬০ থেকে ১৯০ কিলোমিটার (সমুদ্রে থাকা অবস্থায়) ও উপকূলে আঘাত হানার সময় বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ উঠার সম্ভাবনা রয়েছে ১৩০ থেকে ১৭০ কিলোমিটার। চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগের উপকূলীয় জেলাগুলো ৭ থেকে ১০ ফটু উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসের হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে।

এদিকে ভারতের আবহাওয়া বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, মোখা তৈরি হলে তা অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে। ভয়ঙ্কর রূপে এটা স্থলভাগে আছড়ে পড়লে তার তাণ্ডবে ব্যাপক ক্ষতি হতে পারে।

উল্লেখ্য, আরব সাগর ও বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড়ের নাম দেয় বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার সাইক্লোন সংক্রান্ত আঞ্চলিক সংস্থা এসকাপ। এ অঞ্চলের ১৩টি দেশের দেওয়া নামের তালিকা থেকে পর্যায়ক্রমে নতুন নতুন ঘূর্ণিঝড়ের নাম ঠিক করা হয়। মোখা নামটি ইয়েমেনের দেয়া।

আগারগাঁও আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. বজলুর রশিদ বলেন, দক্ষিণপূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন দক্ষিণ আন্দামান সাগর এলাকায় একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়েছে। এটি ঘণীভূত হতে পারে। লঘুচাপটির বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ এবং তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। এর প্রভাবে সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে। বিরাজমান তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে।

তাপদাহে অতিষ্ঠ নগরবাসী : এদিকে সাগরে ঘূর্ণিঝড় রূপ নিলেও চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মৃদু থেকে মাঝারী তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এতে অতিষ্ঠ ছিলেন সধারণ লোকজন।

গতকাল নগরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৬ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা স্বাভাবিকের চেয়ে ৩ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি। এছাড়া সন্দ্বীপে ৩৮ দশমিক ৭ এবং সীতাকুণ্ডে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৬ দশমিক ডিগ্রি সেলসিয়াস।

প্রসঙ্গত, তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে তাকে মৃদু তাপপ্রবাহ, ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে মাঝারি তাপপ্রবাহ এবং তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি হলে তাকে তীব্র তাপপ্রবাহ বলে। ওই হিসেবে গতকাল নগরে মৃদু তাপপ্রবাহ ছিল। আজও এ তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে।

এ বিষয়ে পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ সুমন সাহা বলেন, চট্টগ্রামে আজ মঙ্গলবার আকাশ আংশিক মেঘলাসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে তা অব্যহত থাকতে পারে। রাত ও দিনের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে।

দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায় : গতকাল দেশের সর্বোচ্চ ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় চুয়াডাঙ্গায়। এছাড়া রাজধানী ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৯ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল সন্ধ্যা ৬টায় আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়, রাজশাহী, নেত্রকোনা, খুলনা, চুয়াডাঙ্গা এবং কুষ্টিয়া জেলাসমূহের উপর তীব্র তাপপ্রবাহ এবং দেশের অন্যত্র মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপ প্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে।

এর আগে সকাল ৯টায় বলা হয়, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল বিভাগসহ ঢাকা, টাঙ্গাইল, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, ময়মনসিংহ, রংপুর, দিনাজপুর, সৈয়দপুর, কুড়িগ্রাম, মৌলভীবাজার, চট্টগ্রাম, রাঙামাটি, চাঁদপুর, কুমিল্লা, ফেনী, নোয়াখালী ও বান্দরবানের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএবারের বাজেট উপস্থাপন ১ জুন
পরবর্তী নিবন্ধপুলিশের প্রতিবেদন গ্রহণ করেছে আদালত