সাগরে ঘূর্ণিঝড়ের আভাস উদ্বেগ চট্টগ্রামে

গরম কাটতে লাগবে আরো কয়েকদিন : আবহাওয়া অফিস

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ২১ মে, ২০২১ at ৫:৩২ পূর্বাহ্ণ

উত্তর আন্দামান সাগর ও পূর্বমধ্য বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত লঘুচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেওয়ার আশংকায় উদ্বেগ তৈরি হয়েছে চট্টগ্রামেও। বছরের এই সময়ে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া ঘূর্ণিঝড়গুলোর বাংলাদেশের অভ্যন্তরে আঘাত হানার সম্ভাবনা বেশি থাকে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা। লঘুচাপটি ক্রমান্বয়ে নিম্নচাপ হয়ে আগামী ২৩ মে’র মধ্যে এটি সামুদ্রিক ঝড়ে রূপ নিতে পারে। ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিলে এটির নাম হবে ‘যশ’। আগামী ২৫-২৬ মে’র দিকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আঘাত হানতে পারে ঘূর্ণিঝড়টি। এরআগে আরব সাগরে তৈরি হওয়া আরেক ঘূর্ণিঝড় ‘তাকথৈই’ তিনদিন আগে আঘাত হানে ভারতের গুজরাটে।
এদিকে চলমান তাপপ্রবাহের কারণে সৃষ্ট গরম কাটতে আরও কয়েকদিন সময় লাগতে পারে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রামের আবহাওয়াবিদরা। চট্টগ্রাম আবহাওয়া অফিস বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টার স্থানীয় পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামের আকাশ আংশিক মেঘলা থেকে সাময়িকভাবে মেঘাচ্ছন্ন থাকতে পারে। সে সাথে দুয়েক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা কিংবা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি কিংবা বজ্রসহ বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। রাত ও দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। পশ্চিম-দক্ষিণ, পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ১২-১৫ কি.মি. বেগে বাতাস প্রবাহিত হতে পারে। যা অস্থায়ীভাবে দমকা কিংবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৩০-৪০ কি.মি. বেগে বাতাস প্রবাহিত হতে পারে।
গতকাল বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৪.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা স্বাভাবিকের চেয়ে ২.৪ ডিগ্রি বেশি। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২৮.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা স্বাভাবিকের চেয়ে ৩.৮ ডিগ্রি বেশি। এদিকে চট্টগ্রাম নদী বন্দরের জন্য এক নম্বর নৌ-সতর্কতা সংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অফিস।
কেন্দ্রীয় আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে, যার বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। কুষ্টিয়া ও কুমিল্লা অঞ্চলসহ ঢাকা, ময়মনসিংহ, রংপুর, রাজশাহী ও সিলেট বিভাগের দুয়েক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা কিংবা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি কিংবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানতঃ শুষ্ক থাকতে পারে। এদিকে মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, চাঁদপুর, নোয়াখালী ও ফেনী জেলাসহ রাজশাহী, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের উপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরণের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে।
অন্যদিকে বৃহস্পতিবার আবহাওয়া অধিদপ্তরের ঘূর্ণিঝড় সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, উত্তর আন্দামান সাগর ও তৎসংলগ্ন পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে। এটি পরবর্তীতে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে। এটি পরবর্তীতে উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে ২৬ মে নাগাদ উড়িষ্যা-পশ্চিমবঙ্গ হয়ে বাংলাদেশের খুলনা উপকূলে পৌঁছতে পারে।
চট্টগ্রাম আবহাওয়া ও ভূ-প্রাকৃতিক কেন্দ্রের উপ-পরিচালক সৈয়দ আবুল হাসানাৎ দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় এখনো হয়নি। এটির সম্ভাবনা আছে। আশা করা হচ্ছে, আগামী ২৩ তারিখ (২৩ মে) এটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। সাধারণত এই সময়ে যেই সাইক্লোনগুলো হয়, সেগুলো বাংলাদেশে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই বিষয়টি আমরা লক্ষ্য রাখছি। এখনো নিম্নচাপও হয়নি। এখনো অসম্পূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রামে গরম আরও কয়েকদিন থাকতে পারে। বিশেষত চট্টগ্রামে বৃষ্টি কম হওয়ায় বাতাসে আদ্রতা বেশি থাকার কারণে তাপমাত্রা কমলেও গরম বেশি অনুভুত হয়। ’
এদিকে জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড়ের এ নামটি ওমানের দেওয়া। ‘যশ’ শব্দটি এসেছে পার্সিয়ান ভাষা থেকে। ইংরেজিতে যেটিকে জেসমিন বলা হয়। ভারতের আলিপুর আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, আগামী ২৩-২৫ মের মধ্যে বঙ্গোপসাগের উপকূলবর্তী এলাকায় আছড়ে পড়তে পারে ঘূর্ণিঝড়।
ভারতের আবহাওয়া অফিস (আইএমডি) ও ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্র জানিয়েছে, উত্তর আন্দামান সাগর ও পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগরে আগামী ২২ মের দিকে একটি লঘুচাপের সৃষ্টি হতে পারে। পরবর্তীতে এটি নিম্নচাপে পরিণত হয়ে আগামী ২৪ মের দিকে ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। আর আগামী ২৬ মের দিকে এটি উত্তর পশ্চিম ওড়িশা ও পশ্চিমবঙ্গ উপকূলের কাছাকাছি পৌঁছাবে। দক্ষিণ পশ্চিম মৌসুমী বায়ু তথা বর্ষা দক্ষিণ আন্দামান সাগর ও দক্ষিণ পশ্চিম বঙ্গোপসাগরের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এটি শক্তিশালী রূপ নেবে আগামী ২১ থেকে ২৪ মের মধ্যে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর, ওড়িশা, পশ্চিমবঙ্গ এবং তৎসংলগ্ন বাংলাদেশ উপকূলে আগামী ২৫ মে বিকেল থেকে ২৬ মে পর্যন্ত ক্রমান্বয়ে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ বাতাসের গতিবেগ থাকবে ৪০ থেকে ৬০ কিলোমিটার।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকৌতুক কণিকা
পরবর্তী নিবন্ধজেবুন্নেছার মর্যাদাহানি ঠেকাতে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের চিঠি