সাগর ও নদীর প্লাস্টিক বর্জ্য পরিষ্কারে ক্লিয়ার বোট নিও

| শনিবার , ২৮ জানুয়ারি, ২০২৩ at ৮:০৮ পূর্বাহ্ণ

পরিত্যক্ত প্লাস্টিক পণ্যের কারণে বিশ্বের সিংহভাগ নদী ও সমুদ্র ব্যাপক হারে দূষিত হয়। উপকূলগুলোয় প্রায় চোখে পড়ে ফেলে দেওয়া বোতলসহ অন্যান্য প্লাস্টিক পণ্য। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে এগিয়ে এসেছেন চার তরুণ। তারা তৈরি করেছেন ওপেন ওশান ইঞ্জিনিয়ারিং ক্লিয়ার বোট নিও নামে এক ধরনের প্রযুক্তি। এটি পানিতে ভেসে সংগ্রহ করবে পরিত্যক্ত প্লাস্টিক ও ময়লা আবর্জনা।

এআই রোবোটিক বোটটির নির্মাতারা মূলত হংকংভিত্তিক একটি স্টার্টআপের সদস্য। দীর্ঘ পরিকল্পনা ও গবেষণার পর তারা ক্লিয়ার বোট নিওর খবর প্রকাশ করে। নির্মাতাদের মূল ইচ্ছা বিশ্বজুড়ে পানিকে দূষণ থেকে রক্ষা করা। খবর বাংলানিউজের।

জাতিসংঘের তথ্য অনুসারে, বিশ্বের দশটি বড় নদীর ৯৫ শতাংশ প্লাস্টিক দূষণের কবলে রয়েছে। নদীগুলোর মধ্যে আটটি এশিয়ায়। আশঙ্কা করা হচ্ছে, ২০৪০ সালের মধ্যে সামুদ্রিক পরিবেশে প্রবাহিত প্লাস্টিকের আবর্জনার পরিমাণ তিন গুণ হতে পারে। যদি তা হয় প্রতি বছর ২৩ থেকে ৩৭ মিলিয়ন মেট্রিক টন আবর্জনায় নদীসমুদ্র দূষিত হবে। এটি বিশ্বব্যাপী উপকূলরেখার প্রতি মিটারে প্রায় ৫০ কেজি প্লাস্টিকের আবর্জনার সমতুল্য।

ক্লিয়ার বোট নিও’র সহনির্মাতা সিদ্ধান্ত গুপ্ত মনে করেন, যদি কেউ নদী ও বন্দরগুলো পরিষ্কার করেন, তিনি একই সঙ্গে আমাদের মহাসাগরগুলোকে পরিষ্কার করতে সাহায্য করছেন। এ চিন্তা থেকেই অপর তিন বন্ধুকে নিয়ে এআই প্রযুক্তির ছোট নৌকাটি তারা তৈরি করেছেন। তিনি জানান, ক্লিয়ার বোট নিও মাত্র তিন মিটার লম্বা। সূর্যের আলো থেকে বিদ্যুৎ (ব্যাটারি) উৎপন্ন করে একটি মোটরের মাধ্যমে এটি চলে। নৌকাটি নদী বা সাগরের নির্দিষ্ট অংশে গিয়ে পানির উপরে বা নিচ থেকে প্লাস্টিক, ময়লাআবর্জনা সংগ্রহ করে।

এআই প্রযুক্তির মাধ্যমে নৌকাটি নির্দিষ্ট বস্তুগুলো শনাক্ত করার ক্ষমতা রাখে। রয়েছে দুটি ক্যামেরা, যেটি ক্লাউড স্টোরেজের মাধ্যমে প্রচুর ডেটা সংগ্রহ করে।

ক্লিয়ার বোট নিও ময়লা সংগ্রহ করে একটি বড়শির মাধ্যমে। নৌকার মাথায় একটি অনবোর্ড কনভেয়ার বেল্টের মাথায় ময়লা সংগ্রহের বড়শিটি যুক্ত রয়েছে। সেটি ময়লা ধরার পর একটি নির্দিষ্ট পাত্রে জমা করে। নৌকাটি পুনর্ব্যবহারযোগ্য এবং দিনে এক মেট্রিক টন বর্জ্য সংগ্রহ করতে পারে।

নিও বোটে যে ক্যামেরা দুটি লাগানো রয়েছে তার মধ্যে একটি পানির পৃষ্ঠের জরিপ করতে পারে। এর মাধ্যমে এটি নেভিগেট হয়। এমনকি আশেপাশে কোনো নৌকা বা জাহাজ থাকলে সেগুলোকে দেখে এড়িয়ে যেতে পারে। দ্বিতীয় ক্যামেরাটি কনভেয়র বেল্টে আসা বর্জ্যের প্রতিটি কোণের ছবি তুলতে সক্ষম। ছবিগুলো জিপিএসের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের ডেটা কমপ্লায়েন্স সিস্টেমে পাঠায়, যা মাইক্রোসফটের ‘অ্যাজিউর’ প্ল্যাটফর্মে সংরক্ষিত থাকে।

২০১৯ সালে হংকং ইউনিভার্সিটি থেকে স্নাতক শেষ করার পর বন্ধু উৎকর্ষ গোয়েলকে নিয়ে স্টার্টআপটি শুরু করেন সিদ্ধান্ত গুপ্ত। তাদের মাথায় চিন্তাটি এসেছিল যখন তারা ইন্দোনেশিয়ার বালি দ্বীপে অবকাশ যাপনের জন্য গিয়েছিলেন। সেখানে তারা দেখেন কীভাবে স্থানীয় লোকজন প্রতিদিন ছোট নৌকায় করে সাগর থেকে ময়লাআবর্জনা পরিষ্কার করেন। পরে বালিতে বসে তারা একটি মৌলিক অ্যালুমিনিয়াম প্রোটোটাইপ তৈরি করেন। হংকংয়ে ফিরে সেটিকে তারা একটি ফাইবার গ্লাস সংস্করণে আপগ্রেড করেন। ক্লিয়ারবট নিও তাদের প্রোটোটাইপ সিরিজের সর্বশেষ মডেল।

পূর্ববর্তী নিবন্ধগর্ভবতী নারীদের বন্ধু
পরবর্তী নিবন্ধবর্ণাঢ্য শোভাযাত্রায় বাঁশখালীতে আন্তর্জাতিক কুম্ভমেলা শুরু