সাখাওয়াত হোসেন মজনু (১৯৫৭–২০২১)। তিনি বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক হিসেবে যেমন পরিচিত, তেমনি নিষ্ঠাবান গবেষক হিসেবেও সমাদৃত। তিনি ১৯৫৭ খ্রিষ্টাব্দের ২০ এপ্রিল চট্টগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম বেলায়েত হোসেন, মাতার নাম হোসনে আরা বেগম।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে তিনি বাংলা ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানে এম এ ডিগ্রি লাভ করেন। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ছাত্রলীগের কর্মী হিসেবে চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত দৈনিক দেশবাংলার একজন কিশোর কর্মী হিসেবে ছোট ছোট সংবাদ লিখতে লিখতে সাখাওয়াত হোসেন মজনুর লেখার হাতে খড়ি।
তারপর গণকণ্ঠ এবং শিক্ষকতার মাধ্যমে ১৯৮৮ খ্রিষ্টাব্দ থেকে বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ গবেষণা কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণে থেকে এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. মাহফুজুর রহমান এর তত্ত্বাবধানে চট্টগ্রাম অঞ্চলের তৃণমূলে মুক্তিযুদ্ধের তথ্য সংগ্রহের কাজ শুরু করেন। তবে তিনি তাঁর ক্ষেত্র হিসেবে মুক্তিযুদ্ধে শহর চট্টগ্রামকে বেছে নিয়েছেন। গবেষণার ফল হিসেবে প্রকাশিত হয়েছে, নির্যাতন’ ৭১, রণাঙ্গনে সূর্যসৈনিক, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে শহর চট্টগ্রামের বধ্যভূমি ও নির্যাতন কেন্দ্র, মধ্যম নাথপাড়া ও আবদুর পাড়া বধ্যভূমি, মুক্তিযুদ্ধে আমার কৈশোর। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রামী ও শহীদ সৈয়দ নিছার আলী তিতুমীর এর জীবনতথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে ব্রিটিশ রাজ নিযুক্ত প্রকাশিত তিতুমীর এর জীবন কাহিনীর বিপরীতে সাখাওয়াত হোসেন মজনু ও তাঁর স্ত্রী তিতুমীর এর জন্মস্থান পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার হায়দারপুর গমন করেন। এই মহান বীর কেমন করে ইংরেজ শাসক এবং নীল ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বাহিনী তৈরি করেছিলেন, কেমন করে নারকেল বেড়িয়ায় বাঁশের কেল্লা নির্মাণ করে ৬ দিন ইংরেজ সৈন্যদের প্রতিরোধ করেছিলেন সে তথ্যগুলো সংগ্রহ করেছিলেন হায়দারপুর, চাঁনপুর, টাকি, পুরি, গোবরডাঙ্গাসহ এলাকার তৃণমূলে ঘুরে এখনো প্রকৃত তথ্য উদঘাটন করার চেষ্টা করছেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় শহর চট্টগ্রামের তৃণমূলের অবস্থা, মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় কেন্দ্র, গৌরবদীপ্ত অপারেশন, বধ্যভূমি, নির্যাতন কেন্দ্র, মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সহায়ক শক্তি মা–বোনদের গৌরবগাথা, ঘাতক বাহিনীর সহযোগী ও পাকিস্তান বাহিনীর দোসরদের তৃণমূলের তথ্য সংগ্রহের ২য় পর্বের কাজ শেষ করেছেন। দৈনিক আজাদীর সাবেক সম্পাদক প্রফেসর মোহাম্মদ খালেদ এবং বর্তমান সম্পাদক এম.এ মালেক এর পৃষ্ঠপোষকতা ও অনুপ্রেরণায় সাখাওয়াত হোসেন মজনু ১৯৯০ থেকে দৈনিক আজাদীতে ‘সাম্প্রতিক চট্টগ্রাম ও দৈনন্দিন টুকিটাকি’ শীর্ষক নিয়মিত কলামটি লিখে নিজেকে একজন কলামিস্ট হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন। সাখাওয়াত হোসেন মজনুর প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা মোট ২৩টি। তিনি ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের ১ মে মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিলো ৬৫ বছর। ২য় মৃত্যুবার্ষিকীতে আমরা তাঁকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি।