বাঁশখালীর সাধনপুর ইউনিয়নের শীল পাড়ায় ২০০৩ সালের ১৮ নভেম্বর ১১ জনকে পুড়িয়ে হত্যার ২০ বছর পূর্তি আজ। হত্যার দুই দশকে রায় দূরে থাক, মামলার ৫৭ জন সাক্ষীর মধ্যে সাক্ষ্য দিয়েছেন মাত্র ২৭ জন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সাক্ষীর সাক্ষ্যদানে অনীহার কারণে মামলাটির অগ্রগতি হচ্ছে না। বারবার পেছাচ্ছে শুনানির তারিখ। সর্বশেষ চলতি বছরের ১২ জুন ও ৯ নভেম্বর শুনানিকালে নতুন কোনো সাক্ষী আসেনি।
মামলার বাদী বিমল কান্তি শীল বলেন, সাক্ষীদের আদালতে হাজির করা যায় না বলে বারবার মামলার শুনানি পেছাচ্ছে। আদালত মামলার পরবর্তী শুনানি নির্ধারণ করেছে ২০২৪ সালের ৭ এপ্রিল। তিনি জানান, মামলায় ৩৭ জন আসামির মধ্যে ১৮ জন পলাতক এবং ১৮ জন রয়েছে জামিনে।
এদিকে সাক্ষীর কারণে মামলার অগ্রগতি হচ্ছে না এ অভিযোগে গত ১১ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের তৃতীয় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ এইচ এম শফিকুল ইসলামের আদালতে মামলাটি সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য ধার্য ছিল। সে সময় সাক্ষী না আসায় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ সদস্য, চিকিৎসকসহ অপরাপর ৩৪ জন সাক্ষীর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়। তারই প্রেক্ষিতে পরবর্তী শুনানিতে আরো তিনজন সাক্ষী সাক্ষ্যদান করেন।
উল্লেখ্য, ২০০৩ সালের ১৮ নভেম্বর রাতে বাঁশখালীর সাধনপুর ইউনিয়নের শীলপাড়ায় তেজেন্দ্র লাল শীলের বাড়িতে একই পরিবারের ১১ জনকে পুড়িয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। সেদিন নির্মম খুনের শিকার হয়েছিলেন তেজেন্দ্র লাল শীল (৭০), তার স্ত্রী বকুল বালা শীল (৬০), ছেলে অনিল কান্তি শীল (৪২) ও স্ত্রী স্মৃতি রাণী শীল (৩০), তাদের মেয়ে মুনিয়া শীল (৭) ও রুমি শীল (১১), চারদিন বয়সী শিশু কার্তিক শীল, তেজেন্দ্রর ছোট ভাই শচীন্দ্র শীলের মেয়ে বাবুটি শীল (২৫), প্রসাদী শীল (১৭), অ্যানি শীল (১৫) এবং তেজেন্দ্র শীলের বেয়াই বান্দরবান থেকে বেড়াতে আসা দেবেন্দ্র শীল (৭৫)।
নিহত তেজেন্দ্র শীলের পুত্র বিমল কান্তি শীল বলেন, স্বজন হারানোর ২০ বছর পূর্তি হচ্ছে কাল (আজ)। পোড়া ভিটায় করা স্মৃতি সৌধে স্বজনদের স্মরণে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাব। বর্তমান রাজনৈতিক ও প্রাকৃতিক অবস্থা ভালো না হওয়ায় বড় কোনো আয়োজন রাখা সম্ভব হচ্ছে না। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন যাবত এ মামলা নিয়ে নানা টানাপোড়েনে আছি। রায় কখন হবে জানি না।
মামলার ব্যাপারে চট্টগ্রাম জেলা ও দায়রা জজ আদালতের কৌসুলি শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী বলেন, পুরোনো মামলা হওয়ায় সাক্ষীদের অনেকে সাক্ষী দিতে আসেন না। কয়েকজন হাজির হলেও কিছু বলতে রাজি হয় না। মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তির আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, এখন গুরুত্বপূর্ণ আরও কয়েকজনের সাক্ষ্য নিয়ে মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তি করার চেষ্টা করছে রাষ্ট্রপক্ষ। আশা করা যায় আগামী বছরে মামলাটি নিষ্পত্তি করা যাবে।