চট্টগ্রামের মাঠটা যেন লাকি মাঠে পরিণত হয়েছে সাকিবের দল বরিশালের জন্য। আগের দিন স্বাগতিক চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের বিপক্ষে দুইশর বেশি স্কোর গড়ে হারিয়েছিল স্বাগতিকদের। গতকাল হারিয়েছে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সকে। ইমরুল কায়েসের দলের বিপক্ষে সাকিবের দলের জয় ১২ রানের। দলের এই জয়ে ব্যাট হাতে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন সাকিব। ৮১ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলার পাশাপাশি উইকেটও নিয়েছেন একটি। এমন আলো ঝলমলে পারফরম্যান্সের দিনে সাকিব দলকে উপহার দিয়েছেন টানা দুটি সহ চার ম্যাচের তিনটিতে জয়। মাঠের বাইরে সাকিবকে নিয়ে হাজারো কথা। কিন্তু মাঠে সাকিব যেন অন্য ধাতুতে গড়া। আর সেটাই বারবার প্রমান করে যাচ্ছেন তিনি। ব্যাটে নাহয় বলে দলকে নিয়ে যাচ্ছেন টেনে। গতকাল যেমন নিয়ে গেলেন ব্যাট হাতে। সাকিবের ঔজ্জল্য ছড়ানোর দিনে চার ম্যাচের তিনটিতে জিতে পয়েন্ট তালিকার দ্বিতীয় স্থানে বরিশাল। টানা চার ম্যাচে জিতে সবার উপরে সিলেট স্ট্রাইকার্স।
টসে হেরে ব্যাট করতে নামা বরিশাল শুরুতেই হারায় মেহেদী হাসান মিরাজকে। দলের খাতায় ২৬ রান যোগ হতেই ফিরেন ৬ রান করা মিরাজ। এনামুল এবং চতুরঙ্গা মিলেও বেশিদুর এগুতে পারেননি। ১২ বলে ২১ রান করে ফিরেছেন চতুরঙ্গা। এরপর ক্রিজে আসেন সাকিব। আর তাতেই বদলে যেতে থাকে খুলনার ব্যাটিং এর চেহারা। সাকিব একপ্রান্ত আগলে রেখে দলকে এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকেন। অপর প্রান্তে তাকে কেউ তেমন সঙ্গ দিতে পারেনি। তৃতীয় উইকেট হিসেবে এনামুল ফিরেছেন ২০ বলে ২০ রান করে। ইব্রাহিম জাদরান কিছুটা সঙ্গ দেওয়ার চেষ্টা করলেও ব্যর্থ হয়েছেন তিনি। ফিরেছেন ২০ বলে ২৭ রান করে।
এরপর ইফতেখার এবং মাহমুদউল্লাতো চরম ব্যর্থ হয়েছেন। ইফতেখার ৫ রান করলেও মাহমুদ উল্লাহ রানের খাতাও খুলতে পারেননি। তবে আস্থায় অবিচল ছিলেণ সাকিব। মাঠের চারপাশে চার আর ছক্কার ফুলঝুড়ি ছড়িয়েছেন। নিজের হাফ সেঞ্চুরিটাকে এক সময় সেঞ্চুরিতে নিয়ে যাওয়ার সুযোগও ষ্টি হয়েছল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সাকিব সেটা পারেননি।তবে খেলেছেন বিপিএলে নিজের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রানের ইনিংস। করেছেন ৪৫ বলে ৮১ রান। যেখানে চার মেরেছেন ৮টি আর ছক্কা ৪টি। এর আগে বিপিএলের প্রথম আসরে এই খুলনার হয়ে ৪১ বলে ৮৬ রান করেছিলেন। যা টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে তার সেরা ইনিংস। গতকাল অবশ্য সেটাকে টপকে যাওয়ার সুযোগ ছিল। কিন্তু পারেননি সাকিব। তবে তাকে ফেরাতে পারেনি কুমিল্লার বোলাররা। সাকিবের ঝড়ো ইনিংসের উপর ভর করে খরুণা টাইগার্সের স্কোর গিয়ে দাঁড়ায় ১৭৭ রানে। কুমিল্লার পক্ষে ৪টি উইকেট নিয়েছেন তানভীর ইসলাম।
জবাবে ব্যাট করতে নামা কুমিল্লার ইনিংস শুরু করতে নামেন লিটন দাশ এবং মোহাম্মদ রিজওয়ান। আগের দিন করাচিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে শেষ ওয়ানডে ম্যাচে খেলা রিজওয়ান ঢাকায় এসে হেলিকপ্টার যোগে সকালে আসেন চট্টগ্রামে। এরপর নামেন মাঠে। তবে বেশিদূর টানতে পারেননি দলকে। ফিরেছেন ১১ বলে ১৮ রান করে। এরপর লিটন দাশও এগুতে পারেনি বেশিদূর। রান আউটের শিকার হয়ে ফেরার আগে করেন ২৬ বলে ৩২ রান। ম্যাচে তখনো নিয়ন্ত্রণ ছিল কুমিল্লার।
কিন্তু বড় জুটি গড়তে পারেনি একটিও। ১০০ রানে পৌছাতে ওয়ালটন, ইমরুল কায়েস এবং জাকির আলিকে হারায় কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। তবে ষষ্ঠ উইকেটে মোসাদ্দেক হোসেনকে নিয়ে সম্ভাবনা জাগিয়ে তুলেছিলেন খুশদিল শাহ। কিন্তু তাদের ৫৪ রানের জুটি ভাঙতেই শেষ কুমিল্লার সম্ভাবনা। ১৯ বলে ২৭ রান করে মোসাদ্দেক ফিরলে ভাঙ্গে এজুটি। এরপর একপ্রান্ত আগলে রাখা খুশদিল শাহ পরাজয়ের ব্যবধানটা কমিয়েছে মাত্র। ২৭ বলে ৪৩ রান করে অপরাজিত ছিলেন এই পাকিস্তানী। মেরেছেন একটি চার এবং চারটি ছক্কা। শেষ পর্যন্ত ১৬৫ রানে থামে কুমিল্লার ইনিংস। ম্যাচ সেরা হয়েছেন সাকিব আল হাসান।