কালাকানুন হিসেবে কুখ্যাতি পাওয়া সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। গতকাল বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে ‘সাইবার নিরাপত্তা আইন (রহিতকরণ) অধ্যাদেশ, ২০২৪’–এর খসড়ায় নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়। খবর বিডিনিউজের।
পরে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের ভেটিং সাপেক্ষে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ ‘সাইবার নিরাপত্তা আইন (রহিতকরণ) অধ্যাদেশ, ২০২৪’ উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য তুলবে। এর বদলে সাইবারস্পেসে ‘সেইফটি ও সিকিউরিটি’ নিশ্চিত করার জন্য তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সহায়তায় একটি পৃথক আইনের খসড়া আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে উপস্থাপন করবে। দেশের সাংবাদিক, আইনজীবী, বুদ্ধিজীবীদের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলোর আপত্তি ও উদ্বেগের মধ্যে গত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ২০১৮ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পাস হয়।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ব্যাপক সমালোচিত ৫৭ সহ কয়েকটি ধারা বাতিল করে নতুন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রণয়ন করা হলেও পুরনো আইনের বাতিল হওয়া ধারাগুলো নতুন আইনে রেখে দেওয়ায় এর অপপ্রয়োগের শঙ্কা ছিল উদ্বেগের কেন্দ্রে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় গ্রেপ্তার লেখক মুশতাক আহমেদ ২০২১ সালে কারাগারে মারা যাওয়ার পর ওই আইন বাতিলের দাবিতে ক্ষোভ–বিক্ষোভ চলছিল।
এরপর আইনের অপব্যবহার বন্ধে তখনকার আইনমন্ত্রী আনিসুল হক আশ্বাস দিলেও সংবাদকর্মীসহ বিভিন্ন ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার থেমে থাকেনি। ২০২৩ সালের মার্চে এক প্রতিবেদনকে কেন্দ্র করে একজন সাংবাদিককে ভোররাতে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে পরে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর ঘটনায় ওই আইন বিলোপের দাবি নতুন করে আলোচনায় আসে।
গত অগাস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর নানা ক্ষেত্রে সংস্কারের দাবির মধ্যে সব কালাকানুন বাতিল বা সংস্কারের দাবিও সামনে আসে। ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি এবং তথ্য ও সমপ্রচার উপদেষ্টা নাহিদ উপদেষ্টা গত সোমবার বলেন, এক সপ্তাহের মধ্যে আইনটি বাতিল হবে এবং এ আইনের অধীনে যত মামলা হয়েছে সব মামলাও বাতিল হবে। শুধু এই আইন নয়, মত প্রকাশে বাধা সৃষ্টি করে এমন সব আইন পর্যালোচনা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছিলেন তিনি।