সাইবার অপরাধের দুঃসহ গতিপ্রবাহ

ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী | শনিবার , ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ at ৭:৪৬ পূর্বাহ্ণ

এটি সর্বজনবিদিত যে, বিশ্বায়নের কথিত উন্নয়ন পরিমণ্ডলে দৃশ্যমান অবকাঠামো ও জীবিকার কৌশল অবলম্বন অনেকক্ষেত্রে ইতিবাচক পরিবর্তন সাধন করলেও টেকসই জীবনমান প্রতিষ্ঠায় এর প্রভাব কতটুকু অর্থবহ; তা গভীর বিশ্লেষণের দাবি রাখে। সংস্কৃতির অসম অগ্রগতির দোলাচলে বস্তুগত সংস্কৃতির পর্যাপ্ত প্রসারমানতায় অবস্তুগত সংস্কৃতি তথা ঐতিহ্য-কৃষ্টি-মূল্যবোধ-সততা-নৈতিকতা-মানবিকতা ইত্যাদির পরিপুষ্টতা অর্জনে পুরোবিশ্ব যে পিছিয়ে পড়ছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। নিত্যনতুন শোষণ-শাসন প্রক্রিয়া, বৈষম্যের দুর্ভেদ্য প্রাচীর, ধনী-দরিদ্র্য রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে অনাধিকার ক্ষমতার প্রয়োগ-বিধিনিষেধের বিভাজন সর্বত্রই উপনিবেশ-সাম্রাজ্যবাদী চরিত্রের অনাকাঙ্ক্ষিত রূপ পরিগ্রহ করে চলছে। রাষ্ট্র-জনগোষ্ঠীর মধ্যে নানামুখী দূরত্ব কমিয়ে ধরিত্রীকে ছোট-কাছাকাছি নিয়ে আসার পরিকল্পনা যেন ভেস্তে যেতে বসছে। পক্ষান্তরে তথ্যপ্রযুক্তির অপ্রতিরোধ্য অগ্রগতি সামাজিক সুফল ভোগের পরিবর্তে কুফলের হীন অভিপ্রায়ে হচ্ছে পর্যুদস্ত। যথার্থ সতর্কতা ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কার্যকর প্রতিক্রিয়া প্রকৃতঅর্থে গুরুত্ব না পেলে বাংলাদেশসহ বিশ্বের ভবিষ্যত অন্ধকারের তলানীতে গিয়ে পৌছুবে- নিঃসন্দেহে তা বলা যায়।
বিরাজিত অগ্রগণ্য সংকট হিসেবে সাইবার অপরাধ বা বিপুল প্রচলিত সাইবার ক্রাইম দ্রুততম সময়ের মধ্যে দুঃসহ পরিবেশ নির্মাণে প্রচণ্ড শক্তিমান। ইন্টারনেটের মাধ্যমে তথ্য চুরি-বিকৃতি, মানি লন্ডারিং, জালিয়াতি, ব্ল্যাকমেইল ইত্যাদি কর্মকাণ্ডগুলোকে সাধারণত সাইবার অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়। মূলতঃ ইন্টারনেটের মাধ্যমে সংঘটিত সকল ধরনের অপরাধই সাইবার অপরাধের অন্তর্ভুক্ত। সাইবার অপরাধের একবারে প্রথম পর্যায়ে রয়েছে হ্যাকিং। কম্পিউটার, মোবাইল বা অন্য যেকোন ইলেকট্রনিকস ডিভাইস, সোসাল একাউন্ট, বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ওয়েবসাইট বা ই-কমার্স ওয়েবসাইটের তথ্য বা ক্রেডিট কার্ডের নম্বর হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে প্রতিনিয়ত ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। বিভিন্ন পর্ণসাইটে ভিজিটকারী ব্যক্তির ডিভাইস ক্ষতিকর কম্পিউটার ভাইরাস দিয়ে যেকোন সময় হ্যাকাররা হ্যাক করে ফেলে। মাদক থেকে শুরু করে নারী-শিশু পাচার সবই এখন ইন্টারনেট প্রক্রিয়ায় সংঘটিত হচ্ছে। বিশ্বব্যাপি মাদক ব্যবসায়ীরা অতি গোপনে ওয়েবসাইটের মাধ্যমে মাদকদ্রব্যের ক্রয়-বিক্রয় করে যাচ্ছে।
বর্তমানে সাইবার অপরাধের অন্যতম বৃহৎ অনুষঙ্গ হচ্ছে নারী নির্যাতন। মেয়েদের সোসাল মিডিয়া একাউন্ট হ্যাক করে ব্যক্তিগত তথ্য-যৌন দৃশ্য প্রকাশের হুমকি বা মেয়েদের ছবি ব্যবহার করে ভুয়া আইডি খোলার মতো সাইবার অপরাধ এখন নিত্যনৈমিত্তিক বিষয়ে পরিণত হয়েছে। এছাড়াও প্রযুক্তির অপব্যহারে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স দিয়ে মেয়েদের ফেইস ব্যবহার করে কৃত্রিম যৌন দৃশ্য তৈরি করে ইন্টারনেটে প্রকাশের ফলে লাখ লাখ মেয়ে ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ার পাশাপাশি অনেকেই আত্মহননে উদ্বুদ্ধ হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে হ্যাকাররা ফোন কল-মেসেজ বা ইমেইলের মাধ্যমে আর্থিক লেনদেনের প্ল্যাটফর্ম বা বিভিন্ন কোম্পানি থেকে লক্ষ টাকার লটারির লোভ দেখিয়ে মানুষকে বোকা বানিয়ে বিশাল অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। অদক্ষ ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরাই সচরাচর সাইবার অপরাধের শিকারে বিপর্যস্ত। প্রতিবছর সারাবিশ্বে সাইবার অপরাধের জন্য শত শত কোটি ডলার ক্ষতি হচ্ছে। কম্পিউটার ইকোনমিক্স জরিপ ২০০৬ অনুযায়ী সারাবিশ্ব ভাইরাসের কারণে ১৩ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।
১৮ জুন ২০২১ প্রকাশিত সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশনের প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম দেশে সংঘটিত সাইবার অপরাধের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। এতে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে ১৮ থেকে ৩০ বছর বয়সী মেয়েরা। ভুক্তভোগীদের মধ্যে ১৮ বছরের কম ১০ দশমিক ৫২ শতাংশ, ১৮ থেকে ৩০ বছরের কম ৭৩ দশমিক ৭১ শতাংশ, ৩০ থেকে ৪৫ বছর ১২ দশমিক ৭৭ শতাংশ এবং ৪৫ বছরের বেশি ৩ শতাংশ। লিঙ্গ ভিত্তিক পরিসংখ্যানে দেশে সাইবার অপরাধের শিকার ভুক্তভোগীদের ৫১ দশমিক ১৩ শতাংশ নারী এবং ৪৮ দশমিক ৮৭ শতাংশ পুরুষ। অপরাধের ধরণ ব্যাখ্যায় প্রতিবেদনে বলা হয়েছে অ্যাকাউন্ট জাল ও হ্যাক করে তথ্য চুরির মাধ্যমে অনলাইনে সবচেয়ে বেশি অনিরাপদ বাংলাদেশের নারীরা। গড়ে অনলাইনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভুয়া অ্যাকাউন্টে অপপ্রচারের শিকার হওয়া ১৪ দশমিক ২৯ শতাংশ নারীর বিপরীতে পুরুষের সংখ্যা ১২ দশমিক ৭৮ শতাংশ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের আইডি হ্যাকিং/তথ্য চুরির ঘটনা নারী-পুরুষের অনুপাতে পুরুষের অবস্থান দ্বিগুনেরও বেশি। অপরাধের ধরনে তৃতীয় অবস্থানে থাকা ছবি বিকৃতির মাধ্যমে অনলাইনে অপপ্রচারে নারী ও পুরুষের হার যথাক্রমে ১২ দশমিক ০৩ শতাংশ ও ৩ দশমিক ৭৬ শতাংশ। অনলাইনে হুমকিমূলক বার্তা প্রাপ্তির হার নারী ৯ দশমিক ৭৭ শতাংশ এবং পুরুষ ৩ দশমিক ৭৬ শতাংশ। উল্লেখ্য প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে ভুক্তভোগীদের ৩০ শতাংশই জানেন না এর বিরুদ্ধে কিভাবে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হয় আর বাকীদের মধ্যে ২৫ শতাংশ অভিযোগ করে কোনো লাভ হবে না ভেবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিকট অভিযোগ করেন না।
৫ ডিসেম্বর ২০২১ গণমাধ্যম সূত্র অনুযায়ী, সাইবার অপরাধের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় ঢাকা মহানগর পুলিশের ৫০টি থানায় পৃথক সাইবার বিভাগ চালু করা হচ্ছে। সম্প্রতি ঢাকা রেঞ্জের প্রতিটি জেলায় এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পুলিশ সদর দপ্তরের সূত্রমতে শীঘ্রই দেশের সব থানাতে সাইবার অপরাধের জন্য আলাদা বিট গঠন করা হবে। সাইবার অপরাধ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে পুলিশের মহাপরিদর্শক বলেন, গ্রাম পর্যায়েও প্রযুক্তির ছোঁয়া লাগার কারণে সাইবারকেন্দ্রিক অপরাধের মাত্রা দিনকে দিন বেড়েই চলেছে। এ জন্য সাইবার নিরাপত্তার বিষয়টি নতুন করে ভাবা হচ্ছে। দেশের সব থানায় সাইবার-সংক্রান্ত অপরাধের বিষয়ে মামলা হচ্ছে। এসব মামলার তদন্ত দ্রুত করতে প্রতিটি থানায় পর্যায়ক্রমে সাইবার বিভাগ চালু করা হবে। অনেকেই প্রযুক্তির কারণে সাইবার অপরাধের শিকার হচ্ছেন। শুধু ব্যক্তি বা সমাজ নয়; রাষ্ট্রও এর বাইরে নয়। গত এক বছরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে হয়রানিতে পর্যবসিত হয়েছেন ১৭ হাজারের বেশি নারী। সাইবার অপরাধ বিশেষজ্ঞদের মতে, সাইবার অপরাধ নিয়ে গভীরভাবে ভাবার সময় এসেছে। সাইবার অপরাধ সমাধানের জন্য সংশ্লিষ্টদের সক্ষমতা বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। অপরাধ মোকাবেলার সঙ্গে যুগোপযোগী প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। একই সঙ্গে প্রয়োজন সাধারণ মানুষকে সচেতন করার জন্য দেশব্যাপী ইতিবাচক প্রচারণা।
৩ জানুয়ারি ২০২১ ৩৭তম বিসিএস (পুলিশ) ক্যাডারের শিক্ষানবিশ সহকারী পুলিশ সুপারদের প্রশিক্ষণ সমাপনী অনুষ্ঠানে দেশের সাইবার অপরাধ দমনে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘এখন আধুনিক প্রযুক্তির যুগ। সাইবার ক্রাইম ব্যাপকভাবে বাড়ছে। এটাকে আমাদের দমন করতে হবে। ৯৯৯ নম্বরে ফোন করলে পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে সাহায্য করে যাচ্ছে এবং মানুষের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে। প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে নানা ধরনের অপরাধ সংঘটিত হয়। সেগুলো আমাদের দমন করতে হবে। আরেকটা বিষয় হচ্ছে ফেসবুক, বিভিন্ন ধরনের অ্যাপস দিয়ে সেগুলোর মাধ্যমে অনেক অপরাধ হচ্ছে। বিশেষ করে কিশোর বা উঠতি বয়সের ছেলে-মেয়েরা এ ধরনের অপরাধের সঙ্গে জড়িত হচ্ছে। সেখান থেকে তাদের বের করে নিয়ে এসে সুস্থ জীবনে ফিরে আনার ব্যবস্থা নিতে হবে। সাধারণভাবে গুজব রটানো বা এ ধরনের কাজ যাতে করতে না পারে সেদিকে সজাগ দৃষ্টি দিতে হবে।’
২২ সেপ্টেম্বর ২০২১ গণমাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে, ঢাকা সাইবার ট্রাইব্যুনালের দৈনন্দিন কার্যতালিকাসহ মামলার সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২০১৩ সাল থেকে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এ ট্রাইব্যুনালে বিচারের জন্য মামলা এসেছে ২ হাজার ৬৬৯টি যার মধ্যে হ্যাকিং, কম্পিউটার সিস্টেম নষ্ট, কম্পিউটার সোর্স কোড পরিবর্তন, সংরক্ষিত সিস্টেমে প্রবেশ সংক্রান্ত মামলার সংখ্যা মাত্র ১১৩ যা মোট মামলার ৪ দশমিক ২৩ শতাংশ। ট্রাইব্যুনালের সরকারি কৌসুলি গণমাধ্যমকে জানান, সাইবার অপরাধের মামলা বেশি হচ্ছে মূলতঃ অনলাইনে মানহানি, মিথ্যা তথ্য, অশ্লীল ছবি ও তথ্য প্রকাশের অভিযোগে। সে তুলনায় হ্যাকিংসহ অন্য গুরুতর অপরাধের মামলা কম এবং সাজাও নগণ্য। তথ্য-যোগাযোগপ্রযুক্তি ও সাইবার অপরাধ বিশেষজ্ঞদের মতে, ফেসবুক-ইমো-লাইকি-টিকটকের মতো সামাজিক গোযাযোগমাধ্যমের ওয়েবসাইট ও অ্যাপস ব্যবহারকারীর অ্যাকাউন্ট হ্যাকড বেশি হচ্ছে। এসব ঘটনায় করা মামলার আসামিরা বয়সেও তরুণ। পিবিআইয়ের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান গণমাধ্যমকে জানান, হ্যাকিংয়ের মামলা বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে কম বয়সী ছেলেরা ফেসবুক-ইমো-লাইকি ব্যবহারকারীর অ্যাকাউন্ট হ্যাকিংয়ের সঙ্গে জড়িত। আর একাধিক সংঘবদ্ধ চক্র বিকাশ-নগদ-রকেটের মতো আর্থিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের গ্রাহকের অ্যাকাউন্ট এবং এটিএম বুথ হ্যাকিংয়ে জড়িত। তিনি আরও বলেন, অভিযুক্ত ব্যক্তিদের মূল কাজ হচ্ছে ব্ল্যাকমেল করা এবং অর্থ হাতিয়ে নেওয়া।
নিকট অতীতে প্রকাশিত গণমাধ্যম তথ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সাইবার অপরাধ সম্পর্কে জানা যায়। অপরাধগুলোর মধ্যে রয়েছে- শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইটে তথ্য জালিয়াতি করে জাল সনদ তৈরি, ব্ল্যাকমেল করে ধর্ষণ এবং এর ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া, ফেসবুক-হোয়টসঅ্যাপ-মেসেঞ্জার-ইনস্টাগ্রাম-স্কাইপে ভুয়া আইডি খুলে জালিয়াতি ও প্রতারণা, বিভিন্ন অনলাইন পোর্টালে মিথ্যা ও মানহানিকর তথ্য প্রচার, আইডি হ্যাক, ডেবিট-ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতি-প্রতারণা, অনলাইনে প্রশ্ন ফাঁস ও জুয়া খেলা ইত্যাদি। আইন করাসহ নানা পদক্ষেপে এমন অপরাধ না কমার পরিবর্তে দিন দিন ভয়ানকরূপ ধারণ করছে। সাইবার সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি), তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের হেল্প ডেস্ক ও ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারে (এনটিএমসি) সাইবার অপরাধ নিয়ে প্রতিদিনই অভিযোগ জমা পড়ছে।
ইতিমধ্যে আইজিপি নামে, মন্ত্রীর সহকারী একান্ত সচিব পরিচয়ে প্রতারণা, নারী পুলিশের আপত্তিকর ছবি ছড়ানো, পাত্রী চাই বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রতারণা, গৃহবধুকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করে ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়া, অনলাইনে জঙ্গিবাদ প্রচার ও জাতীয় সংগীত অবমাননার মতো সাইবার অপরাধের ঘটনায় অনেক অপরাধী গ্রেফতার হয়েছে। ডিএমপি সাইবার সংশ্লিষ্ট তথ্যমতে, ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট, পর্নোগ্রাফি আইন, আইসিটি আইন ও টেলিকমিউনিকেশন আইনে সারা দেশে ২০১৫ সালের ৬৩৮টি মামলার বিপরীতে ২০২০ সালে এই সংখ্যা দাঁড়ায় ১৪৫৯টিতে। অধিকাংশক্ষেত্রে ভুক্তভোগীরা হয়রানি ও সম্মানের কথা ভেবে এসব বিষয়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে অভিযোগ করে না। সাইবার অপরাধ দমনে সরকার জোরালোভাবে কার্যক্রম শুরু করলেও বিচার ও শাস্তির হার খুবই নগণ্য। এ ছাড়া স্বচ্ছ ধারণা না থাকা ও প্রতিকার পেতে সময়ক্ষেপণ হওয়ায় আইনের আশ্রয় নিতে অনীহা বেশি। অনেকেই অনলাইনকেন্দ্রিক অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড প্রতিরোধে বিভিন্ন অ্যাপস বন্ধের প্রয়োজনীয়তার কথা বললেও প্রযুক্তিবিদদের মতে অ্যাপস বন্ধ করা যেমন কঠিন তেমনি সেগুলো বন্ধ করেও লাভ নেই। তাঁরা সাইবার অপরাধ দমনে পুলিশের সক্ষমতা বাড়ানো এবং প্যারেন্টাল গাইডেন্সের উপর জোর দেন।
৬ সেপ্টেম্বর ২০২১ সংবাদ সম্মেলনে বিটিআরসির সক্ষমতা তুলে ধরে সম্মানিত ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী বলেন, ‘বিটিআরসি শুধু ইউটিউব, ফেসবুকের কোনো কনটেন্ট সরানোর অনুরোধ করতে পারে। সেই কনটেন্ট তাদের কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ড পরিপন্থী হলে ফেসবুক কর্তপক্ষ তা অপসারণ করে, নয়তো করে না। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী বা সরকারের পক্ষে ইন্টারনেট জগতে কোনো কিছুর পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়।’ এর পূর্বেও অপর সভায় তিনি বলেছিলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ সালে প্রণয়ন করা হলেও কিছু সীমাবদ্ধতার কারণে ২০২১ সালে এসেও আইনটি অপরাধ দমনে বিস্তৃত ভূমিকা রাখছে না। আইনের অপপ্রয়োগ মূল সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই অবস্থায় আইনের প্রয়োজনীয় সংশোধন করা সম্ভব। সচেতন মহলের ধারণা উল্লেখ্য তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে প্রায়োগিক কর্মকৌশল নির্ধারণ ও বাস্তবায়নে ন্যূনতম অবজ্ঞা অদূর ভবিষ্যতে সাইবার অপরাধের গতিপ্রবাহ করোনা অতিমারীর চেয়েও ভয়ঙ্কর রূপে আবির্ভূত হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে।
লেখক : শিক্ষাবিদ, সাবেক উপাচার্য চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

পূর্ববর্তী নিবন্ধহল্যান্ড থেকে
পরবর্তী নিবন্ধঅনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ ক্রিকেট অষ্টম স্থান পেল চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ