চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের ৬২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের সংবর্ধনা ও সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেন, সাংবাদিকরা সমাজের অগ্রসর অংশ, সমাজকে পথ দেখায়। সমাজের অনুন্মোচিত বিষয়গুলো উন্মোচিত করে। সমাজ, রাষ্ট্র–সমাজপতি যেদিকে তাকান সেদিকে তাদের দৃষ্টি আবদ্ধ করেন। এমন অনেকগুলো বিষয় আছে যেগুলো রাষ্ট্র দেখে না। রাষ্ট্র পরিচালনার সাথে যারা যুক্ত, তারাও দেখে না। কিংবা সমাজ যারা চালায়, তারাও দেখে না, দেখার প্রয়োজনও মনে করে না। এমন অনেক বিষয় সাংবাদিকরা উন্মোচিত করে। যেটি দেশ চালাতে সমাজ ও রাষ্ট্রকে সঠিকখাতে প্রবাহিত করার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে। গতকাল ৬ জুন রাত ৯টায় চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের বঙ্গবন্ধু হলে এ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি– সাধারণ সম্পাদকদের সংবর্ধনা প্রদান অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি (১৯৮৫–৮৬) দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেকের পক্ষে সম্মাননা স্মরক গ্রহণ করেন দৈনিক আজাদীর নির্বাহী সম্পাদক শিহাব মালেক।
চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক (১৯৬৫–৭২) দৈনিক আজাদীর সাবেক সম্পাদক অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদের পক্ষে সম্মাননা স্মারক গ্রহণ করেন অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদের পুত্র সাংবাদিক মোহাম্মদ জহির।
অনুষ্ঠানে ১৯৬২ সাল থেকে সর্বশেষ ২০২২ সাল পর্যন্ত চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে দায়িত্ব পালনকারী সাবেক সভাপতি – সাধারণ সম্পাদকগণকে ফুলেল শুভেচছা জানানোর পাশাপাশি সম্মাননা স্মারক ও উত্তরীয় ৫ পরিয়ে সংবর্ধনা জানানো হয়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রী এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, বিএনপিসহ কিছু গোষ্ঠি আছে তারা চোখে ভালো কিছু দেখেন না। প্রকৃতপক্ষে গত ১৫ বছরে প্রতিটা বাজেট বাস্তবায়নের হার হচ্ছে ৯২ থেকে ৯৭ শতাংশ। আজকে সংসদে প্রায় আট লক্ষ হাজার কোটি টাকার বাজেট পেশ হয়েছে। প্রতিবার বাজেট পেশ করার পর আপনারা দেখবেন বিএনপির পক্ষ থেকে একটা সংবাদ সম্মেলন করা হয়, বলা হয় এই বাজেট গণবিরোধী, গরীব মারার বাজেট, এই বাজেটে কোনো উপকার হবে না।
তিনি বলেন, আবার যারা নিজেদের জ্ঞানী বলে মনে করেন, তারা কোনো কিছুতে ভুল না ধরলে উনি যে জ্ঞানী এটাতো বুঝানো যায় না। সেজন্য সবকিছুতে ভুল ধরা উনাদের অভ্যাস। সেজন্য তারা বলেন যে, এই বাজেট বাস্তবায়ন যোগ্য নয়।
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, বাজেটের আকার গত ১৫বছরে সাড়ে ১১গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। মাথাপিছু আয় সাড়ে পাঁচগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। জিডিপির আকার প্রায় ছয়গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এবং বাংলাদেশে দারিদ্রসীমার নিচে থাকা জনগোষ্ঠি ছিল ৪১ শতাংশ। সেখান থেকে ১৮.৭ শতাংশে নেমেছে। অতিদারিদ্রতা ২২শতাংশ ছিল, সেখান থেকে সাড়ে ৫শতাংশে নেমেছে।
তিনি বলেন, বাজেট যদি গরীবের উপকারে না আসত, তাহলে দারিদ্রতা ও অতিদারিদ্রতা কমত না। মানুষের আয় সাড়ে ৫গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে ডলারের অংকে, টাকার অংকে আরো বেশি। এটি সম্ভবপর হয়েছে বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী ও তার নেতৃত্বাধীন সরকারের বাস্তবসম্মত বাজেট প্রণয়ন এবং সেই বাজেট বাস্তবায়নের কারণে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সবকিছুতে না বলার যে অপসংস্কৃতি এটি দেশের উন্নয়ন অগ্রগতির জন্য বাধা।
সাংবাদিকরা সরকারের ভুলত্রুটি তুলে ধরবেন, সেটিকে আমরা স্বাগত জানাই। কাজকে পরিশুদ্ধভাবে করার ক্ষেত্রে সেটি সহায়ক হয়। অনেক সময় দেখা যায় কিছু কিছু প্রতিবেদন এমন ভাবে হয় সেগুলো দেশের জন্য ক্ষতিকারক। ড. হাছান বলেন, আসলে বাংলাদেশে বিএনপি জামাতসহ কিছু বিরোধী রাজনৈতিক দল আছে, আর কিছু গোষ্ঠি আছে, পদ্মাসেতু দিয়ে গাড়ি চালিয়ে ওপারে গিয়ে বলে, দেশে কোনো উন্নয়ন হয়নি। ঢাকায় এলিভেটেড এক্সপ্রেস দিয়ে গাড়ি চালিয়ে গিয়ে বলে এসব শুধু বড় লোকের জন্য। এলিভেটেড এক্সপ্রেস দিয়ে কিন্তু পাবলিক বাসও চলে।
চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সভাপতি সালাউদ্দিন মো. রেজার সভাপতিত্বে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লাহ শাহরিয়ারের সঞ্চালনায় শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক দেবদুলাল ভৌমিক।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ টি এম পেয়ারুল ইসলাম, সিডিএ’র চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ ইউনুছ, মহানগর পুলিশ কমিশনার কৃষ্ণপদ রায়, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাশার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান, লায়ন আলহাজ্ব রফিক আহমদ, চট্টগ্রাম চেম্বারের প্রেসিডেন্ট ওমর হাজ্জাজ, মজহারুল হক শাহ চৌধুরী, রাউজান উপজেলা চেয়ারম্যান এহসানুল হায়দার চৌধুরী বাবুল, বিজিএমইএর প্রথম সহ সভাপতি নজরুল ইসলাম, হাজী সাহাব উদ্দিন। অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব ব্যবস্থাপনা কমিটির সকল কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে গতকাল সকালে বেলুন ও ফেস্টুন উড়িয়ে দিনব্যাপী প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠান উদ্বোধন করা হয়। এরপর শুরু হয় আনন্দ শোভাযাত্রা। চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব প্রাঙ্গণ থেকে শুরু হওয়া এই শোভাযাত্রা জামালখান ও চেরাগীপাহাড় ঘুরে প্রেস ক্লাবে এসে শেষ হয়।
চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সভাপতি সালাহ্উদ্দিন মো. রেজার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন প্রেস ক্লাব সাধারণ সম্পাদক দেবদুলাল ভৌমিক। অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন যুগ্ম সম্পাদক শহীদুল্লাহ শাহরিয়ার।
সভাপতির বক্তব্যে সালাহ্উদ্দিন মো. রেজা বলেন, উৎসবমুখর পরিবেশে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হচ্ছে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। এ উপলক্ষে সবাইকে প্রাণঢালা শুভেচ্ছা।
স্বাগত বক্তব্যে সাধারণ সম্পাদক দেবদুলাল ভৌমিক বলেন, প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর এ আয়োজন সবার মধ্যে আরো বিশাল উৎসাহ–উদ্দীপনা সৃষ্টি করেছে। যা চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের অগ্রযাত্রাকে আরো গতিশীল করবে। আনন্দ শোভাযাত্রায় অংশ নেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন, জামালখান ওয়ার্ড কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমনসহ বিশিষ্টজনেরা। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে প্রেস ক্লাব নেতৃবৃন্দকে বিভিন্ন সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয়।