র্যাব–পুলিশ, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর, কোস্টগার্ড ও বিজিবির সাঁড়াশি অভিযানেও থামছে না মাদকের ভয়াল আগ্রাসন। প্রতিদিন দেশের অন্যান্য স্থানের মতো মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় র্যাব–পুলিশ ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের অভিযানে ইয়াবা, ফেনসিডিল, গাঁজা ও চোলাই মদ ধরা পড়লেও মাদক বিক্রি থেমে নেই। সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অভিমত, মাদক নির্মূলে সামাজিক আন্দোলনের বিকল্প নেই। পাশাপাশি প্রয়োজন সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা।
এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায় বলেন, বিগত কয়েক মাসে মাদকবিরোধী অভিযানে আমরা বেশ সাফল্য অর্জন করেছি। এক্ষেত্রে থানা পুলিশ, রেলওয়ে পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনী, র্যাবসহ সকল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতা এবং সামাজিক আন্দোলন দরকার।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মো. আজিজুল ইসলাম বলেন, সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা গেলে মাদক কারবার অনেকটা কমে যাবে। মাদক সরবরাহ কমানো, ক্ষতি হ্রাস ও তামাকের চাহিদা কমিয়ে আনা ও ক্ষতির দিক তুলে ধরাই মূলত এখন আমাদের কাজ।
নিয়ন্ত্রক সংস্থা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর প্রতিদিন সারা দেশে গড়ে প্রায় তিনশ অভিযান পরিচালনা করে। এসব অভিযানে মাদকদ্রব্য জব্দের পাশাপাশি হচ্ছে মামলা ও গ্রেপ্তার। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত বছরে গড়ে ৬৫ হাজার ৭১৯টি অভিযান চালিয়েও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না। এসব অভিযান ও বছরব্যাপী অধিদপ্তরের নানা কার্যক্রমের ফলে মাদক কারবার কমার কথা থাকলেও দিন দিন বাড়ছে মামলা, আসামি ও মাদক জব্দের পরিমাণ।
অনুসন্ধানে জানা যায়, নগরীর ১৬ থানার ১২২টির বেশি স্পটে মাদক বিক্রি হয় নিয়মিত। এসব স্পটের কোথাও ইয়াবা, কোথাও গাঁজা, ফেনসিডিল ও হেরোইন বিক্রি হয়। প্রতিটি স্পট নিয়ন্ত্রণ করে একেকজন মাদক বিক্রেতা।
চট্টগ্রাম রেলস্টেশন এখন অপরাধীদের নিরাপদ আখড়ায় পরিণত হয়েছে। এসব নিয়ে অভিযোগ করেও ফল পাওয়া যায় না। প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে ভোর পর্যন্ত স্টেশনে চলে মদ, জুয়া ও পতিতাবৃত্তি। এই এলাকাটি মাদকের প্রধান হাট হিসেবেও পরিচিত। রেলস্টেশন ও আশপাশে চুরি, ছিনতাই, ট্রেনের টিকেট কালোবাজারি, মাদক ব্যবসা, জুয়ার আসর, পতিতাবৃত্তি থেকে শুরু করে সব ধরনের অপরাধ কর্মকাণ্ড চলছে সমানতালে। এসব অপরাধ কর্মকাণ্ডে সক্রিয় আছে অন্তত ৫টি চক্রের অর্ধশত সদস্য। চক্রের হোতাদের বিরুদ্ধে আছে একাধিক মামলাও। সিএমপির দেয়া তথ্য অনুযায়ী, বেশ কয়েকজন একাধিক মামলায় কারাগারে থাকলেও বাকিরা ধরাছোঁয়ার বাইরে।
এদিকে পুলিশ বলেছে, চট্টগ্রামে ইয়াবার বিস্তার ঠেকাতে পুলিশের অভিযান চলছে। তবে পুলিশের অভিযানের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ইয়াবার কেনাবেচা। জানা গেছে, রাঘব বোয়ালের অধীনে শতাধিক ভ্রাম্যমাণ বিক্রেতা রয়েছে।
জিআরপি থানার অদূরে গ্রামীণ মাঠে রাত–দিন সেজেগুজে নানা বয়সের নারী বসে থাকে। রেলস্টেশনভিত্তিক একটি চক্র দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে পতিতাবৃত্তির জন্য তাদের নিয়ে আসে। খদ্দেররা এখানে এসে তাদের সঙ্গে সময় কাটায়। আবার খদ্দেরের পছন্দ অনুযায়ী জায়গায় তাদের নিয়ে যাওয়া হয়। এছাড়া চোরাই মার্কেটও জমজমাট থাকে। ফলে এলাকাটি অপরাধীদের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পায় না।
নগর গোয়েন্দা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মহানগরীর প্রায় প্রতিটি এলাকায় রয়েছে মাদকের ছোট–বড় হাটবাজার। এমন মাদকের স্পটের সংখ্যা সহস্রাধিক। শুধু রেলযোগে প্রতিদিন নগরীতে প্রবেশ করছে কোটি টাকার মাদক। এই মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত রয়েছে একাধিক সন্ত্রাসী।