সাঁতার না জানাই কাল হলো প্রিয়ন্ত ও শাওনের

সন্তান হারিয়ে শোকের সাগরে দুই পরিবার

ইমাম ইমু | শুক্রবার , ২৭ ডিসেম্বর, ২০২৪ at ৬:২৪ পূর্বাহ্ণ

ডিসি পার্ক ঘুরতে যাবে বলে বাসা থেকে বের হয় চট্টগ্রাম মহানগরের আলকরণ নুর আহমদ সিটি কর্পোরেশন স্কুলের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী প্রিয়ন্ত দে (১৬)। সকাল ছয়টার দিকে ঘুরার কথা বলে বের হয়ে দুপুর গড়ালে তার মা তাকে কল করেন। কিন্তু প্রিয়ন্ত কল ধরেননি। মা মনে করেছিলেন সীতাকুণ্ড চন্দ্রনাথ পাহাড়ে গিয়েছেন, এজন্য কল ধরছেন না। দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যা হলে পরিবারের সদস্যদের দুশ্চিন্তা বাড়তে থাকে। এরপর তাকে এদিক ওদিক খোঁজাখুঁজি করতে থাকেন। পরে জানতে পারেন সে বন্ধুদের সাথে মিলে কাপ্তাই ঘুরতে গেছেন। ততক্ষণে প্রিয়ন্ত পানিতে তলিয়ে গেছেন।

অপরদিকে একইদিন মঙ্গলবার খেলতে যাবে বলে বাসা থেকে বের হয় রেলওয়ে পাবলিক স্কুলের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী শাওন দত্ত (১৭)। বের হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যে তার পরিবার জানতে পারেন শাওন ঘুরতে গেছে। কিন্তু ততক্ষণে সে পরিবারের নাগালের বাইরে চলে যায়। সম্পর্কে শাওন ও প্রিয়ন্ত মাসতুতো ভাই। তারা দুইজনই এবার নবম শ্রেণি শেষ করে দশম শ্রেণিতে উঠবেন। স্কুল বন্ধের সুযোগে তারা ঘুরতে যাওয়ার পরিকল্পনা করেন বন্ধুদের সাথে মিলে।

তারা ৯ জন একসাথে রাঙ্গুনিয়া চন্দ্রঘোনা মিশনঘাট থেকে একটি বোট নিয়ে কাপ্তাইয়ে ভ্রমণের উদ্দেশ্যে যায়। কর্ণফুলী নদীর সীতার ঘাট যাওয়ার পর ৯ জনের মধ্যে ৪ জন কর্ণফুলীতে গোসলে নামে। দুজন উঠতে পারলেও প্রিয়ন্ত ও শাওন নদীতে তলিয়ে যায়। মঙ্গলবার দুপুর দুইটার দিকে তারা নিখোঁজ হয়। নিখোঁজ শাওন ও প্রিয়ন্ত দে দুইজনই সাঁতার জানতো না। সাঁতার না জেনে পানিতে নেমে বিপদ ডেকে এনেছে তারা। নিখোঁজ হওয়ার খবর শুনে দুই পরিবারে শোকের মাতম নামে। বিলাপ করে করে কান্নায় ভেঙে পড়েন শাওন ও প্রিয়ন্তের মা। স্বজনরা সাথে সাথে ছুটে যান ঘটনাস্থলে। প্রায় দুইদিন পর গতকাল বৃহস্পতিবার তাদের মরদেহ ভেসে উঠে। মরদেহ উদ্ধার করে অফিসিয়াল কাজ সম্পন্ন করার জন্য তাদের মেডিকেল নিয়ে যাওয়া হয়। আজ তাদের পরিবারের কাছে দুইজনের মরদেহ হস্তান্তর করার কথা রয়েছে।

প্রিয়ন্তরা দুই ভাই। বাবা বিপ্লব দে ইভেন্টের কাজ করেন। আলকরণ এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা তারা। ছেলেকে হারিয়ে শোকের সাগরে ভাসছেন মা তাপসী দে। কিছুক্ষণ পর পর মূর্ছা যাচ্ছেন খিচুনি দিয়ে। ছেলেকে হারিয়ে পাগলপ্রায় মা প্রিয়ন্ত দে বলেন, আমার ছেলে সাঁতার জানে না। সে জন্য কাপ্তাই যাওয়ার কথা আমার কাছে গোপন করেছে। ডিসি পার্ক ঘুরতে যাবে বলে ঘর থেকে বের হয়ে গেছে। বলতে বলতে অজ্ঞান হয়ে পড়েন। প্রিয়ন্ত দের পিসি পপি দে আজাদীকে বলেন, আমার ভাতিজা কাপ্তাই যাওয়ার কথা গোপন করেছে। সে টাকাও নেয়নি। আমরা ভেবেছি সীতাকুণ্ড গেছে। এমন হবে ভাবিনি। কিছুদিন হচ্ছে আমাদের আরেকটা ভাতিজা মারা গেছে, সেই শোক আমরা এখনো কাটিয়ে উঠতে পারিনি। এরমধ্যে এ ঘটনা ঘটল। তার মা কিছুক্ষণ পর পর খিচুনি দিয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ছে। এখন অপেক্ষা শেষবারের মতো দেখার।

অপরদিকে শাওনের মা রূপসী দত্ত ছেলের এমন দুর্ঘটনার খবর শোনার পর থেকে নাওয়াখাওয়া ছেড়েছেন। সারাক্ষণ সৃষ্টিকর্তাকে ডাকছেন। ‘আমার ছেলে সাঁতার জানে না। সে কেন পানিতে নামল? আমাকে বলেছে ঘুরতে যাবে। সে ওখানে কেন চলে গেল।’ এসব বলে বলে বিলাপ করে কান্নায় ভেঙে পড়ছেন শাওনের মা। দুই পরিবারের বাড়িতে শোকের মাতম চলছে। শাওনের বড় ভাই শ্রাবণ দত্ত ঘটনাস্থলে যান ভাইকে খুঁজে পেতে। ভাইকে খুঁজে পেলেও এখনো ভাইয়ের মরদেহ নিয়ে বাড়িতে ফিরতে পারেননি তিনি। শুক্রবার (আজ) মরদেহ হস্তান্তর করবে বলে জানান তিনি। শ্রাবণ দত্ত আজাদীকে বলেন, আমরা দুই ভাই। সে আমাদের না বলে কাপ্তাই এসেছে। এসেই এ বিপদ ডেকে এনেছে। এখন কি আর করবো। নিয়তির লিখনি মেনে তো নিতে হবে। এখন তার শেষ কাজ সম্পন্ন করে অন্তত তার আত্মাকে শান্তি দিতে চাই।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকক্সবাজার জেলা আ.লীগ নেত্রী কাবেরী চট্টগ্রামে গ্রেফতার
পরবর্তী নিবন্ধকক্সবাজার আ. লীগ নেত্রী কাবেরী দেবপাহাড় থেকে আটক