দুর্গাপূজার পর এক দফা দাবি আদায়ে ‘কঠিন কর্মসূচি’ ঘোষণা করবে বিএনপি। ওই কর্মসূচি বাস্তবায়নে দলের নেতাকর্মীদের ‘সর্বোচ্চ প্রস্তুতি’ নিতে নির্দেশনা দিচ্ছে কেন্দ্র। কেন্দ্রীয় এ নির্দেশনাটি গতকাল সোমবার চট্টগ্রাম বিভাগের নেতাকর্মীদের পেঁৗঁঁছে দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
তিনি গতকাল সোমবার নাসিমন ভবনস্থ দলীয় কার্যালয়ে চট্টগ্রাম বিভাগের নেতাদের সাথে মতবিনিময় সভা করেন। বিকেল ৩টা থেকে সাড়ে ৪টা পর্যন্ত ‘ক্লোজ ডোর’ ওই সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় উপস্থিত পাঁচজন নেতার সাথে কথা হয় আজাদীর। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা জানায়, সভায় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে দায়ের হওয়ার মামলার প্রসঙ্গ উঠে আসে। এতে শঙ্কা প্রকাশ করা হয়, দাবি আদায়ে সফল না হলে তাদের জেলে যেতে হবে। দলের চেয়ারপার্সনকেও উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে পাঠানো অনিশ্চিত হবে তখন। তাই সবাই দাবি আদায়ে আন্দোলনে জোর দেন। এক্ষেত্রে ‘কঠোর’ ছাড়া বিদ্যমান সভা–সমাবেশের মত কর্মসূচির মাধ্যমে দাবি আদায় সম্ভব না বলেও মন্তব্য করেন এক নেতা।
আমীর খসরু সভায় কী বলেছেন জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে কেন্দ্রীয় এক নেতা আজাদীকে বলেন, খসরু ভাই বলেছেন এক দফা দাবি আদায়ে সামনে কঠোর কর্মসূচি আসছে। কর্মসূচি বাস্তবায়নে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিতে হবে। দাবি আদায় করতে না পারলে সবাইকে জেলে যেতে হবে। রোডমার্চসহ বিএনপির অতীতের প্রতিটি কর্মসূচি চট্টগ্রামে সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। এবারও সবাইকে সফল করতে হবে।
আমীর খসরু সভায় বলেন, আগামী দিনগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আগামীতে যেই কর্মসূচিই দেয়া হবে সেটার সূচনা আজকে এখান থেকে করছি। বিগত দিনে চট্টগ্রাম বিভাগ যেভাবে সফলতার সাথে আন্দোলনকে ভিন্নমাত্রা নিয়ে যেতে পেরেছে আশা করি আগামীতে আন্দোলনের যেই কর্মসূচি আসবে সেটাকে মাথায় রেখে, দেশবাসীর প্রত্যাশা মাথায় রেখে জনগণকে সম্পৃক্ত করে আন্দোলন করে যেন সরকারকে পদত্যাগ করাতে পারি।
তিনি বলেন, চট্টগ্রামে যে সুনামির কথা আমরা বলেছিলাম সেটা ৫ অক্টোবর সৃষ্টি করেছে। এর আগে চট্টগ্রাম থেকে বিভাগীয় জনসভা শুরু করেছিলাম। এটার উপর ভিত্তি করে সমগ্র বাংলাদেশ তাদের বিভাগীয় কর্মসূচিগুলো সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে, যেটা আমাদের আন্দোলনকে উচ্চমাত্রায় নিয়ে গেছে। তারপর থেকে আমাদের আন্দোলন চলছে।
এদিকে সভা শেষে উপস্থিত সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন আমীর খসরু। এসময় ‘আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে বিদেশির উপর ভর করেছে বিএনপি’ আওয়ামী লীগের এমন অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে আমীর খসরু বলেন, আমরা তো কোনো সময় বলি না, তলে তলে সবকিছু ম্যানেজ করে নিয়েছি। বিএনপি সেটাতে বিশ্বাস করে না। বিএনপি হচ্ছে বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় দল এবং বেগম খালেদা জিয়া সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী। তারেক রহমান সবচেয়ে ডায়ানমিক লিডার। কারও উপর নির্ভর করতে হবে না বিএনপিকে। যারা নির্ভরশীল তাদের হৃদয়ে কম্পন শুরু হয়েছে। কারণ তারা দেশও হারিয়েছে, বিদেশও হারিয়েছে।
‘জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেছেন, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে সমঝোতা করে একটি উপায় বের করা উচিত’, বাস্তবে এমন কোনো সম্ভাবনা আছে কীনা জানতে চাইলে খসরু বলেন, এখানে আওয়ামী লীগ বিএনপির বিষয় না। বিষয়টি হচ্ছে বাংলাদেশের মানুষের মালিকানা ফিরে পাওয়া ও ভোটাধিকার ফিরে পাওয়ার বিষয়। এখানে কোনো দলের বিষয় না। বাংলাদেশের মানুষ ছাড়া কারো সাথে সমাঝোতার কিছু নেই। দেশের মানুষের প্রত্যাশা পূরণে যে সিদ্ধান্তে আসতে হবে, সেটা হচ্ছে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন। এর বাইরে কিছু নেই।
তিনি বলেন, জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে যে তত্ত্বাবধায়সক সরকার এসেছিল, আওয়ামী লীগ সেটা এককভাবে বাতিল করেছে। সেটা ফেরত এনে জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে। কাদের মধ্যে সমাঝোতা হবে সেটা আলোচনার বিষয় না। বাংলাদেশের মালিক এদেশের জনগণ। এদের প্রত্যাশা ভোটাধিকার ফিরে পাওয়া, যার একমাত্র পথ হচ্ছে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে একটি নির্বাচন।
এর আগে মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দীন। বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা জয়নাল আবেদীন ফারুক, গোলাম আকবর খোন্দকার ও এস এম ফজলুল হক। সঞ্চালনা করেন বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম।
মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দীন বলেন, আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এই সরকারের পতন হবে।
জয়নাল আবেদীন ফারুক বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে কোনোভাবেই সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। অন্তবর্তীকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন করতে হবে।
গোলাম আকবর খোন্দকার বলেন, নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে দেশে একটি নির্বাচিত সরকার হবে। যে সরকার জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকবে। এস এম ফজলুল হক বলেন, আরো কঠিন কর্মসূচি দিতে হবে।
সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন নগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন, লুৎফুর রহমান কাজল, এ এম নাজিম উদ্দীন, আবুল হাশেম বক্কর, আবু সুফিয়ান, আবদুল ওয়াদুদ ভূঁইয়া, ব্যারিস্টার মীর হেলাল উদ্দিন ও হুম্মাম কাদের চৌধুরীসহ বিভাগের আওতাধীন জেলা নেতৃবৃন্দ।