সর্বাত্মক কর্মবিরতিতে চুয়েটে অচলাবস্থা

আটকে আছে ১২ বিভাগের পরীক্ষা

জগলুল হদা, রাঙ্গুনিয়া | বুধবার , ১০ জুলাই, ২০২৪ at ১০:৫৪ পূর্বাহ্ণ

অর্থ মন্ত্রণালয় কর্তৃক জারিকৃত পেনশনসংক্রান্ত ‘বৈষম্যমূলক’ প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহারের দাবিতে সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন করছেন চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) শিক্ষক ও কর্মকর্তাকর্মচারীরা। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব দাপ্তরিক ও একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এমনকি আটকে আছে বিশ্ববিদ্যালয়ে ১২টি বিভাগের সব পরীক্ষা। ফলে অচলাবস্থা বিরাজ করছে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে।

জানা যায়, জারিকৃত ‘প্রত্যয় স্কিম’ প্রত্যাহারের দাবিতে গত ২৫, ২৬, ২৭ জুন অর্ধদিবস কর্মবিরতি এবং ৩০ জুন পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করেন বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষকরা। দাবি আদায় না হওয়ায় ১ জুলাই থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন করছেন তারা। এরপর থেকে স্থবির অবস্থা বিরাজ করছে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে। চুয়েটে ১২টি বিভাগ রয়েছে। আন্দোলন শুরুর আগে এসব বিভাগের দ্বিতীয় ও তৃতীয় বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষার কোনটির দুটি এবং কোনটির চারটি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছিলো। আন্দোলনের ফলে এখন সব পরীক্ষা স্থগিত হয়ে যায়। এছাড়া চুয়েটের স্নাতক ২০১৮১৯ শিক্ষাবর্ষের ফলাফল প্রকাশও স্থগিত করা হয়। এমনকি একাডেমিকদাপ্তরিক কার্যক্রম বন্ধ থাকায় সনদ তুলতে পারছেন না প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা। অথচ সাময়িক সনদ পেতে শিক্ষার্থীদের একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। যেখানে ২২টি দপ্তর থেকে ৬০টির অধিক স্বাক্ষর নিয়ে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ শাখায় জমা দিয়ে সাময়িক সনদ প্রাপ্তির জন্য আবেদন করতে হয়। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় নির্ধারিত ব্যাংকে আবেদন ফি জমা দিয়ে সাধারণত ছয় কার্যদিবস পরে সাময়িক সনদ পাওয়া যায়। কর্মবিরতির ফলে সাময়িক সনদ ও চারিত্রিক সনদ না পাওয়ায় চাকরি ও উচ্চশিক্ষার জন্য আবেদন করতে পারছেন না বলে জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। এছাড়া কর্মবিরতি অনির্দিষ্টকালের হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থান করা নিয়েও জটিলতা ও দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগছেন শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীরা জানান, হলের ডাইনিং বন্ধ থাকায় আমাদের খাবারের জন্য বাইরের হোটেল ও ক্যান্টিনে যেতে হচ্ছে। সেগুলো তুলনামূলক নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর। অন্যদিকে শিক্ষার্থীরা কোভিডের কারণে এমনিতেই অনেক পিছিয়ে। তারমধ্যে কর্মবিরতির মধ্যে তারা আরও পিছিয়ে গেছেন। সেশনজটের কারণে চাকরি ক্ষেত্রেও ভোগান্তি পোহাতে হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন শিক্ষার্থীরা।

সমাপনী বর্ষের তাসনিয়া রহমান প্রমি জানান, কর্মবিরতির জন্য ১১ তারিখ ফাইনাল রেজাল্ট দিবে কিনা তা নিয়ে সন্দিহান। সেই সঙ্গে ক্লিয়ারেন্সের কাজও করতে পারছি না। সঠিক সময়ে সার্টিফিকেট ও পাবো না। ফাইনাল রেজাল্ট ছাড়া মাস্টার্স কিংবা জবে এপ্লাই করতেও সমস্যা হচ্ছে।

এদিকে সমন্বিত ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৩২৪ সেশনের নতুন শিক্ষার্থীদের শেষ ধাপের ভর্তি কার্যক্রম ৩৪ জুলাই হওয়ার কথা থাকলেও তা পিছিয়ে ১৪১৫ জুলাইয়ে নেয়া হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ব্যাচের চলমান পরীক্ষাগুলোও স্থগিত রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী নাজমুস সাকিব বলেন, আমাদের আর একটি পরীক্ষা বাকি ছিল, সেটি আটকে আছে। এ অবস্থায় আমরা একটা দোটানার মধ্যে আছি। শিগগিরই এই অবস্থার অবসান হোক।

উল্লেখ্য অর্থমন্ত্রণালয় কর্তৃক জারিকৃত সিদ্ধান্তকে মেনে নিতে রাজি নয় শিক্ষক ও কর্মকর্তাকর্মচারীরা। তাদের দাবি মেনে না নেওয়া পর্যন্ত এভাবেই কর্মবিরতি চলতে থাকবে বলে জানান তারা।

চুয়েট শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. জি.এম. সাদিকুল ইসলাম বলেন, আমরা শিক্ষকরা সবসময় চাই যাতে আমাদের শিক্ষার্থীরা একাডেমিক দিক দিয়ে একদিনও না পেছায়। আমরা অনেকটা জোর করেই সবসময় ওদের ক্লাসপরীক্ষা সময়ের মধ্যে নিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করি। কিন্তু বর্তমানে পরিস্থিতি আমাদেরকে এই পদক্ষেপগুলো নিতে বাধ্য করেছে।

শিক্ষার্থীরা প্রত্যাশা করেন, শীঘ্রই যেন এই অচলাবস্থার অবসান ঘটে এবং তারা যেন দ্রুত একাডেমিক কার্যক্রমে যোগদান করতে পারেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধনাগরিকদের সেবা ও নিরাপত্তা দেওয়া আমার প্রধান কাজ
পরবর্তী নিবন্ধরোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে চীনের সহযোগিতা চাইলেন প্রধানমন্ত্রী