সরবরাহের জন্য অপেক্ষায় ওয়াসার ভাণ্ডালজুড়ি প্রকল্প

কমিশনিং সম্পন্ন, প্রকল্পের ১৩০ কিমি পাইপলাইনে সমস্যা নেই

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ১৭ নভেম্বর, ২০২৪ at ৭:৩৫ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম ওয়াসার ভাণ্ডালজুড়ি পানি সরবরাহ প্রকল্পের কমিশনিংয়ের (ট্রায়াল রান) কাজ সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। প্রায় এক মাস ধরে চলা ট্রায়াল রানে প্রকল্পের ১৩০ কিলোমিটার ট্রান্সমিশন এবং ডিস্ট্রিবিউশন লাইনের কোথাও কোনো সমস্যা পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক। প্রকল্পের পুরো কাজ শেষ হয়েছে।

চট্টগ্রাম ওয়াসা থেকে জানা গেছে, এখন প্রকল্প পরিচালকসহ চট্টগ্রাম ওয়াসার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের উপস্থিতিতে বিদেশি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের এক নাগাড়ে তিন দিন অপারেশন কার্যক্রম চালাতে হবে। রাতদিন ২৪ ঘণ্টা হিসেবে একনাগাড়ে ৭২ ঘণ্টা অপারেশন কার্যক্রম চালানোর পর প্রকল্পের পানি সরবরাহ শুরু হবে বলে জানান চট্টগ্রাম ওয়াসার সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা।

ভান্ডালজুড়ি পানি সরবরাহ প্রকল্প থেকে প্রতিদিন ৬ কোটি লিটার পানি উৎপাদন হবে। প্রথম পর্যায়ে সিইউএফএলে দৈনিক ২ কোটি লিটার এবং ডাই অ্যামোনিয়াম ফসফেট কারখানায় দৈনিক ১ কোটি লিটারের মতো পানি সরবরাহ করা হবে। এ ব্যাপারে প্রকল্প পরিচালক ও ওয়াসার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মুহম্মদ মাহবুবুল আলম গতকাল আজাদীকে বলেন, ওয়াসার ভান্ডালজুড়ি পানি সরবরাহ প্রকল্পের সকল কাজ শেষ হয়েছে। টেস্টিং কার্যক্রমও শেষ হয়েছে। ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট থেকে উৎপাদিত পানি সব পাইপলাইনে পৌঁছেছে। বেসিক কোনো সমস্যা নেই। এখন ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট থেকে কন্ট্রিনিউ ৭২ ঘণ্টা পানি উৎপাদন করে পাইপলাইনে সরবরাহ কার্যক্রম সফলভাবে সম্পন্ন হওয়ার পর ঠিদাকারি প্রতিষ্ঠান থেকে প্রকল্পের দায়িত্ব বুঝে নেওয়া হবে। তারপরই এই প্রকল্পের পানি আনুষ্ঠানিকভাবে সরবরাহ (বাণিজ্যিক ও আবাসিক গ্রাহকদের মাঝে) শুরু হবে। আপাতত চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার (সিইউএফএল) কারখানায় পানি সরবরাহ করা হবে বলে জানিয়ে প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মুহম্মদ মাহবুবুল আলম বলেন, সিইউএফএল পর্যন্ত আমাদের পাইপলাইন চলে গেছে। এখন শুধু কানেকশন দেওয়া হবে। ড্যাপের (ডাই অ্যামোনিয়াম ফসফেট কারখানা) কানেকশনও হয়ে যাবে। তারা সংযোগ নেওয়ার জন্য সম্মত আছে। আমরা ডিমান্ড নোট ইস্যু করব। সংযোগ ফি দেওয়ার সাথে সাথে কানেকশন দিয়ে দেব। তিনি বলেন, সিইউএফএলে দৈনিক ২ থেকে আড়াই কোটি লিটার পানি লাগবে। ডাই অ্যামোনিয়াম ফসফেট কারখানায় দৈনিক ১ কোটি লিটারের মতো পানি লাগবে। সিইউএফএল ও ড্যাপে ৩ কোটি লিটার পানির জন্য প্রতিদিন ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট থেকে ৬ থেকে ৭ ঘণ্টা পানি উৎপাদন করলে হয়ে যাবে। জুনের মধ্যে ২/৩টি কারখানায় সংযোগ হয়ে যাবে। আমাদের বড় গ্রাহক হওয়ার কথা ছিল কাফকো। কাফকোতে প্রতিদিন ২ কোটি লিটারের মতো পানি লাগবে। কাফকোর কাছে আমরা প্রকল্পের শুরুতে পানি নেওয়ার জন্য চিঠি দিয়েছিলাম। তখন তারা আগ্রহ দেখালেও এখন দেখাচ্ছে না।

প্রকল্প পরিচালক বলেন, প্রকল্পের শুরুতে আমরা আনোয়ারা ও পশ্চিম পটিয়ার দেশিবিদেশি শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোকে এই প্রকল্প থেকে পানি নেওয়ার জন্য চিঠি দিয়েছিলাম। তখন কাফকো, সিইউএফএল, ড্যাপ, কোরিয়ান ইপিজেড, চায়না ইকোনমিক জোনসহ অন্যান্য শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো পানি নিতে আগ্রহ দেখিয়েছিল। এখন আমরা সংযোগ নেওয়ার জন্য চিঠি দিলে দুটি প্রতিষ্ঠান ছাড়া (সিইউএফএল ও ড্যাপ) আর কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে সাড়া পাওয়া যায়নি। এখন আবার নতুন করে পানির সংযোগের জন্য চিঠি দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

ভান্ডালজুড়ি পানি সরবরাহ প্রকল্প থেকে ছোটবড় মোট ১৩টি বাণিজ্যিক সংযোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত ছিল চট্টগ্রাম ওয়াসার। এই শিল্পাঞ্চলগুলোতে প্রতিদিন ৫ কোটি লিটার পানি সরবরাহের টার্গেট ছিল। অবশিষ্ট ১ কোটি লিটার পানি দেওয়া হবে বোয়ালখালীপটিয়ার আবাসিক গ্রাহকদের মাঝে। এখনো পর্যন্ত পটিয়ায় ৬শ আবাসিক গ্রাহকের সংযোগের কাজ শেষ হয়েছে। বোয়ালখালীতে ১০০টির মতো আবাসিক গ্রাহকের সংযোগের কাজ শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক।

উল্লেখ্য, ভান্ডালজুড়ি পানি সরবরাহ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২০১৫ সালের ২৬ নভেম্বর চট্টগ্রাম ওয়াসা এবং কোরিয়ান এঙ্মি ব্যাংকের মধ্যে ১ হাজার ৩৬ কোটি টাকার একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। পরে পুনরায় সমীক্ষা শেষে প্রকল্প ব্যয় সংশোধন করে ১,৯৯৪ কোটি টাকায় বর্ধিত করা হয়। এই প্রকল্পটি দক্ষিণ কোরিয়ার এঙ্মি ব্যাংক ১,২২৪ কোটি টাকা এবং বাংলাদেশ সরকারের ৭৫০ কোটি টাকার যৌথ অর্থায়নে বাস্তবায়ন হয়েছে। এছাড়া চট্টগ্রাম ওয়াসাকে দিতে হয়েছে ২০ কোটি টাকা। কোরিয়ান এঙ্মি ব্যাকের সাথে নতুনভাবে চুক্তি সম্পাদনের পর প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১৯ সাল থেকে। দুই দফা সময় বাড়ানোর পর অবশেষে প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধদেশের শীর্ষ চাল ব্যবসায়ী রশিদ গ্রেপ্তার
পরবর্তী নিবন্ধরাউজান নোয়াপাড়ায় পাঁচজন গ্রেপ্তার