রিপ্রেজেন্টেশন অব দ্য পিপল অর্ডার (আরপিও) বা গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ সংশোধনের প্রস্তাবে সাড়ে তিন মাস ধরে আইন মন্ত্রণালয়ের কোনো সাড়া পাওয়ায় ফের ‘বিশেষ তাগাদা’ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। তৃতীয় দফায় এবং শেষবারের মতো আগামী ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে ওই প্রস্তাবের ব্যাপারে লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের উদ্যোগ বা অগ্রগতি জানাতে বিশেষ অনুরোধ জানিয়েছে কমিশন। আর তা না হলে নির্বাচন কমিশনের সক্ষমতা, স্বাধীনতা এবং সরকারের সদিচ্ছা নিয়ে ‘জনমনে সংশয় তৈরি হতে পারে’ বলে সতর্ক করা হয়েছে ইসির চিঠিতে। খবর বিডিনিউজের।
আরপিও সংশোধনীর খসড়া প্রস্তাব গত ৮ আগস্ট আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে এবং এর লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগকে পাঠিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। এরপর ২৮ সেপ্টেম্বর লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগকে জরুরি চিঠি দিয়ে প্রস্তাবের বিষয়ে গৃহীত অগ্রগতি জানাতে বলে ইসি। কিন্তু তাতে সাড়া না মেলায় ফের ১০ অক্টোবর চিঠি দেওয়া হয়।
গতকাল নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের উপসচিব মো. আব্দুল হালিম খানের সই করা তৃতীয় দফার চিঠিতে বলা হয়, এখন পর্যন্ত ওই প্রস্তাবের বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের অবস্থান জানতে পারেনি ইসি। যদিও দুই
দফা ইসির চিঠি পাওয়ার কথা জানিয়ে আইন মন্ত্রণালয় বলছে, ওই প্রস্তাব পর্যালোচনা চলছে, সেটি রুটিন কর্মকাণ্ড। মন্ত্রীর দপ্তরে এ নিয়ে কাজ চলছে।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আরপিওতে একগুচ্ছ সংশোধনী আনার প্রস্তাব দিয়েছে ইসি। ইসি কর্মকর্তারা জানান, আরপিওর ৭, ১২, ১৫, ২৫, ৩১, ৩৬, ৪৪, ৮৪, ৯০, ৯১ অনুচ্ছেদসহ বেশ কিছু ধারা-উপধারায় সংযোজন-বিয়োজন ও করণিক সংশোধনের প্রস্তাব রাখা হয়েছে।
ভোটের সময় কোনো অভিযোগ পেলে কমিশন খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নিতে পারে বিদ্যমান আইনে। এখন ভোটের সময়ের পরে থেকে ফলাফল প্রকাশের পর, এমনকি গেজেট প্রকাশের আগে নির্বাচনের যে কোনো পর্যায়ের অভিযোগের ক্ষেত্রে কমিশন যেন তদন্ত করতে পারে এবং অনিয়মের প্রমাণ পেলে ভোট বাতিল করতে পারে, এজন্য ৯১ অনুচ্ছেদে দুটি উপধারা সংযোজনের প্রস্তাব করা হয়েছে।
ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার জানিয়েছিলেন, নির্বাচনের যে কোনো মুহূর্তে ‘পেশীশক্তি বা অন্যবিধ যে কোনো কারণে’ নির্বাচন বন্ধ/বাতিল জন্য এ প্রস্তাব করা হয়েছে। এ বিধির অধীনে কারো প্রার্থিতা বাতিল হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি যেন নতুন করে ওই নির্বাচনে অংশ নিতে না পারেন, সেজন্যও প্রস্তাব রয়েছে। এছাড়া কোনো ব্যক্তি ‘অবৈধ প্রভাব বিস্তার করে’ নির্বাচনী দায়িত্ব পালনকারী কোনো ব্যক্তিকে নির্বাচনী কাজে বাধা দিলে বা বাধাদানের চেষ্টা করলে তাকেও শাস্তির আওতায় আনতে ৪৪ অনুচ্ছেদে উপধারা সংযোজনের প্রস্তাব করা হয়েছে।
এসব সংশোধনী প্রস্তাবের খসড়া নিয়ে অগ্রগতি জানতে গতকাল শেষবারের মতো আইন মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের সচিব বরাবর পাঠিয়েছে ইসি। আর ইসির প্রস্তাবগুলো নিয়ে কাজ চলছে জানিয়ে লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগ যুগ্মসচিব (ড্রাফটিং) মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান নূর বলেন, এসব রুটিন ওয়ার্ক।
কী বলছেন সিইসি : বারবার চিঠি দিয়ে সাড়া না পাওয়ায় সাংবিধানিক সংস্থাটির অনুরোধ ও চাহিদা উপেক্ষিত হচ্ছে বলে মনে করছে কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন কমিশন। গতকাল সিইসি সাংবাদিকদের বলেন, আমরা যেহেতু সময় বেঁধে দিয়েছি, ওই সময়ের মধ্যে নিশ্চয় তারা রেসপন্স করবেন। দেরি হয়েছে… সরকারের বিভিন্ন ব্যস্ততার কারণে হয়ত সময় করে উঠতে পারেনি। এজন্যে সময় দিয়েছি একটা। আমরাও তো অনন্ত কাল ধরে একটা ম্যাটার পার্সু করতে পারি না। এজন্যে বিষয়টা আমরা শেষ করে দিতে চাই। রেসপন্স না পেলে আমরা অন্য কাজে রেসপন্স করব।
হাবিবুল আউয়াল বলেন, এ বিষয়টাকে নিয়ে আমাদের হয়ত আর পার্সু করতে হবে না। এ চিঠির পর আর রিকোয়েস্ট করা হবে না। চিঠির জবাব না পেলে ওই সময়ের পর (১৫ ডিসেম্বর) আমরা বসে সিদ্ধান্ত নেব, কোনটা গুরুত্বপূর্ণ। সবকিছু খুবই গুরুত্বপূর্ণও না। সরকারেরও বলার থাকবে, যুক্তি থাকতে পারে-এটা অলরেডি কোথাও অ্যাড্রেস করা আছে। সেটাও যদি কমিশন জানতে পারে তা নিয়ে আর এগোতে চায় না কমিশন। সরকারের রেসপন্সটা এ বিষয়ে কী জানতে চাইছিলাম। নিশ্চয় তাদেরও যুক্তি থাকতে পারে এটা নিয়ে। আইন প্রণয়নের অথরিটি সরকার ও পার্লামেন্টের। তারা যদি মনে করেন, পর্যাপ্ত আইন রয়ে গেছে; এ বিষয়ে করণীয় কিছু নেই। সেটুকু জানিয়ে দিলেও হবে।
সিইসির বক্তব্যের বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের প্রতিক্রিয়া জানতে টেলিফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে তার সাড়া মেলেনি।
আইন মন্ত্রণালয় যা বলছে : আইন মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের যুগ্ম সচিব (ড্রাফটিং) মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান নূর বলেন, ইসির চিঠি পেয়েছেন তারা। আরপিও সংশোধন বিষয়ে কোনো ‘জিজ্ঞাসা’ দেওয়া হয়নি। বিষয়গুলো মন্ত্রীর দপ্তরে রয়েছে। খসড়া প্রস্তাবের বিষয়টি পর্যালোচনা চলছে। এটা রুটিন কাজ। সাধারণত ড্রাফটিং শাখা দেখভাল করে। এ ধরনের প্রস্তাবগুলো ভেটিং প্রক্রিয়া শেষে মন্ত্রিসভা ও সংসদে যাবে।