প্রতিবছর ভর্তি পরীক্ষা নেয়া হলেও এবার লটারির মাধ্যমেই সরকারি স্কুলে শিক্ষার্থী ভর্তি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। গতকাল এক অনলাইন ব্রিফিংয়ে এ সিদ্ধান্তের কথা জানান শিক্ষা মন্ত্রী ডা. দীপু মনি। এই সিদ্ধান্তের ফলে ভর্তি যুদ্ধের পরিবর্তে এবার ভাগ্যের লড়াইয়ে অবতীর্ণ হতে হবে সরকারি স্কুলে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের। নগরীর ৯টি সরকারি স্কুলেও মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে বলে জানিয়েছে চট্টগ্রাম জেলাপ্রশাসন।
জেলাপ্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী- নগরীর ৯ সরকারি স্কুলে ৫ম থেকে ৯ম শ্রেণিতে প্রায় ৪ হাজার শিক্ষার্থী এবার ভর্তির সুযোগ পাবে। স্কুলগুলোর শ্রেণিভিত্তিক শূন্য আসনের তালিকা এখনো চূড়ান্ত না হওয়ায় এ সংখ্যা সামান্য কম-বেশি হতে পারে বলে জানিয়েছেন জেলাপ্রশাসন সংশ্লিষ্টরা। এতদিন সুস্পষ্ট কোনো নির্দেশনা না পাওয়ায় ভর্তি সংক্রান্ত কার্যক্রম অনেকটা স্থবির ছিল জানিয়ে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলাপ্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) আ স ম জামসেদ খোন্দকার আজাদীকে বলেন, এখন মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত পাওয়ায় এ সংক্রান্ত কার্যক্রম গতি পাবে। শূন্য আসনের তালিকাসহ যাবতীয় বিষয় চূড়ান্তের মাধ্যমে শীঘ্রই ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু করা হবে। তবে শূন্য আসনের তালিকা হালনাগাদ না হলেও গত কয়েক বছরের তালিকা পর্যালোচনায় দেখা যায়- ৪ হাজারের কিছু কম-বেশি শিক্ষার্থী এসব স্কুলের ৫ম থেকে ৯ম শ্রেণিতে ভর্তির সুযোগ পেয়ে আসছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আসন রয়েছে ৫ম শ্রেণিতে। প্রতিবছর ২ হাজারের কিছু কম-বেশি শিক্ষার্থী এই (৫ম) শ্রেণিতে ভর্তির সুযোগ পায়। ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে সুযোগ পায় ছয়শোর কিছু কম-বেশি। ৭ম শ্রেণিতে কোনো বছর সামান্য সংখ্যক শিক্ষার্থী ভর্তি নেয়া হলেও কোনো কোনো বছর একটি আসনও শূন্য থাকে না। ৮ম শ্রেণিতে দুইশোর সামান্য কম-বেশি সংখ্যায় শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পায় প্রতি বছর। আর এক হাজারের সামান্য কম বেশি শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ রয়েছে ৯ম শ্রেণিতে। সবমিলিয়ে সরকারি ৯টি স্কুলের ৫ম থেকে ৯ম শ্রেণিতে প্রায় ৪ হাজার শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পাবে এবার। প্রতিবছরের ন্যায় ভর্তিচ্ছুদের এবার ভর্তি যুদ্ধে অংশ নিতে হবে না। তবে ভাগ্যের লড়াইয়ে অবতীর্ণ হতে হবে তাদের। আবেদনের পর শিক্ষার্থীর ভর্তির সুযোগ নির্ভর করবে লটারিতে। অর্থাৎ এবার লটারিতেই ঝুলে থাকছে শিক্ষার্থীর ভাগ্য। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হলে নিমিষেই ভর্তির সুযোগ মিলতে পারে আরাধ্য স্কুলে। আর ভাগ্য যদি মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে আশা ছাড়তে হবে।
লটারির মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তির এ সিদ্ধান্ত ঘিরে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে অভিভাবক ও শিক্ষা সংশ্লিষ্ট মহলে। কেউ বলছেন- করোনা পরিস্থিতিতে এটি যৌক্তিক সিদ্ধান্ত হয়েছে। আর কেউ বলছেন- এর মাধ্যমে অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ থেকে বঞ্চিত হতে পারে। বিপরীতে পিছিয়ে থাকা অনেক শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পাবে। ভর্তি পরীক্ষা নেয়া হলে এসব শিক্ষার্থীর কাছে সরকারি স্কুল হয়তো অধরাই রয়ে যেতো।
তবে বেশ কয়টি বিকল্প যাচাই-বাছাই করে লটারির মাধ্যমে ভর্তির সিদ্ধান্তটি চূড়ান্ত করা হয়েছে বলে ব্রিফিংয়ে জানান শিক্ষা মন্ত্রী ডা. দীপু মনি। তিনি বলেন, আগের মতো সরাসরি ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার বিষয়টি আমরা পর্যালোচনা করেছি। যা এ মুহূর্তে উচিত হবে বলে আমরা মনে করিনি। বিশেষজ্ঞরাও এই মত দিয়েছেন। শীত আসতে না আসতে করোনা সংক্রমণ আবার বাড়তে শুরু করেছে, এই পরিস্থিতিতে আগের মতো সরাসরি ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়াটা আমাদের কাছে ঝুঁকিপূর্ণ মনে হয়েছে।
বিকল্পের মধ্যে অনলাইনে ভর্তি পরীক্ষার বিষয়টি নিয়েও চিন্তা-ভাবনা করা হয়েছে জানিয়ে শিক্ষা মন্ত্রী বলেন, কিন্তু বাস্তবতার প্রেক্ষাপটে অনলাইনে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে ভর্তিচ্ছু সব শিক্ষার্থীর সামর্থ্য বা সুযোগের বিষয়টিও আমাদের ভাবতে হয়েছে। যার কারণে লটারির মাধ্যমেই এবার ভর্তির সিদ্ধান্ত গ্রহন করেছি আমরা। এতদিন প্রথম শ্রেণিতে লটারির মাধ্যমে ভর্তি করা হচ্ছিল। এবার সব ক্লাসেই এই (লটারি) প্রক্রিয়ায় শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে। এই প্রক্রিয়ায় মেধাবী শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি কিছু কম মেধাবী শিক্ষার্থীও এবার সরকারি স্কুলে ভর্তির সুযোগ পাবে। এর মাধ্যমে স্কুলগুলোতেও একটা ভারসাম্য আসবে বলে আমরা মনে করছি।
প্রসঙ্গত, ২য় থেকে ৮ম শ্রেণির ক্ষেত্রে সরাসরি ভর্তি পরীক্ষা নিয়েই প্রতিবছর শিক্ষার্থী ভর্তি করানো হয় সরকারি স্কুলে। ভর্তি পরীক্ষার সময় সরকারি স্কুলগুলোকে তিনটি ক্লাস্টারে ভাগ করা হয়। তিনটি ক্লাস্টারেই আবেদনের সুযোগ পায় শিক্ষার্থীরা। নবম শ্রেণিতে ভর্তি করা হতো জেএসসির ফলাফলের ভিত্তিতে। আর বিগত কয়েক বছর থেকে লটারির মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তি করার নিয়ম করা হয়েছে প্রথম শ্রেণিতে। এবার সব ক্লাসেই লটারির মাধ্যমে ভর্তির সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। করোনা সংক্রমণের কারণে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানান শিক্ষা মন্ত্রী ডা. দীপু মনি।