পাঁচ দফা অবরোধের পর দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার প্রতিবাদে সারা দেশে বিএনপির ৪৮ ঘণ্টা হরতাল শুরু হয়েছে গতকাল সকালে। বিএনপি–জামায়াত ও সমমনা দলগুলোর ডাকা হরতাল–অবরোধ কর্মসূচির মধ্যে প্রায় প্রতিদিনই সারা দেশে যানবাহনে আগুন দেওয়া হচ্ছে। তবে এবার প্রথম একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটল। আর ট্রেনে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটল এ নিয়ে দ্বিতীয়বার। ট্রেনে আগুনের ঘটনায় ১০ জন আহত হয়েছেন। বিএনপির ডাকা ৪৮ ঘণ্টার হরতালের শুরুতে গতকাল রোববার ভোরে গাজীপুরের শ্রীপুরে বরমী ইউনিয়নের ১৩২ নং গিলাশ্বর মরহুম আ. জব্বার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের টিনশেড শ্রেণিকক্ষে আগুন দেওয়া হয়েছে। এতে শ্রেণিকক্ষের কয়েকটি বেঞ্চ, বৈদ্যুতিক পাখা পুড়ে গেছে এবং টিনের বেড়া ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শ্রেণিকক্ষটিতে আগুন ধরিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মাসুদুল করিম বলেন, স্থানীয়রা জানিয়েছে–ভোর সাড়ে ৩টার দিকে কয়েকটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা দিয়ে কয়েকজন যুবক বিদ্যালয়ে আসে। তারা জানালা ভেঙে ওই টিনশেড ঘরে আগুন দিয়ে মিছিল সহকারে ঘটনাস্থল ছেড়ে যায়। আগুনে ঘরে থাকা বৈদ্যুতিক পাখা, বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম, চারটি হাই বেঞ্চ, তিনটি লো বেঞ্চ, সিলিংসহ টিনের বেড়া ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানান প্রধান শিক্ষক। খবর বিডিনিউজের।
খবর পেয়ে শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তরিকুল ইসলাম, গাজীপুর জেলা পুলিশের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার আজমীর হোসেন ও শ্রীপুর থানার ওসি এএফএম নাসিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তরিকুল ইসলাম জানান, বিদ্যালয়ে আগুন দেওয়ার ঘটনায় শ্রীপুর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। ঘটনাটি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
ট্রেনে আগুন : এদিকে বিএনপির ডাকে সারাদেশে ৪৮ ঘণ্টার হরতাল শুরুর আগে জামালপুরের সরিষাবাড়ী রেল স্টেশনে যমুনা এক্সপ্রেস ট্রেনে আগুন দেওয়া হয়েছে। গত শনিবার রাত ১টা ২০ মিনিটে এ ঘটনায় যমুনা এক্সপ্রেসের তিনটি বগি পুড়ে গেছে, লাফিয়ে নামতে গিয়ে আহত হয়েছেন অন্তত ১০ জন। জামালপুর রেল পুলিশের এসআই মো. নাজির জানান, ঢাকা থেকে তারাকান্দিগামী আন্তঃনগর ট্রেনটি সরিষাবাড়ী রেল স্টেশন ছাড়ার পরপরই আগুন দেওয়া হয়। দ্রুত ট্রেনটি থামানো হলেও তিনটি বগিতে আগুন জ্বলতে দেখা যায়। খবর পেয়ে সরিষাবাড়ী ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে ভোর ৪টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। এদিকে বগিতে আগুন জ্বলতে শুরু করলে যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ওই সময় ট্রেন থেকে লাফিয়ে নামতে গিয়ে অন্তত ১০ জন আহত হন। তাদের মধ্যে চার নারী যাত্রীকে সরিষাবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয় বলে জানান এসআই নাজির।
সরিষাবাড়ী থানা পুলিশ এবং জামালপুরের গোয়েন্দা পুলিশ এরইমধ্যে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। সরিষাবাড়ী থানার ওসি মুশফিকুর বলেছেন, তারা এই নাশকতার ঘটনার তদন্ত শুরু করেছেন। কারা ট্রেনে আগুন দিয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, হরতাল অবরোধ আছে যেহেতু এ ঘটনা ঘটতে পারে। তদন্ত সাপেক্ষে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাসে আগুন দেখে অজ্ঞান মালিক : এদিকে বিএনপির ডাকা ৪৮ ঘণ্টা হরতালের প্রথম দিন গতকাল গাজীপুর মহানগরীতে সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা একটি বাসে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এ সময় গাড়িটি পুড়তে দেখে অজ্ঞান হয়ে যান সেটির মালিক। রোববার দুপুরে নগরী শহীদ বরকত সরণী এলাকায় এ ঘটনা ঘটে বলে বাসন থানার ওসি মো. আবু ছিদ্দিক জানান। বাসের চালক ও মালিক দেলোয়ার হোসেন দেলু জ্ঞান হারিয়ে ফেললে স্থানীয় এলাকাবাসী তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করান।
এ বিষয়ে দেলুর চাচাতো ভাই সাগর হোসেন জানান, সম্প্রতি দেলু তার শেষ সম্বল সাত কাঠা জমি বিক্রি করে ২৮ লাখ টাকায় কিস্তিতে গাড়িটি ক্রয় করেছেন। এজন্য প্রতি মাসে তাকে ৬২ হাজার টাকা কিস্তি পরিশোধ করতে হয়। তুরাগ পরিবহনের ব্যানারে ঢাকা–শেরপুর রুটে বাসটি নিজেই চালাতেন দেলু। ট্রিপ শেষে গাড়িটি বাসার পাশে শহীদ বরকত সরণীর পুকুর পাড়ে দাঁড় করিয়ে রাখতেন। প্রতিদিনের মতো রোববার ভোর রাতেও একই স্থানে গাড়িটি রেখে বাড়ি ফেরেন দেলু। দুপুরে কে বা কারা গাড়িটিতে অগ্নিসংযোগ করে পালিয়ে যায়। মুহূর্তেই আগুন পুরো গাড়িতে ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে এসে নিজের একমাত্র সম্বলটি পুড়তে দেখে জ্ঞান হারান দেলু। প্রায় ঘণ্টা খানেক চেষ্টার পরে স্থানীয়রা বাসটির আগুন নেভায়। ততক্ষণে বাসটির অধিকাংশই পুড়ে যায়।
ওসি মো. আবু ছিদ্দিক বলেন, খবর শুনে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। তবে এর আগেই এলাকাবাসী আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। কে বা কারা বাসটিতে অগ্নিসংযোগ করেছে তা তদন্ত করা হচ্ছে; এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলে জানান তিনি।