সাতকানিয়ায় রাতের আঁধারে স্কেভেটর দিয়ে সরকারি পাহাড় কেটে মাটির ব্যবসা চলছে। শুধু তাই নয়, মাটি কাটার আগে লুটে নিয়েছে শতবর্ষী মাদারট্রি গর্জন। ঝুঁকিতে রয়েছে আরো একটি মাদারট্রি। উপজেলার বাজালিয়া ইউনিয়নের হলুদিয়ার মইন্যার টেক এলাকায় বন বিভাগের মালিকানাধীন পাহাড় কেটে ট্রাকযোগে মাটি নিয়ে যাচ্ছে। বাজালিয়ার বড়দুয়ারা ফরেস্ট বিট কাম চেক স্টেশন হতে মাত্র এক কিলোমিটার দূরের পাহাড় থেকে মাটি কেটে নিচ্ছে। পাহাড় খেকোদের দাপটের কাছে অসহায় স্থানীয় বনবিভাগ।
সরেজমিন পরিদর্শনকালে দেখা যায়, পার্বত্য জেলা বান্দরবানের সীমান্তবর্তী এলাকা বাজালিয়ার হলুদিয়ার মইন্যার টেক এলাকায় চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের পদুয়া রেঞ্জের আওতাধীন বড়দুয়ারা ফরেস্ট বিট কাম চেক স্টেশনের মালিকানাধীন বেশ কিছু পাহাড় রয়েছে। পূর্ব ও উত্তর পার্শ্বের পাহাড়গুলোতে সরকারি আকাশমনি বাগান রয়েছে। পশ্চিম ও দক্ষিণ পার্শ্বের পাহাড়ে রয়েছে আগর বাগান। মইন্যার টেক এলাকায় কেরানীহাট–বান্দরবান সড়কের উত্তর পাশে ছোট একটি পাহাড় ছিল। ওই পাহাড়ে কয়েকটি শতবর্ষী মাদারট্রি ছিল। এছাড়া কাটার উপযোগী বেশ কিছু আকাশমনি গাছ ছিল। এখন একটি মাত্র গর্জন গাছ ছাড়া সব গাছ লুটে নিয়েছে। পাহাড়ের প্রায় অর্ধেক অংশ কেটে বিক্রি করে দিয়েছে।
স্থানীয় লোকজন জানান, সংঘবদ্ধ চক্র মইন্যার টেক এলাকার বন বিভাগের পাহাড় থেকে প্রথমে একটি মাদারট্রি গর্জন কেটে বিক্রি করে দেয়। এরপর ওই পাহাড়ে থাকা বেশ কিছু আকাশমনি গাছ কেটে নিয়ে যায়। পরে স্কেভেটর দিয়ে মাটি কাটা শুরু করে। রাতের আঁধারে স্কেভেটর দিয়ে মাটি কেটে ডাম্পার ট্রাকযোগে নিয়ে যাচ্ছে। পাহাড়ের উত্তর পাশ থেকে এমনভাবে মাটি কাটা হচ্ছে বাইরে থেকে দেখে বুঝার কোনো সুযোগ নাই। প্রতি রাতে শত শত ট্রাক মাটি বিক্রি করা হচ্ছে। মাটি কাটার ফলে এখন ওই পাহাড়ে থাকা একমাত্র শতবর্ষী মাদারট্রি গর্জন ঝুঁকির মধ্যে পড়ে গেছে। আর অল্প মাটি কাটলেই গোড়া থেকে মাটি সরে গিয়ে উপড়ে পড়বে গর্জন গাছটি। ফলে পাহাড় থেকে আর যাতে মাটি কাটতে না পারে সেই ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় লোকজন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বড়দুয়ারা ফরেস্ট বিট কাম চেক স্টেশনের এক কর্মকর্তা জানান, আমাদের অফিস থেকে সামান্য দূরের পাহাড় থেকে মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে। অথচ আমরা কিছুই করতে পারছি না। কারণ মোক্তার, আলমগীর, নুরু ও জাহেদসহ যারা পাহাড় থেকে মাটি কেটে নিচ্ছে তারা এলাকায় প্রভাবশালী। তারা যখন তখন যাকে তাকে কারণে–অকারণে মারধর করে। শুধু এই একটি পাহাড় নয়, মোক্তারের নেতৃত্বে গত বছর মাহালিয়া এলাকায় একটি পাহাড় নিশ্চিহ্ন করে ফেলেছে। সরকারি গাছ ও পাহাড় তাদের প্রধান টার্গেট।
বড়দুয়ারা ফরেস্ট বিট কাম চেক স্টেশন কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান জানান, পাহাড় কাটার ঘটনাটি সত্য। এটি আরো কিছুদিন আগের ঘটনা। পাহাড় কেটে মাটি নিয়ে যাওয়ার সময় আমরা ২টি ট্রাকসহ ৩ জনকে আটক করেছি। মামলাও করা হয়েছে। পাহাড় কাটার সাথে কারা জড়িত জানতে চাইলে তিনি জানান, আমি তাদের নাম বলতে পারবো না। কারণ তারা এলাকায় কারো কাছে প্রভাবশালী আবার কারো কাছে দুষ্টু লোক হিসেবে পরিচিত। নাম প্রকাশ করলে তারা আমাদের ক্ষতি করার চেষ্টা করবে।
তিনি আরো জানান, বিষয়টি আমরা চট্টগ্রাম পরিবেশ অধিদপ্তরকে জানিয়েছি। পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে গেছেন। তারা পাহাড় কাটার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
পাহাড় কাটার ঘটনায় অভিযুক্ত উত্তর বাজালিয়ার মোক্তার আহমদ বলেন, পাহাড় কাটার সাথে আমরা জড়িত নই। আমরা মাটির ব্যবসা করি হিসেবে হয়তো আমাদের নাম বলা হচ্ছে। আমি অতীতেও কোনো দিন পাহাড় কাটার সাথে জড়িত ছিলাম না। মইন্যার টেক পাহাড় কাটার সাথে আমাদের কোনো ধরনের সম্পৃক্ততা নাই।
মো. জাহেদুল ইসলাম বলেন, আমিতো মাটির ব্যবসা করি না। তবে মইন্যার টেক এলাকায় যে পাহাড় কাটা হচ্ছে সেই পাহাড়ের পাশে আমার মৎস্য খামার এবং দোকান রয়েছে। খামারে এবং দোকানে আসা যাওয়ার পথে লোকজন হয়তো আমাকে দেখেছে। এজন্য পাহাড় কাটার সাথে আমি জড়িত আছি ভাবছে। প্রকৃতপক্ষে আমি পাহাড় কাটার সাথে জড়িত নই। কারা কাটছে সেটাও আমি জানি না।
বাজালিয়া ইউপি চেয়ারম্যান তাপস কান্তি দত্ত বলেন, বাজালিয়ায় একটি সংঘবদ্ধ চক্র আছে যারা সরকারি পাহাড়ের মাটি আর গাছ বিক্রি করে চলে। তাদের সন্ত্রাসী বাহিনী রয়েছে। তাদের মাটি ও গাছ কাটার সময় বাধা দিতে গিয়ে ইতিপূর্বে বন বিভাগের লোকজনও লাঞ্ছিত হয়েছেন। আমি প্রশাসনকে অনুরোধ করবো এসব বন ও পাহাড় খেকোদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য।