কর্মকর্তাদের কথায় যে ইংগিত মিলেছিল, তা আর ঘটল না; এনবিআর চেয়ারম্যান সাফ জানিয়ে দিলেন, আয়কর রিটার্ন দাখিলের জন্য আজ ৩০ নভেম্বরই শেষ দিন, সময় আর বাড়ছে না। রোববার সকালে ঢাকার সেগুনবাগিচায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সম্মেলন কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম এ কথা জানান। তিনি বলেন, ‘আয়কর রিটার্ন দাখিলের সময় ৩০ নভেম্বর পর্যন্তই থাকবে, সময় বাড়ানোর কোনো সুযোগ নেই, সময় বাড়ানো হচ্ছে না।’ অর্থাৎ, যে করদাতারা এখনও আয়কর রিটার্ন জমা দেননি, তাদের সোমবারের মধ্যেই তা জমা দিতে হবে। তা না হলে গুণতে হবে জরিমানা। খবর বিডিনিউজের।
প্রতিবছর ৩০ নভেম্বরই বিনা জরিমানায় আয়কর রিটার্ন দাখিলের শেষ দিন থাকে। অন্যবছর নাগরিকদের কর দিতে উৎসাহিত করতে কর মেলার আয়োজন করা হলেও করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে এবার সে আয়োজন হয়নি। শীতের আগে আগে ভাইরাসের প্রকোপ বাড়তে থাকায় এবং দেশের অর্থনীতির সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় রিটার্ন জমার সময় বাড়ানোর দাবি জানিয়ে এনবিআরে চিঠি দিয়েছিল ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই, আয়কর আইনজীবীসহ পেশাজীবীদের বিভিন্ন সংগঠন। কিন্তু বিদ্যমান আয়কর অধ্যাদেশে রিটার্ন জমার সময় বাড়ানোর সরাসরি কোনো সুযোগ নেই। ফলে মহামারীর মধ্যে কীভাবে করদাতাদের একটু স্বস্তি দেওয়া যায়, সেই পথ খুঁজতে শুরু করেছিল জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
এই প্রেক্ষাপটে রিটার্ন জমার সময় বাড়ানো হতে পারে বলে শনিবার ইংগিত এসেছিল এনবিআরের একাধিক কর্মকর্তারা কথায়। রোববার এনবিআর চেয়ারম্যানের সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে ঘোষণা আসতে পারে বলেও তারা আভাস দিয়েছিলেন।
সে ঘোষণা না এলেও রিটার্ন দিতে বিলম্বের যৌক্তিক কারণ দেখাতে পারলে জরিমানা মওকুফ করা হবে বলে জানিয়েছেন আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম। তিনি বলেন, নির্ধারিত সময়ে যারা আয়কর রিটার্ন দিতে পারবেন না, তারা সংশ্লিষ্ট কর অফিসে আবেদন করতে পারবেন। নির্ধারিত সময়ে রিটার্ন জমা না দেওয়ার যৌক্তিক কারণ দেখাতে পারলে তার জরিমানা মওকুফ করা হবে। কমিশনারের কাছে যদি কারণ যৌক্তিক মনে না হয়, তবে তাকে জরিমানা দিতে হবে।
আয়কর অধ্যাদেশের নিয়ম অনুযায়ী, কেউ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে রিটার্ন দিতে না পারলে যৌক্তিক কারণ দেখিয়ে দুই থেকে চার মাস পর্যন্ত সময় বাড়িয়ে নিতে পারেন। সেজন্য নির্ধারিত ফরমে আবেদন করতে হয়। তখন একজন কর কর্মকর্তা আয়কর অধ্যাদেশ অনুযায়ী জরিমানা, করের ওপর ৫০ শতাংশ অতিরিক্ত সরল সুদ কিংবা করের টাকার উপর মাসিক ২ শতাংশ হারে বিলম্ব সুদ আরোপ করতে পারেন। এনবিআর চাইলে ব্যক্তি শ্রেণির করদাতাদের যে কোনো জরিমানা ও সুদ মওকুফও করে দিতে পারে। এবার জরিমানার বিষয়টি ‘নমনীয়ভাবে’ দেখতে কর কমিশনারদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানান এনবিআর চেয়ারম্যান। এ বছর ২৬ নভেম্বর পর্যন্ত রিটার্ন দাখিলের পরিস্থিতি তুলে ধরে তিনি বলেন, ২৬ নভেম্বর পর্যন্ত হিসাব ধরলে রিটার্ন জমার পরিমাণ বেড়েছে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৬৩ হাজার ১৯৯টি। তবে একই সময়ে আয়কর কমেছে ১৯৩ কোটি টাকা। গত বছর ২৬ নভেম্বর পর্যন্ত ১২ লাখ ৫৭ হাজার ৬২৬টি আয়কর রিটার্ন জমা পড়েছিল, কর বাবদ সরকারের খাতায় জমা পড়েছিল ২ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা।
সেখানে এবার ওই তারিখ পর্যন্ত ১৩ লাখ ২০ হাজার ৮২৫ জন তাদের রিটার্ন দাখিল করেছেন। তাতে আয়কর হিসেবে সরকার পেয়েছে ২ হাজার ৩৮৭ কোটি টাকা। বর্তমানে দেশে ৪৬ লাখ নাগরিকের কর শনাক্তকারী নম্বর (টিআইএন) রয়েছে। তাদের অর্ধেকও নিয়মিত রিটার্ন জমা দেন না।