৩৭ বছরেরও বেশি সময় ধরে পশ্চিম আন্দারমানিক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দিয়েছেন জ্ঞানের দীক্ষা, মানুষ হওয়ার শিক্ষা। এই শিক্ষকের হাত ধরেই আজ কেউ চিকিৎসক, কেউ বড় অফিসার, কেউ বা আবার তার কাছ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে নিজেরাই শিক্ষকতা করছেন। পেশার তাগিদে আজ তারা ছড়িয়ে আছেন সারাদেশে। প্রিয় শফিকুর রহমান স্যারের বিদায় বেলায় সেই শিক্ষার্থীরা ফের ফিরে এলেন বিদ্যালয়ের আঙিনায়।
শিক্ষক–শিক্ষার্থীদের মধ্যে যে বন্ধন তার সঙ্গে কোনও কিছুরই তুল্যমূল্য বিচার হয় না। সেটা যেন আবারও প্রমাণ করে দিলেন হারুয়ালছড়ির পশ্চিম আন্দারমানিক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রাক্তন–বর্তমান শিক্ষার্থীরা। এই বিদ্যালয়ে ১৯৮৭ সালের শিক্ষক হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন শফিকুর রহমান। দীর্ঘ ৩৭ বছর পর কদিন আগে শেষ হয়েছে তার শিক্ষক–জীবন। গতকাল সোমবার বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে এই জ্যেষ্ঠ শিক্ষকের গাড়ি সাজিয়ে সেই গাড়িতে করে তার বাড়ি ফেনিতে পৌঁছে দেওয়া হয়। প্রিয় শিক্ষককে শিক্ষক জীবন থেকে অতীত হতে দেখে শিক্ষার্থীদের কেউ কেউ মুছলেন চোখ। আবেগ ধরে রাখতে পারেননি শফিকুর রহমান স্যারও। শিক্ষার্থীদের বিনম্র শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে আবেগে ভাসলেন তিনিও। জানতে চাইলে ৩৭ বছরের শিক্ষকতা জীবনকে তিনি তুলে ধরলেন শব্দে শব্দে। বলেন, এই মর্যাদাপূর্ণ বিদ্যালয়ের সঙ্গে আমার যোগসূত্র দীর্ঘ ৩৭ বছরের বেশি সময় হয়ে গেছে। এই সময়ে আমি এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে একটি অদম্য বন্ধন গড়ে তুলেছি। তাই আজ এই বিদায় সন্ধিক্ষণে দায়িত্ব ও কর্তব্য থেকে সরে আসাটা আমার জন্য একটু কঠিনই মনে হচ্ছে।
বিদ্যালয়ের বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের ‘তোমরা আমার সন্তান’ উল্লেখ করে শফিকুর রহমান বলেন, জীবনের এই দীর্ঘ হায়াত তোমাদের মানুষ করার জন্য এই পবিত্র আঙিনায় কাটিয়ে দিয়েছি। আমি দৃঢ়তার সঙ্গে বিশ্বাস করি নিশ্চয়ই আমি আমার সন্তানতুল্য প্রাণপ্রিয় ছাত্র–ছাত্রীদের সৎ ও নৈতিক শিক্ষার মাধ্যমে ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য আমার পুরোটা কর্মজীবন সচেষ্ট ছিলাম। আজ আমার গর্বে বুক ভরে যাচ্ছে।
কেননা আমাকে সম্মান জানানোর জন্য আমার সব প্রাণপ্রিয় প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে এসে হাজির হয়েছেন। এর চেয়ে আনন্দের আর কী হতে পারে? আজ আমি এক পরম আনন্দ ও তৃপ্ত ভরা মন নিয়ে অবসরে যাচ্ছি। প্রিয় শিক্ষকের বিদায় অনুষ্ঠানে বিদ্যালয়ের বর্তমান শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি বিভিন্ন ব্যাচের শিক্ষার্থীরা অংশ নেন। এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. ইসমাইল, বর্তমান প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুল মোমেন, মো. নজরুল, মো. নাছির, মো. ইউনুস, মো. ইদ্রিস, কবির আহমদ, মোহরম আলী, শফিকুল আজম, বাহার সওদাগর প্রমুখ।
শফিকুর রহমান আনুষ্ঠানিক অবসর পেয়েছেন ঠিকই। কিন্তু বিদ্যালয়ের আঙিনা আর শিক্ষার্থীদের মন থেকে তার মতো শিক্ষাগুরুর যে ছুটি নেই!









