চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ঢাকা আইসিডিতে কন্টেনার পরিবহনের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা আয় করার সুযোগ আছে। প্রায় ২১ শতাংশ প্রবৃদ্ধিকে পুঁজি করে কন্টেনার পরিবহনে বিপুল সম্ভাবনা থাকলেও কাজে লাগাতে পারছে না বাংলাদেশ রেলওয়ে। কন্টেনার পরিবহনের মাধ্যমে রেলওয়ের আয় বহু গুণে বৃদ্ধি করার সুযোগ রয়েছে জানিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, অবকাঠামোগত খুব বেশি বিনিয়োগ না করেও সদিচ্ছার মাধ্যমে এই লক্ষ্য অর্জন সম্ভব। রেলপথে কন্টেনার পরিবহন বাড়ানো গেলে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বিশৃঙ্খলা বহুলাংশে কমে যাওয়ার পাশাপাশি সড়কের উপরে বিদ্যমান বাড়তি চাপও কমে যাবে। সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে যে পরিমাণ কন্টেনার হ্যান্ডলিং হয় তার প্রায় ৭০ শতাংশ ঢাকা এবং সন্নিহিত অঞ্চলের। চট্টগ্রাম বন্দরে গত বছর ৩২ লাখ ১৪ হাজার ৫৪৮ টিইইউএস কন্টেনার হ্যান্ডলিং করে। এর মধ্যে বিশ লাখ টিইইউএসের চেয়ে বেশি কন্টেনার ঢাকা এবং সন্নিহিত অঞ্চলের। ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুরসহ ওই অঞ্চলের শত শত কারখানার কাঁচামাল ও উৎপাদিত পণ্য কন্টেনারের মাধ্যমে পরিবাহিত হয়। এই বিপুল সংখ্যক কন্টেনারের সামান্য অংশ পরিবহন করা হয় ঢাকার কমলাপুর আইসিডির মাধ্যমে। রেলপথে কন্টেনার পরিবহনের লক্ষ্যে নির্মিত এই আইসিডি দেশের ব্যবসায়ী, শিল্পপতিদের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি।
ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে পণ্যবাহী ট্রেনের বেহাল দশার কারণে আইসিডি নির্মাণের মূল উদ্দেশ্য অনেকটা ভেস্তে গেছে। চট্টগ্রাম থেকে ৮টি কন্টেনার ট্রেন নিয়মিত চলাচল করে। এর বাইরে দুটি ট্রেন প্রয়োজন হলে চলাচল করে। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে প্রতি মাসে গড়ে ৮ হাজার টিইইউএসের মতো কন্টেনার ঢাকা আইসিডির জন্য পরিবহন করতে পারে রেলওয়ে। অথচ এই খাতে হাজার হাজার কন্টেনার পরিবহনের সুযোগ রয়েছে।
সূত্র বলেছে, বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ঢাকা এবং সন্নিহিত অঞ্চলের যে পরিমাণ পণ্য হ্যান্ডলিং হয় তার মাত্র ৮ থেকে ৯ শতাংশ পরিবহন করতে পারে রেলওয়ে। ১৫ থেকে ১৬ শতাংশ পরিবাহিত হয় কন্টেনার মুভারের মাধ্যমে। বাকি ৭০ শতাংশ ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যানের মাধ্যমে। কিছু পণ্য অভ্যন্তরীণ নৌ পথে পরিবাহিত হয়। সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ও শ্রীলংকা থেকে গড়ে তিন থেকে চার দিনের মধ্যে একটি কন্টেনার চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছলেও এখান থেকে সেটিকে ঢাকায় নিতে আমদানিকারকদের ঝামেলা পোহাতে হয়। জাহাজ থেকে খালাসের পর চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য কাভার্ড ভ্যানে বোঝাই করা এবং তা ঢাকা পৌঁছতে দীর্ঘ সময় লাগে। আবার পুরো কন্টেনার কমলাপুর আইসিডিতে নিতে হলে নানা প্রক্রিয়ায় ১০ থেকে ১৫ দিনও সময় লেগে। কখনো কখনো সিরিয়ালে পড়ে সময় আরো বেশি লাগে। এই অবস্থায় রেলওয়ে চাইলে কন্টেনার ট্রেনের সংখ্যা বাড়িয়ে এই খাত থেকে কোটি কোটি টাকা আয় করতে পারে।
সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালে ঢাকা আইসিডি থেকে মোট ৯৬ হাজার ৭৬১ টিইইউএস কন্টেনার হ্যান্ডলিং করেছে রেলওয়ে। এটি বন্দরের কন্টেনার হ্যান্ডলিংয়ের ইতিহাসে রেকর্ড। এর আগে ২০১৯ সালে আইসিডি থেকে ৯০ হাজার ৯০৬ টিইইউএস কন্টেনার হ্যান্ডলিং করার রেকর্ড ছিল। কমলাপুর আইসিডি থেকে গত ডিসেম্বর মাসে সর্বোচ্চ ৫ হাজার ১০৫ টিইইউএস কন্টেনার ডেলিভারি দেয়া হয়েছে। এর আগে গত জানুয়ারিতে সর্বোচ্চ ৪ হাজার ৭০৩ টিইইউএস কন্টেনার ডেলিভারি দেয়ার রেকর্ড ছিল। গত মাসে আইসিডিতে সর্বোচ্চ ৯ হাজার ৭৩৯ টিইইউএস কন্টেনার হ্যান্ডলিং করা হয়। এর আগে ২০১৯ সালের জুলাইয়ে সর্বোচ্চ ৯ হাজার ৫২৩ টিইইউএস কন্টেনার হ্যান্ডলিংয়ের রেকর্ড ছিল। ২০২১ সালে আইসিডিতে কন্টেনার হ্যান্ডলিংয়ের প্রবৃদ্ধি ছিল ২০.৯০ শতাংশ, যা বন্দরের স্বাভাবিক প্রবৃদ্ধি থেকে অনেক বেশি।
রেলপথে কন্টেনার পরিবহনের এই প্রবৃদ্ধিকে কাজে লাগিয়ে রেলওয়ে কোটি কোটি টাকা আয় করতে পারে বলে উল্লেখ করে বন্দরের একটি সূত্র জানিয়েছে, রেলপথে কন্টেনার পরিবহনের প্রচুর চাহিদা। শত শত ব্যবসায়ী, শিল্পপতি তাদের পণ্য পরিবহনের জন্য রেলওয়ের দিকে চেয়ে থাকেন। কিন্তু রেলওয়ের সীমাবদ্ধতার কারণে তা হচ্ছে না। রেলপথে কন্টেনার ট্রেন বাড়িয়ে এবং চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় কন্টেনার পরিবহন সহজ করলে এই খাতে কোটি কোটি টাকা আয়ের সম্ভাবনা কাজে লাগানো যায়।
রেলওয়ের পদস্থ একজন কর্মকর্তা বলেন, ৮টি ট্রেন নিয়মিত কন্টেনার পরিবহন করে। চাহিদা বাড়লে আরো দুটি সার্ভিস দেয়। কন্টেনার ট্রেনের আরো চাহিদা রয়েছে স্বীকার করে তিনি বলেন, রেলওয়ের যাত্রী পরিবহনের ব্যাপারটি ঠিক রাখতে কন্টেনারসহ পণ্য পরিবহনে ট্রেন চলাচলে কিছুটা সীমাবদ্ধতা কাজ করে। রেলওয়ে বেশ কিছু উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এগুলো সম্পন্ন হলে কন্টেনার পরিবহনে ট্রেনের সংখ্যা আরো বাড়ানোর সুযোগ তৈরি হবে।
উল্লেখ্য, একটি কন্টেনার ট্রেন গড়ে ২৫ থেকে ৩০ টিইইউএস কন্টেনার পরিবহন করতে পারে। এতে রেলওয়ের আয় হয় প্রায় ৭ লাখ টাকা।