সমুদ্রগামী জাহাজে বিনিয়োগ বাড়াতে হচ্ছে অ্যাকশন প্ল্যান

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ১২ জুন, ২০২২ at ৮:০৬ পূর্বাহ্ণ

দেশের সমুদ্রগামী জাহাজে বিনিয়োগ বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সম্ভাবনাময় এই শিল্পের ঐতিহ্য ফেরানোর লক্ষ্যে সরকার অ্যাকশন প্ল্যান তৈরি করছে। এরই অংশ হিসেবে এবার ৮ বছরের জন্য সমুদ্রগামী জাহাজের আয়কে করমুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। সরকারি এই উদ্যোগ বিশ্বের শিপিং সেক্টরে দেশের অংশীদারিত্ব বাড়ানোর পাশাপাশি কোটি কোটি ডলারের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের পথ সুগম করবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বিশ্বের আমদানিরপ্তানি বাণিজ্যের সিংহভাগ পণ্য পরিবাহিত হয় জাহাজের মাধ্যমে। বাংলাদেশের বৈদেশিক বাণিজ্যের ৮২ শতাংশ পণ্য পরিবাহিত হয় সমুদ্রপথে। জনসংখ্যা বৃদ্ধি, মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধিসহ নানা কারণে বিশ্বব্যাপী বাড়ছে আমদানিরপ্তানি বাণিজ্য। এতে করে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সমুদ্র বাণিজ্যের আকার। বর্তমানে সমুদ্রপথে পণ্য পরিবহনে বছরে ব্যয় হয় সাড়ে সাত বিলিয়নের বেশি ডলার। বিপুল অংকের টাকা সমুদ্রগামী জাহাজসংশ্লিষ্টরা আয় করেন। বাংলাদেশের অবস্থান এখানে একেবারে তলানীতে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলেছে, বিশ্বে বর্তমানে সমুদ্রগামী জাহাজের সংখ্যা প্রায় ৫৪ হাজার। এর মধ্যে প্রায় সাত হাজার জাহাজ নিয়ে এই ব্যবসায় শীর্ষে রয়েছে চীন। ৫ হাজারের কাছাকাছি জাহাজ নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ইউরোপের দেশ গ্রিস। প্রায় ৪ হাজার জাহাজ নিয়ে তৃতীয় অবস্থান জাপানের দখলে। প্রতিবেশী দেশের মধ্যে ভারতের অবস্থান ভালো। ভারতীয় পতাকাবাহী প্রায় দেড় হাজার সমুদ্রগামী জাহাজ রয়েছে। বাংলাদেশের অবস্থান নাজুক। বর্তমানে মাত্র ৬৪টি জাহাজ রয়েছে বাংলাদেশের। সূত্র জানায়, সমুদ্রগামী জাহাজে বাংলাদেশের শক্ত অবস্থান তৈরির চেষ্টা চলছে অনেক আগে থেকে। ১৯৯৪ সালে শিল্প মন্ত্রণালয় সমুদ্রগামী জাহাজ পরিবহন খাতকে শিল্প হিসেবে ঘোষণা করে। কিন্তু সম্ভাবানাময় শিল্পটির বিকাশ পদে পদে ব্যাহত হচ্ছিল। দেশীয় পতাকাবাহী জাহাজকে অগ্রাধিকার দেয়ার জন্য ২০১৯ সালের ১২ নভেম্বর বাংলাদেশ পতাকাবাহী জাহাজ (সংরক্ষণ) আইন ২০১৯ পাস করা হয়। এই আইনে দেশীয় পতাকাবাহী কোনো জাহাজ বন্দরে থাকলে বা পৌঁছানোর সিডিউল থাকলে ওই জাহাজেই পণ্য পরিবহনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এতে দেশীয় জাহাজগুলোর ব্যবসা বাড়ছে।

দেশীয় পতাকাবাহী জাহাজের সংখ্যা ধীরে ধীরে বাড়ছে উল্লেখ করে সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা বলেন, আমাদের জাহাজের সংখ্যা ৪০টিতে এসে ঠেকেছিল। বিএসসি প্রায় জাহাজশূন্য হওয়ার উপক্রম হয়েছিল। এখন ধীরে ধীরে জাহাজের সংখ্যা বাড়ছে। বর্তমানে জাহাজের সংখ্যা ৬৪টি। বেশ কয়েকটি জাহাজ এখনো রেজিস্ট্রেশন নেয়নি। আগামী কিছুদিনের মধ্যে এসব জাহাজ তালিকাভুক্ত হবে। সবগুলো জাহাজ রেজিস্ট্রেশন করলে দেশীয় জাহাজের সংখ্যা ৮০টির কাছাকাছি যাবে।

জাহাজ শিল্পের বিকাশে পৃষ্ঠপোষকতা দিতে সরকার এই শিল্পের আয়কে আট বছরের জন্য করমুক্ত ঘোষণা করছে। ২০৩০ সাল পর্যন্ত এই শিল্পের আয়ের কোনো ট্যঙ পরিশোধ করতে হবে না। তবে এই আয় বিদেশ থেকে বৈদেশিক মুদ্রায় ব্যাংকিং চ্যানেলে দেশে আনতে হবে।

বিশ্বে জাহাজ ভাড়া নিয়ে অস্থিরতা বিরাজ করছে। বাংলাদেশ থেকে শত শত কোটি ডলার জাহাজ ভাড়া বাবদ প্রতি বছরই বিদেশি জাহাজ মালিকদের পকেটে যাচ্ছে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে দেশীয় জাহাজের সংখ্যা বাড়ানো গেলে বাংলাদেশ নানাভাবে উপকৃত হবে উল্লেখ করে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জাহাজে বিনিয়োগ বাড়লে শুধু বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় নয়, একই সাথে শত শত নাবিকেরও কর্মসংস্থান হবে।

সমুদ্রগামী জাহাজের আয়কে আট বছর করমুক্ত রাখার ঘোষণাকে এবারের বাজেটের অন্যতম আকর্ষণীয় দিক মন্তব্য করে চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম আজাদীকে বলেন, জাহাজে বিনিয়োগ বাড়ছে। অত্যন্ত সম্ভাবনাময় এই খাতের বিকাশ দেশের সার্বিক অর্থনীতিতে বড় প্রভাব ফেলবে। এই খাতের আয়কে করমুক্ত রাখার সিদ্ধান্ত দূরদর্শী।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকিছু মানুষ দেশের উন্নয়ন ও অর্জনকে মেনে নিতে পারছে না : প্রধানমন্ত্রী
পরবর্তী নিবন্ধফেরি সার্ভিস চালুর উদ্যোগ যাচাই করা হচ্ছে সম্ভাব্যতা