(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
১৯৫০ খ্রিস্টাব্দ থেকে ইঞ্জিনিয়ার খালেক প্রকাশ করতেন কোহিনুর নামের একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা। কোহিনুর প্রেসে তাঁর মামা ও পরবর্তী সময়ে শ্বশুর ইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেকের সঙ্গে কাজ করতে করতে তাঁকে অনুসরণ করেন অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদ। ইঞ্জিনিয়ার খালেকও আবিষ্কার করেন অধ্যাপক খালেদের চারিত্র-বৈশিষ্ট্য। একদিন তাঁকে নিজের কাছে ডেকে তাঁর দৈনিক পত্রিকা প্রকাশ করার ইচ্ছেটি ব্যক্ত করেন। মোহাম্মদ খালেদের আন্তরিক আশ্বাস ও নির্ভরতায় ইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেক ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দের ৫ সেপ্টেম্বর প্রকাশ করলেন আজাদী নামের দৈনিক পত্রিকা। পত্রিকার প্রকাশক ও সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন ইঞ্জিনিয়ার খালেক নিজেই। তার মাধ্যমে দৈনিক আজাদী দিয়েই শুরু অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদের সাংবাদিকতা জীবন। ধীরে ধীরে রপ্ত করে নেন পত্রিকার সকল কাজ। অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেন আদর্শ সাংবাদিক হিসেবে। দৈনিক আজাদী প্রকাশের মাত্র ২ বছর পর ১৯৬২ খ্রিস্টাব্দের ২৫ সেপ্টেম্বর ইন্তেকাল করেন পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেক। তাঁর মৃত্যুর পর আজাদীর সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করতে হয় অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদকে। আজাদীর মাধ্যমে ঘুরে যায় অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদের জীবনের মোড়। তিনি যুক্ত হয়ে পড়লেন সাংবাদিকতা পেশায়।
সাংবাদিকতায় আগমন বিষয়ে অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদ বলেন, ‘ইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেকই আমাকে নিয়ে এলেন সাংবাদিকতায়। এমন একজন মহাত্মার পরশ নিয়ে আমি বড় হয়েছি, যিনি ছিলেন নিখাদ খাঁটি মানুষ। ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দে এসে তার ইচ্ছে হলো চট্টগ্রাম থেকে একটি দৈনিক পত্রিকা বের করবেন। একদিন আমাকে ডেকে নিয়ে বসালেন। বললেন, খালেদ আমার দীর্ঘ দিনের শখ ও ইচ্ছা, চট্টগ্রাম থেকে একটি দৈনিক প্রকাশ করার। তুমি যদি আমার সাথে ওয়াদা করো, পত্রিকার সাথে থাকবে, তাহলে আমি উদ্যোগ গ্রহণ করবো। আমি তার কাছে ওয়াদা করলাম। তিনি কঠোর পরিশ্রম করে সত্যি সত্যি দৈনিক আজাদী নামে একটি পত্রিকার অনুমোদন নিয়ে এলেন।’
অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদ ছিলেন একজন আদর্শবান সাংবাদিক। সাংবাদিকতার নীতি থেকে কখনও বিচ্যুত হননি। পরমতসহিষ্ণুতার ক্ষেত্রেও তিনি ছিলেন অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। ইতিহাসবিদ আলমগীর মোহাম্মদ সিরাজুদ্দীন মন্তব্য করেন, ‘তিনি প্রকৃতই সৎ মানুষ। একদিকে একটি প্রসিদ্ধ পত্রিকার সম্পাদক, অন্যদিকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অংশ। এত সুযোগ তারপরও তিনি শুদ্ধ থেকেছেন এটাই তাঁকে মহৎ মানুষের কাতারে এনেছে।’ সংবাদ-প্রতিবেদন আর সম্পাদকীয় মন্তব্যের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করার দুরূহ কাজটি সুচারুরূপে সম্পাদন করেছেন অধ্যাপক খালেদ। সংবাদ পরিবেশনের ব্যাপারে তিনি যেমন সত্যনিষ্ঠ থাকার চেষ্টা করেছেন, তেমনি সম্পাদকীয় নীতিতে দেশের সঙ্গে বিশ্বের সম্পর্কের নীতির সম্মানজনক সঙ্গতি রক্ষা করেছেন।
বলতে পারি, সাংবাদিকতা পেশায় তিনি ছিলেন সফল সৈনিক। নীতির ব্যাপারে ও সত্যানুসন্ধানে তিনি ছিলেন আপসহীন। দীর্ঘ সাংবাদিকতা জীবনে কোনো নীতি বিবর্জিত কর্মে তিনি লিপ্ত হননি। সত্য ও ন্যায়ের দৃঢ় সমর্থক হিসেবে কাজ করেছেন। আদর্শ ও পেশার মর্যাদা সমুন্নত রাখার ক্ষেত্রে তিনি অগ্রসৈনিকের দায়িত্ব পালন করেছেন। প্রাবন্ধিক-সাংবাদিক সিদ্দিক আহমেদ বলেন, ‘একটা পত্রিকার সম্পাদক হওয়া মানে জাতির পুনর্গঠনে সহযোগিতা দেয়া। অধ্যাপক খালেদ শুধু সম্পাদক হিসেবে নন, শুধু সাংবাদিক হিসেবেও নন, সামাজিক ব্যক্তিসত্তা হিসেবে অনেক অবদান রেখেছেন।’
প্রফেসর খালেদ সাহেব একটা কথা বলতেন, মোনায়েম খান তাকে ডেকেছিলেন গোর্কির জলোচ্ছ্বাসের সময়। বাসায় ডেকে নিয়ে বলেছেন, ‘এটা কি ছাপছেন? খালেদ সাহেব বললেন, এটা তো আমি ছাপিনি, এটা তো এএফপি ছাপছে। ওখান থেকে নিয়ে আমি রিপ্রিন্ট করেছি। তিনি তাকে অত্যন্ত বুদ্ধিমত্তার সাথে উত্তর দিয়েছিলেন। গোর্কীর জলোচ্ছ্বাসের সময় আজাদী একমাত্র নিউজ করেছিল, অন্যকোনো পত্রিকা নিউজ করতে পারেনি। আর ৬৯-৭০ এর সময় দৈনিক টেলিগ্রাম হিসেবে আমরা দেখেছি সন্ধ্যায় একপাতার টেলিগ্রাম বের করতেন। এখানে আজাদীর এম এ মালেককে শ্রদ্ধা জানাতে হয় এ কারণে, তিনি সেসময় আরেকটি বড় ভূমিকা পালন করেছিলেন। ইঞ্জিনিয়ার খালেক সাহেব তখনও ইন্ডিয়া থেকে ফেরত আসেনি। কিন্তু সবাই মিলে স্বাধীন বাংলার প্রথম পত্রিকা ‘জয় বাংলা বাংলার জয়’ শিরোনামে লাল কালি দিয়ে ছাপাতে পেরেছিলেন।
আমরা লক্ষ্য করেছি, এখানে খালেদ সাহেবের রাজনৈতিক জীবনের যে নেতৃত্ব, সেখানে সাংবাদিক হিসেবেও একটা বড় নেতৃত্ব দিয়েছেন। অন্যকোনো সাংসদ নিতে পারেননি। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে আজাদী একটা বিশেষ ভূমিকা পালন করেছিল। আজাদীকে সে সময় কুমিল্লার বিভিন্ন এলাকায় পুড়ে ফেলেছিল। গভর্নর মোনায়েম খানের ব্যবস্থাপনায় এটা করেছিলেন। তার কারসাজিতে কুমিল্লায় ঘটনাটি ঘটেছিল। কেননা তারা বিশ্ববিদ্যালয়কে কুমিল্লায় করতে চেয়েছিলেন।
চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব ও চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠায় অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদের ভূমিকা ছিল অপরিসীম। প্রয়াত সাংবাদিক নজির আহমদ তাঁর স্মৃতিচারণমূলক লেখায় বলেন, ‘১৯৬১-১৯৬২ সালেই দুটি প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে। ১৯৬২ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি তখনকার পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর লে. জে. আজম খান জামালখান এলাকায় চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। অধ্যাপক খালেদসহ অন্যান্যের প্রচেষ্টায় চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব প্রতিষ্ঠা লাভ করে।’১৩ চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নকে সংগঠিত করার ক্ষেত্রেও অধ্যাপক খালেদ সক্রিয় ছিলেন।
আমরা জানি আমাদের পবিত্র সংবিধান প্রণয়নের ক্ষেত্রে অধ্যাপক খালেদ ভূমিকা রেখেছিলেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সঠিক মানুষটিকেই সংবিধান প্রণয়ন করতে দিয়েছিলেন। পরবর্তী পর্যায়ে প্রফেসর মোহাম্মদ খালেদ আর্থিকভাবে ব্যবসায়ী নয় এ ধরনের একজন বিধায়ক হিসেবে ছিলেন এবং তা শেষ পর্যন্ত ছিলেন। আপনারা লক্ষ্য করবেন যে, একাত্তরের পরে তিনি গভর্নর মনোনীত হয়েছিলেন। এরপর তিনি রাজনীতি থেকে দূরে সরে গেছেন। সাংবাদিকতা-সম্পাদনায় ছিলেন। আরেকটি বড় কথা হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক হিসেবে কাজ করে গেছেন। তাঁর জীবনাচরণ অত্যন্ত সাধারণ। গাড়ি ছাড়া চলাফেরা, মুখে সিগারেট, মাথায় টুপি, শুভ্রবসন সম্বলিত এই মানুষটি অভিভাষণ দিয়েছেন প্রচুর। তাঁর ৭৫ তম জন্মদিন পালিত হয়েছে, তাতে প্রচুর মানুষ উপস্থিত হয়েছিল। সারা জীবন তিনি উচ্চবিলাসিতাকে এড়িয়ে চলেছেন। একটি গাড়ি, একটি ভূমির মতো স্বপ্ন তিনি দেখে যেতে পারেননি। তদুপরি তাঁর জীবনে এমন দুর্ঘটনাও ঘটেছে- জীবদ্দশায় পিতার কাঁধে পুত্রের লাশ তিনি বহন করেছেন। এটি একটি করুণ ঘটনা। এই ঘটনার অল্প দিনের ভেতরে তাঁর মহাপ্রয়াণ ঘটে।
আমি যে মেসেজটি তরুণ প্রজন্মকে দিতে চাই, আমরা তাঁকে স্মরণ করব, কিন্তু সাথে সাথে অনুসরণও করব। স্মরণ করতে হবে যে মুক্তির সৈনিককে, সত্যিকার অর্থে সংস্কৃতির একজন ধারক-বাহককে, বাঙালি বিকাশের একজন নিবেদিত মানুষকে, মুক্তিযুদ্ধের একজন প্রকৃত দেশপ্রেমিককে। বর্তমানে তিন তিনবার নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী যে জিনিসটি চাচ্ছেন। তিনি প্রায়শ দৃঢ়স্বরে বলেন, ‘আমার চাওয়া ও পাওয়ার কিছু নেই। আমার সামনেও কিছু নেই, আমার পেছনও কিছু নেই। সেজন্য আমি সাহসী ভূমিকা নিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি।’ তিনি জাতীয় অভ্যন্তরে শাসক হিসেবে দূরদৃষ্টি যেমন দেখিয়েছেন তেমনি তিনি আমাদের কতগুলো অর্জনও দেখাচ্ছেন। তিনি এসজিডি, সাস্টেনেইব্যল ডেভেলাপমেন্ট বাস্তবায়নের কথা বলেছেন। আমাদের জিডিপি এগিয়ে যাচ্ছে। সারাদেশে বড় বড় উন্নয়ন কাজ হচ্ছে। শুধু চট্টগ্রামের কথাই ধরুন, অসংখ্য মেগা প্রজেক্ট দৃশ্যমান হতে চলেছে। কর্ণফুলী টানেল, ঘুনধুম রেললাইন, মহেশখালীর উন্নয়ন প্রকল্পসহ অন্যান্য প্রোগ্রামগুলো যেমন মুক্তিযোদ্ধা ভাতা, বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, মুক্তিযোদ্ধাদের নামকরণের আগে বীর বলা ঠিক যেমনটি বিদ্যাসাগর ভূমিকা পালন করেছিলেন। নারী ক্ষমতায়নের ব্যাপারে তিনি বেগম রোকেয়ার মতো অগ্রগামী ভূমিকা রাখছেন। তিনি নানা বিশেষণে বিশেষায়িত হয়েছেন। বিশ্বের বিভিন্ন জায়গা থেকে উপাধি দেয়া হচ্ছে। তিনি বেছে বেছে সত্যিকার অর্থে একাত্তরে যারা দেশের জন্য ভূমিকা রেখেছিলেন তাঁদের সবাইকে পদায়ন করছেন এবং করোনার এই অতিমারিতেও বাংলাদেশের জিডিপির একটা স্থিতিশীল অবস্থান নিশ্চিত করেছেন। তিনি বঙ্গবন্ধুর কথা পুনরাবৃত্তি করে বলেন ‘আমরা দুর্নীতি চাই না, আমরা ঘুষখোর চাই না, আমরা চোর চাই না। আমাকে আরও সময় দিন আমি একটি সোনার বাংলা উপহার দিতে চাই।’
কিন্তু দুঃখের বিষয় এর মধ্যেও অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে অনুপ্রবেশ করে বাংলাদেশে রুলিং পার্টিকে ব্যবহার করা, একই সাথে অন্ধকারে ঘাপটি মেরে থাকা মৌলবাদীরা ভাস্কর্য অপসারণসহ যে অন্যায্য কাজগুলো করছেন সেগুলো থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য, এগুলো থেকে সচেতন হওয়ার জন্য, এগুলোর ব্যারিকেড দেয়ার জন্য, প্রতিরোধ করবার জন্য যে বাণীটি হচ্ছে একজন শেখ মুজিবের, শেখ হাসিনার এবং প্রফেসর মোহাম্মদ খালেদের। তাঁদের মতো শুদ্ধ বিবেকবান মানুষের এই বক্তব্য আমরা যদি পৌঁছে দিতে পারি, তাহলে বাঙালি জাতীয়তাবাদের চেতনা আমাদের মধ্যে থাকবে। বিজ্ঞানী প্রফেসর জামাল নজরুল ইসলাম প্রফেসর খালেদ সম্পর্কে যেমনটি মূল্যায়ন করেছেন, ‘নিষ্ঠাবান ও সমাজ সচেতন মানুষ প্রফেসর খালেদ। সমাজ ও দেশের প্রতি তাঁর একটা কমিটমেন্ট আছে। স্বভাবে তিনি বিনয়ী মানুষ। সমাজটাকে দেখছেন বিশেষ কমিটমেন্টের আলোকে। আর সে জন্যই তিনি মহৎ মানুষ এবং সকলের শ্রদ্ধা পাওয়ার মতো মানুষ।’১৪ মহান মুক্তিযুদ্ধের যে চেতনা, যে শিক্ষা আমরা নিয়েছিলাম, আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম বা আগামীর নেতৃত্ব যদি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ এবং তার সৈনিক প্রফেসর মোহাম্মদ খালেদের গণতান্ত্রিক চেতনা ও সংস্কৃতির বিকাশের বোধগুলোকে ধারণ করতে পারে তাহলে বাংলাদেশ একদিন সুউচ্চ শিখরে পৌঁছে যাবে।
বঙ্গবন্ধু হত্যার পর একটি পর্যায় ছিল যখন আমরা দীর্ঘ একটি স্বৈরশাসনের মধ্য দিয়ে চলেছি। যেখানে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের অনেক ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্যতা ছিল না। বৃহত্তর চট্টগ্রামে তখন আমাদের বাতিঘর আমাদের বিবেকের কণ্ঠস্বর খুব ক্ষুদ্র থেকে বড় কোনো সমাবেশে অসংখ্য বক্তব্য রেখেছিলেন। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় অনেকে প্রফেসর মোহাম্মদ খালেদের উপর গবেষণা করেছেন, কাজ করেছেন, দুটি গ্রন্থও প্রকাশিত হয়েছে। আমি মনে করি এখনও সঠিকভাবে তাঁর মূল্যায়ন হয়নি। আমি আজকে এখান থেকে বলতে চাই, চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের একটি ভাষণে তিনি বলেছিলেন যে মানব চরিত্রের কথা, আমাদের বাঙালি চরিত্রের কথা- ‘আমরা ফেরেশতার মতো কথা বলি, শয়তানের মতো আচরণ করি’। এ ধরনের মহাবাণী সমৃদ্ধ ভাষণ, অভিভাষণ, বক্তব্য, সভাপতির কথন অথবা বিভিন্ন জায়গায় বলা তাঁর কথাগুলো গ্রন্থিত হয়নি, সম্পাদিত হয়নি। প্রবাদ আছে ‘ঞড় নব মড়ড়ফ ঃবধপযবৎ ড়হব ংযড়ঁষফ নব ধ মড়ড়ফ ংঃঁফবহঃ ভরৎংঃ।’ চট্টগ্রামের সুশীল সমাজের ছোটবড় যেকোনো অনুষ্ঠানে তাকে দাওয়াত দিলেই তিনি যেতেন। মধুর ভাষা ও অকাট্য যুক্তিসহকারে জনগণ ও সমাজের জন্য প্রয়োজনীয় কিছু কথা আকর্ষণীয় ভঙ্গিতে বলে যেতেন। বিপ্লবী বিনোদবিহারী চৌধুরী অধ্যাপক খালেদ সম্পর্কে বলেন, ‘তিনি মানুষের অন্তর আকর্ষণ করেছেন। মানুষ তাই তাকে ভালোবাসে, শ্রদ্ধা করে কাছে টানে। তার মধ্যে গুণাবলির সমাবেশ না ঘটলে তাকে ঋদ্ধ সমাজ শ্রদ্ধা করবেন কেন? আমিও তার সাথে অনেক সভা-সমিতিতে যোগ দিয়েছি। বিনয়ী, নিরহঙ্কার, স্বল্পভাষী অধ্যাপক সাহেবের কথা মানুষ মন দিয়ে শোনে আমি দেখেছি। আমিও দূর হতে শ্রদ্ধা করি আজাদী পত্রিকার সম্পাদক সাহেবকে।’
বস্তুত মানুষের মাঝে উপস্থিত হয়ে জাতীয় ও সামাজিক সমস্যার দিকনির্দেশনামূলক কথাগুলো বলার জন্য তিনি নিজের ভেতর তাগাদা অনুভব করতেন। তাঁর মতো লোককে বলা হয় শুদ্ধতম মানুষ। এসব মানুষ গাড়ি বাড়ির মালিক হতে পারেন না, তিনিও হননি। কিন্তু তিনি যা হয়েছেন তাঁর মতো লোক সমাজে খুব বেশি সৃষ্টি হয় না। একবিংশ শতাব্দীতে অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদের মতো নতুন প্রজন্মতে কিছু মানুষ গড়ে ওঠে তাহলে দেশ জাতি ও কৃষ্টি প্রগতির পথে এগিয়ে যেতে সক্ষম হবে। আমি তাঁর উল্লেখযোগ্য অভিভাষণগুলো ধারণ করার জন্য, একটা প্রকাশনা করবার জন্য চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবকে অনুরোধ জানাচ্ছি। এক্ষেত্রে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব শুধু নয়, আমাদের সমগ্র শুদ্ধাচার সাংবাদিক, চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়ন কিংবা দৈনিক আজাদীও এর সাথে যুক্ত হতে পারে। আমরা চাই যে তার ভাষণ-অভিভাষণ নিয়ে একটি গ্রন্থ রচনা করা হোক। [চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব আয়োজিত অধ্যাপক খালেদ স্মারক বক্তৃতা]
লেখক : শিক্ষাবিদ; উপাচার্য, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।