প্রবীণ সমাজসেবী ও সংগঠক ফজলুল গনি মাহমুদ গত ২৯ জুলাই ইন্তেকাল করেন। দিনটি ছিল ১০ মহররম আশুরা। সদালাপী, বিনয়ী, ভদ্র নম্র সহজ সরল সাদাসিধে সজ্জন মানুষ হিসেবে তাঁর বিশেষ পরিচিতি রয়েছে। জন্মেছেন চট্টগ্রাম নগরের নজির আহমদ সড়কস্থ আন্দরকিল্লায়, ১৯৩৭ সনের ৪ মে। প্রতিদানের প্রত্যাশা ছাড়াই নীরবে নিভৃতে তিনি মানুষের উপকার করতেন। নানামুখী জনকল্যাণ ও সমাজসেবায় তাঁর বিশেষ ভূমিকা ছিল। গরিব সুবিধাবঞ্চিত মানুষের সেবা করে তিনি অপার আনন্দ পেতেন। কোনো অসচ্ছল গরিব পরিবারের মেয়ের বিয়ে হচ্ছে না দেখলে তিনি আর্থিক সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিতেন। অসচ্ছল শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার খরচ জোগাতেন। ঋণগ্রস্ত মানুষকে ঋণ পরিশোধে সহায়তা করতেন। অধীনস্থ কর্মচারী ও কর্মীদের প্রতি তিনি সহানুভূতিশীল ও সহমর্মী ছিলেন। সবার সঙ্গে একান্ত আপনজনের মতো মিশতেন। তাঁর মাঝে অগাধ জ্ঞান ও পাণ্ডিত্য ছিল। বিত্ত বৈভবের কমতি ছিল না। নিজ জ্ঞানকে মানুষের উপকারে এবং বিত্ত বৈভবকে মানুষের কল্যাণে খরচ করে তিনি অসামান্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন।
ফজলুল গনি মাহমুদের পিতা মরহুম খান সাহেব মৌলভী আব্দুল হালিম চৌধুরী বি.এল. চট্টগ্রাম তথা দেশের একজন বিশিষ্ট সমাজসেবক, সংস্কারক ও রাজনীতিবিদ ছিলেন। তাঁর বড় দাদা মরহুম মৌলভী আহসানুল্লাহ্ চৌধুরী চট্টগ্রাম জিলা জমিদার এসোসিয়েশনের সভাপতি ছিলেন। তাঁর নানা মরহুম আবদুল গণি সওদাগর দানবীর ও সমাজসেবক ছিলেন (প্রকাশ–হাতি কোম্পানি)। ফজলুল গনি মাহমুদ চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল থেকে ম্যাট্রিক ও সিটি কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন। বিভিন্ন সামাজিক ও সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন ফজলুল গনি মাহমুদ।
তিনি আজীবন সদস্য চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল, নাটাব যক্ষ্মা নিরোধ সমিতি চট্টগ্রাম, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ রোগী কল্যাণ সমিতি, মানবাধিকার কমিশন চট্টগ্রাম, মহিলা উচ্চ বিদ্যালয় মির্জাপুর হাটহাজারী, চট্টগ্রাম চক্ষু হাসপাতাল রোগী কল্যাণ সমিতি, মুসলিম এডুকেশন সোসাইটি, আন্দরকিল্লা, কনজুইমার রাইটস সোসাইটি বাংলাদেশ এবং কনজুইমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ এর সদস্য ছিলেন। এছাড়াও মরহুম খান সাহেব মৌলভী আবদুল হালিম বিএল স্মৃতি কল্যাণ সমিতি চট্টগ্রাম এর সভাপতি ছিলেন। তিনি খেলাধুলার প্রতি বিশেষ অনুরাগী ছিলেন এবং সাঁতার, কেরম ও ব্যাডমিন্টনে দক্ষ ছিলেন এবং বিভিন্ন সময়ে নানা পুরস্কার লাভ করেছিলেন। তিনি এয়ার ক্যাডেট ট্রেনিংয়ে পশ্চিম পাকিস্তান ভ্রমণ করেছিলেন এবং ল্যান্ড ক্যাডেট ও স্কাউট ছিলেন। তিনি একজন লেখকও ছিলেন। পত্র পত্রিকায় নানা বিষয়ে লিখতেন। একাধিক প্রবন্ধ গ্রন্থ ও কবিতার বই রয়েছে তাঁর।
তাঁর প্রকাশিত বইয়ের মধ্যে কর্ণফুলীর ঢেউ কবিতাগুচ্ছ, কর্মফল সাহিত্য সংকলন, বাংলাদেশের বর্তমান অতীত ও ভবিষ্যৎ রাজনীতি ও রাষ্ট্র শাসন, ঐতিহাসিক বন্দর নগরী চট্টগ্রামের গুরুত্ব ও উন্নয়ন প্রসঙ্গে, বৃটিশদের ভারতবর্ষে আগমন ও ভারত শাসন, সততার পুরস্কার বই উল্লেখযোগ্য। সমাজসেবী–সংগঠক ফজলুল গনি মাহমুদের সকল সন্তান উচ্চ শিক্ষিত ও প্রতিষ্ঠিত। তাঁর সন্তানরা রাজনীতি ও সমাজসেবায় নিবেদিত আছেন। বনেদি রাজনীতি সচেতন পরিবারে জন্ম নেয়া এবং নীরবে রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিমণ্ডলে বিচরণকারী কীর্তিমান এ মানুষটির ইন্তেকালে চট্টগ্রামবাসী এক দরদী সমাজসেবীকে হারালো।