অপরূপ সৌন্দর্যে ভরা এ বসুন্ধরার সেরা প্রাণী মানুষ। আবেগ ও বিবেক এ দুটো সত্তার কারণে মানুষ সেরা। এ দুটো সত্ত্বার মধ্য দিয়ে মানবজীবন পরিচালিত হয়। মানুষ শৈশবে যে সত্তার সাথে পরিচিত হয় তা হলো আবেগ। আবেগ হচ্ছে- অনুভূতিসম্পন্ন এক ধরনের মানসিক উত্তেজনা। আবেগ হচ্ছে অনুভূতির এক বিশেষ রূপ। আবেগ, অনুভূতি যার নেই সে সুস্থ মানুষ নয়। প্রত্যেকের আবেগ, অনুভূতি থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। তাকে লালন করে সবাই বেড়ে ওঠে। আবেগ আছে বলে মানুষ আজও বেঁচে আছে। আবেগ থেকে কবিতা, গানের সৃষ্টি যা মানুষকে আনন্দ, প্রেম- প্রীতি, ভালোবাসা ও দুঃখ বেদনা দিয়ে থাকে। কিন্তু অতি মাত্রার আবেগ মানুষকে আবার বিপদগামীও করে তোলে। তাই বলি, আবেগের বশীভূত হয়ে কোন কাজ করা ঠিক না। এতে মানসিক অস্থিরতা বাড়ে যা মানসিক অশান্তিসহ ক্রোধের জন্ম দেয়। অতি আবেগের কারণে পারিবারিক সহিংসতা, সামাজিক অস্থিরতা ও অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি হয়। ফলে, সমাজে অরাজকতা দেখা দেয়। তাই সঠিকভাবে আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করা উচিত। অন্যদিকে, যা আমাদের চিন্তা ও কাজ- কর্মের মধ্যে কোনটি ঠিক আর কোনটি ভুল পার্থক্য করতে সাহায্য করে তাই বিবেক। বিবেকের কাজে যুক্তি থাকে কিন্তু আবেগে তা অনেক সময় থাকে না। বিবেক ন্যায় অন্যায়কে বুঝতে বেশি গুরুত্ব দেয়। বিবেক, বুদ্ধি, আত্মসংযম এ তিনটি গুণ কেবল মানুষের মধ্যে থাকে। মানুষ ও পশুর মধ্যে তফাৎ হলো বিবেক। মানুষের বিবেক আছে, পশুর নেই। আর এ বিবেক জাগ্রত করার জন্য মনীষীদের জীবনী জানা সহ নৈতিক শিক্ষার প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে। সময়োপযোগী বস্তুনিষ্ঠ আচরণের জন্য বিবেকের ভূমিকা অপরিসীম। মানব জীবনে বেশি গুরুত্ব বহন করে বাস্তবতা। বিবেক বাস্তবতাকে বুঝতে শেখায়। তাই যে কোন ধরনের সিদ্ধান্ত আবেগ দিয়ে নয়, বিবেক দিয়ে দেখা উচিত। সৃষ্টিশীলতা সহ ভ্রাতৃত্ববোধ, প্রেম- প্রীতি, ভালোবাসার জন্য প্রয়োজন যেমন আবেগ ঠিক তেমনি বাস্তবতার নিরিখে কল্যাণমুখী সমাজব্যবস্থা গঠন ও পারিবারিক সমৃদ্ধির স্বার্থে যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত নিতে বিবেকেরও প্রয়োজন রয়েছে। তাই বলছি, সমাজকে সুন্দর ও কল্যাণমুখী রাখতে সচেতন নাগরিক হিসেবে আমাদের প্রত্যেকের শুধু আবেগ নয়, বিবেক থাকাও প্রয়োজন।
লেখক : প্রভাষক