খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে দীর্ঘ সময় ধরে ওঠানামা করছে প্রায় সব ধরনের ভোগ্যপণ্য। আন্তর্জাতিক বাজারে বুকিং দর কমলেও নির্দিষ্ট কয়েকটি পণ্যের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে এর কোনো প্রভাব পড়ছে না। বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তেল, চিনি ও গম বাজারে আসার আগেই অগ্রিম ডেলিভারি অর্ডার (ডিও) নিচ্ছেন আমদানিকারকরা। শুধু তাই নয়, আমদানিকারকরা তাদের নির্দিষ্ট প্রতিনিধির মাধ্যমে ডিও স্লিপ বিক্রি করে থাকেন। খাতুনগঞ্জের বাজারে ঢাকা ও চট্টগ্রাম ভিত্তিক তিনটি শিল্পগ্রুপ সবচেয়ে বেশি ডিও স্লিপ বিক্রি করে বলে জানা গেছে। এই ডিও প্রথাই পাইকারি বাজারে সর্বনাশ ডেকে আনে বলছেন ব্যবসায়ীরা।
খাতুনগঞ্জের ভোগ্যপণ্যের কয়েকজন ব্যবসায়ীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, বাজারে পণ্য বেচাকেনা ও লেনদেনে যুগ যুগ ধরে কিছু প্রথা চালু আছে। নিজেদের সুবিধার অনেক প্রথা আছে যেগুলো আবার আইনগতভাবে স্বীকৃত নয়। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ‘ডিও স্লিপ’। তেল কিংবা অন্য কোনো পণ্য কেনাবেচায় ডিও বেচাকেনার মাধ্যমে বিভিন্ন আগাম লেনদেন হচ্ছে। দেখা যায়, পণ্য হাতে না পেলেও ওই স্লিপটিই বেচাকেনা হচ্ছে। কোনো কোম্পানি বাজার থেকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ পণ্যের ডিও কিনে নেয়। যে দরে ডিও কেনা হয়, তার বাজারদর যদি বেড়ে যায়, তখন পণ্যটি ডেলিভারি দিতে তারা গড়িমসি করে। আবার দেখা যায়, কোম্পানির পণ্যই আসেনি, কিন্তু ডিও কিনে রেখেছেন অনেক বেশি। এর ফলেও কোম্পানি বাজারে পণ্য ডেলিভারি দিতে পারে না। ফলে এ সব পণ্যের দামও নিয়ন্ত্রণে থাকে না। এক্ষেত্রে তেল ও চিনির ডিও বেচাকেনা বেশি হয়। বলা যায়, ডিও কারসাজির কারণে মাঝে মাঝে পণ্যের দাম আকাশচুম্বি হয়। এই সুযোগে কিছু মৌসুমি ব্যবসায়ী কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেন।
খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে গতকাল খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে মণপ্রতি (৩৭ দশমিক ৩২ কেজি) সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে ৬ হাজার ৪০০ টাকা, পাম তেল বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার ৩৫০ টাকায়। অন্যদিকে প্রতি মণ চিনি বিক্রি ৩ হাজার ৫৭০ টাকা এবং প্রতি মণ ভারতীয় গম বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৬০০ টাকায়।
খাতুনগঞ্জের ভোগ্যপণ্যের একজন আড়তদার নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, চট্টগ্রাম ভিত্তিক একটি শিল্পগ্রুপ প্রচুর পরিমাণ তেল ও চিনির অগ্রিম ডিও বিক্রি করে। যখন ডিও বিক্রি করে তখন দাম কম ছিল। কিন্তু যেইমাত্র বাজারে দাম বেড়ে যায় তখন ওই প্রতিষ্ঠান আগের দামে পণ্য ডেলিভারি দিতে গড়িমসি করে। আবার উল্টোদিকে ডিও বিক্রির তুলনায় যদি বর্তমান মার্কেট দর কমে যায়, তখন তারা কম দামেও পণ্য বিক্রি করে না।
জানতে চাইলে জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম বিভাগের উপপরিচালক মোহাম্মদ ফয়েজ উল্যাহ দৈনিক আজাদীকে বলেন, খাতুনগঞ্জে ডিও স্লিপ নিয়ে আন্ডারগ্রাউন্ড লেবেলে একটা বাণিজ্য হচ্ছে। যেটাতে পণ্য কেনাবেচার কোনো বৈধ কাগজপত্র তারা দেখাতে পারে না। আমরা একাধিকবার খাতুনগঞ্জে অভিযান চালিয়েছি। এই ডিও স্লিপ যেখান থেকে ইস্যু হয়, সেখানে গেলে ওই প্রতিষ্ঠান বলে আমরা এ সব পণ্যের ব্যবসা করি না। আমরা আবারও অভিযান চালাবো।











